ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: আটটি খাবারকে ‘অ্যালার্জি প্রোডাক্ট’ (Allergy Product) হিসাবে চিহ্নিত করতে চলেছে রাজ্য সরকার। এইসব খাবার রান্না বা কাঁচা অবস্থায় বিক্রি করতে গেলে বিধিসম্মত সতর্কীকরণ হিসাবে ‘অ্যালার্জি’ শব্দটি লিখতে হবে। সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য ও খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের। নিতে হবে ‘ফুড সেফটি’ অনুমতি। এটা যেমন একটা দিক, তেমনই খাবারের দোকানে তিনবারের বেশি ভাজা তেল ব্যবহার করা যাবে না। গত সপ্তাহে নবান্নে মুখ্যসচিব স্বাস্থ্য ও খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সেখানেই এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে খবর। স্বাস্থ্যদপ্তরের অভিমত, জনস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিতে এই প্রথম এমন পদক্ষেপ নিতে চলেছে রাজ্য প্রশাসন।
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, কাঁকড়া, চিংড়িমাছ, কচ্ছপ, শামুক, গরুর দুধ, বাদাম, সয়াবিন ও গম। এই আটটি খাবার কাঁচা অথবা রান্না করে বিক্রি করতে গেলে প্যাকেটের গায়ে স্পষ্টভাবে ‘অ্যালার্জি প্রোডাক্ট’ হিসাবে উল্লেখ করতে হবে। সূত্রের খবর, প্রথমে বড় হোটেল, রেস্তোরাঁগুলিকে এই নিয়মের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য ও খাদ্যসুরক্ষা দপ্তর কর্তারা দিঘা—মন্দারমণির মতো সমুদ্র উপকূলের হোটেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায়-দফায় আলোচনা করেছেন। কেন এইসব খাদ্যকে ‘অ্যালার্জি’ প্রবণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে তাও বলা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: প্রকাশিত হাই মাদ্রাসার ফলাফল, পাশের হারের নিরিখে প্রথমে পূর্ব মেদিনীপুর]
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, কাঁকড়া, চিংড়িমাছ থেকে অনেকেরই অ্যালার্জি হয়। এমনকী, কাঁকড়া খেয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভরতি হতে হয়েছে, এমন নজিরও আছে। অ্যালার্জি ও ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. শৈবাল মৈত্রের কথায়, “গড়ে শতকরা আশিজন বিভিন্ন খাবারের থেকে অ্যালার্জিতে ভোগেন। মূলত, অ্যান্টিবডি অ্যান্টিজেনের প্রতিক্রিয়ায় এমনটা হয়ে থাকে। তাই ক্রেতাকেই সতর্ক থাকতে হবে।” পাশাপাশি তাঁর অভিমত, শুধু যে খাবার থেকে অ্যালার্জি হয়, এমনটা নয়। অন্যান্য বিষয় থেকেও হতে পারে। তবে সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনি।
এটা যেমন একটা দিক, তেমনই গত তিনমাসে কলকাতা সংলগ্ন সাতটি জেলায় ১১৮টি খাবারের দোকান থেকে প্রায় ৬২ হাজার লিটার পোড়া ভোজ্য তেল সংগ্রহ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যদপ্তরের এক কর্তার কথায়, “এইসব দোকান থেকে ৩৪ টাকা কেজি দরে তেল সংগ্রহ করা হচ্ছে।” কারণ হিসাবে তাঁর ব্যাখ্যা, পোড়া তেলে ‘টোটাল পোলার কম্পোনেন্ট’ কমে যায়। বাড়ে কার্বনের পরিমাণ। যা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। মূলত যেসব খাবারের দোকানে দিনে গড়ে ৫০ লিটার ভোজ্য তেল ব্যবহার করা হয় সেগুলিকে এই তালিকায় আনা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: শান্ত, সংযত, পরিণত…! হার্দিক রূপে নতুন ‘ধোনি’র জন্ম দিল আইপিএল ১৫]
স্বাস্থ্য ও খাদ্যসুরক্ষা দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পোড়া তেল বায়ো ডিজেল অথবা সাবান তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বস্তুত, কেন্দ্রীয় খাদ্য সুরক্ষামন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের অধিকাংশ নাগরিকের হৃদরোগ, লিভারের সমস্যার মূল উৎস পোড়া ভোজ্য তেল। তাই পোড়া তেল সংগ্রহ রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর ইতিমধ্যেই বেসরকারি সংস্থাকে নিয়োগ করেছে। বড় খাবারের দোকানে পোড়া তেল সংগ্রহের জন্য পাত্র রাখা হচ্ছে। পোড়া তেলে খাবার তৈরি হচ্ছে কি না তা যাচাই করতে কলকাতা পুরসভা ও স্বাস্থ্যদপ্তরের ফুড ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। তবে এতকিছুর পরেও সচেতনতার উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। চলছে প্রচার।