২৫ জানুয়ারি ন্যাশনাল ট্যুরিজম ডে। দেশের অর্থনীতিকতে চাঙ্গা করতে ট্যুরিজম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষকে ট্যুরিজমের প্রতি আকৃষ্ট করতেই এই দিবস উদযাপন মোদি সরকারের। ন্যাশনাল ট্যুরিজম ডে উপলক্ষ্যে ঘুরতে যাওয়ার সন্ধান সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালে।
সুমিত বিশ্বাস: ঢেউ খেলানো চা বাগানে টি ট্রেল। সেই সঙ্গে সুগন্ধী ব্র্যান্ডেড লোপচু, তিস্তাভ্যালির মতো চায়ে চুমুক। ধরুন, এমন মনোরম পরিবেশ আপনি সবে উপভোগ করতে শুরু করেছেন, তখনই যদি মেঘ এসে জাপটে ধরে? সেই মেঘ-কুয়াশায় মাখামাখি হয়ে কমলালেবুর বাগানে হাঁটতে বেড়িয়েই পড়ুন। স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিয়ে শেরপা, ভুটিয়া, লেপচাদের সংস্কৃতিতে ডুব দিয়ে তাঁদের হস্তশিল্প পরখ করে দেখুন। হিমালয়ের (Himalaya) কোলে শুধু চোখ জুড়ে এসব দেখা নয়। এমন মন ভুলিয়ে দেওয়া অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হতে হাতছানি দিয়ে ডাকছে তাকদা-তিনচুলে (Tinchuley) কালচারাল টুরিজম ফেস্টিভ্যাল। এই প্রথমবার। চলতি মাসের ১২ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত চলবে এই উৎসব।
পাহাড় ঘেরা দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) এই অফবিট স্থানটির কথা পাহাড়প্রেমী বাঙালির জানা নেই, এমন নয়। কিন্তু এইভাবে ছুঁয়ে দেখা, আবিষ্কার করার সুযোগ বোধহয় সচরাচর আসে না। তাই ওই কালচারাল টুরিজম ফেস্টিভ্যাল (Tourism Festival) লোক টানতে ব্যাপকভাবে প্রচার শুরু করেছে। রংলি-রংলিয়ট পঞ্চায়েত সমিতি স্থানীয় স্পোর্টস অ্যাকাডেমি, হোম স্টে অ্যাসোসিয়েশন ও সর্বোপরি এলাকার মানুষজনকে নিয়ে এমন পর্যটন উৎসব করছেন।
[আরও পড়ুন: ভিলেন মালদ্বীপ, লাক্ষাদ্বীপ ঘোরার দুর্দান্ত প্যাকেজ ঘোষণা এই অনলাইন এজেন্সিগুলির!]
চলতি মাসের ১২ তারিখ কালচারাল টুরিজম ফেস্টিভ্যালের সূচনা হবে। তিনদিন ধরে এই উৎসব চলবে। ১৪ জানুয়ারি শেষ দিন। তিনচুলে ফুটবল মাঠে এই উৎসব হচ্ছে। আর এতে অংশ নিতে নতুন করে সেজে উঠছে এখানকার হোম স্টে (Home stay)গুলি। আসলে রঙলি-রঙলিয়ট পঞ্চায়েত সমিতি চাইছে, হিমালয়ের সৌন্দর্যকে আরও অন্যরকমভাবে আবিষ্কার করে হোমস্টে গুলোর অর্থনৈতিক অবস্থার বদল ঘটিয়ে সামগ্রিকভাবে এই এলাকার পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে।
শৈলশহর দার্জিলিং থেকে দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। একেবারে ক্যানভাসে আঁকা ছবির মত পরিপাটি গ্রাম। এই পাহাড়ি গ্রামে যে কোনও সময় কুয়াশা নেমে আসে বলেই এই জায়গার নাম তাকদা। লেপচা ভাষায় ‘তাকদা’ শব্দের অর্থ মেঘে ঢাকা বা কুয়াশায় ঘেরা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই গ্রাম প্রায় ৪ হাজার ফুট উঁচুতে। যেদিকে চোখ যাবে ঢেউ খেলানো সবুজ উপত্যকায় আট আটটি চায়ের বাগান। শুধু প্রকৃতি নয়। এই তাকদার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। হেরিটেজের ছোঁয়া। ব্রিটিশদের অন্যতম পছন্দের জায়গা ছিল পাহাড়ি উপত্যকায় ঢেউ খেলানো এই গ্রাম তাকদা। তাই এখানে ক্যান্টনমেন্ট তৈরি করেছিলেন তারা। সেই হেরিটেজ বাংলো আজও রয়েছে।
১৯০৫ থেকে ১৯১৫ পর্যন্ত এই বাংলোগুলি তৈরি হয়েছে। ডজনখানেক বাংলো গড়ে ওঠে। বাংলোর জানলা দিয়ে ঢুকে পড়ে মেঘ। চারপাশ শুধুই সবুজ আর সবুজ। নাম না জানা কত পাহাড়ি ফুল। রাতের রূপ তো অনন্য! পূর্নিমার চাঁদে ছোট্ট ছোট্ট আলোয় ঘিরে থাকা কালিংপংকে যেন আরও মায়াবী দেখায়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে নতুন জঙ্গল তার ডালপালা মেলে ধরবে। এখানে রয়েছে ওড়িশার (Orissa)সোনপুর রাজার রাজপ্রাসাদও। চাইলে আপনি সেখানেও থাকতে পারবেন।
রঙলি-রঙলিয়টের বিডিও মোনাজকুমার পাহাড়ি বলেন, “আমাদের এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হলো হিমালয়ের সৌন্দর্যকে শুধু চোখে দেখা নয়। উপলব্ধি করা, অনুভব করা। এই কারণেই আমরা এইরকম একটি পর্যটন উৎসবের আয়োজন করছি। যার মধ্য দিয়ে দার্জিলিঙের এই অফবিট পাহাড়ি উপত্যকায় সামগ্রিকভাবে পর্যটনের বিকাশ ঘটবে। সেই সঙ্গে এলাকার সংস্কৃতি, খাবার, হস্তশিল্প, হেরিটেজ এবং সর্বোপরি চা বাগানের উন্নয়ন হবে।” এই উৎসবের মধ্য দিয়ে এখানকার কৃষি, উদ্যানপালন, প্রায় অবলুপ্ত হয়ে যাওয়া ভাষা, সংস্কৃতি যেমন তুলে ধরা হবে। তেমনই তা সংরক্ষণের জন্য সকলের সঙ্গে মিলেমিশে পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
[আরও পড়ুন: মালদ্বীপ ছাড়ুন, আরও কম খরচে ঘুরে আসুন ছবির মতো সুন্দর এই ৫ সমুদ্র সৈকতে]
এই পাহাড়ি গ্রাম এখন শুধুই পাকা কমলালেবু। ফরেস্ট ভিলেজ বা বনবস্তির চেহারাগুলোই যেন বদলে গিয়েছে। উৎসবের মধ্যে ফরেস্ট ভিলেজ টুর রয়েছে। এই পর্যটন উৎসব কমিটি এখানকার হেরিটেজ নিয়ে একটি পুস্তিকাও বার করবে। যেখানে এলাকার বিদগ্ধ মানুষজনরাই কলম ধরেছেন। থাকছে নানান সরকারি স্টল। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের নানান অনুষ্ঠান। সেই সঙ্গে স্থানীয় জনজাতিদের নানান কার্যক্রম। যার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জনজাতির সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের আদানপ্রদান হবে। তাই সকাল ছ’টা থেকেই হিমালয়ের কোলে প্রকৃতিকে চেনার কাজ শুরু হবে। যা শেষ হবে বেলা ১২ টায়। তারপর আবার দুপুর ২ টো থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত শুধুই সংস্কৃতিময় হয়ে থাকবে এই পাহাড়ি গ্রাম। থাকবে টুর গাইড, শাটল কার, ট্র্যাডিশনাল ওয়েলকামিং। সেইসঙ্গে ছবি থাকছে তোলার ব্যবস্থা। তাই পাহাড়ি বন্ধুতার ডাক তাকদার।