গৌতম ব্রহ্ম: আতঙ্ক নয়। আনন্দ করুন এবং সতর্ক থাকুন। এটাই এখন দিঘায় বেড়াতে যাওয়ার বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ। আতঙ্কের কারণ একটি সামুদ্রিক সাপ। ইয়েলো বেলিড সি স্নেক। সম্প্রতি দিঘার সমুদ্র সৈকতে এই সাপকে লেন্সবন্দি করেন বাঁকুড়ার এক পর্যটক সোমনাথ সিং। স্থানীয় এক চিকিৎসক ডা. স্বরূপ মণ্ডলের হাত ঘুরে যা সংবাদ প্রতিদিন-এর হাতে আসে। আমরা তৎক্ষণাৎ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলি।
জানতে পারি, বিষের তীব্রতায় এই সাপ বিশ্বের চতুর্থ স্থানে আর ভারতে প্রথম স্থানে রয়েছে। এর বিষ মায়োটক্সিক। অর্থাৎ কামড়ালে আমাদের পেশীগুলো অকেজো হতে শুরু করবে। প্রথমে বিকল হবে কিডনি, তারপর ফুসফুস, হার্ট। মূত্রের রং হবে কফির মতো। এই সর্প বিষের কোনও অ্যান্টি ভেনাম ভারতে তৈরি হয় না। রোগীকে শুধু উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসা করতে হবে। এমনটাই জানালেন চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার। তাঁর কথায়, সামুদ্রিক সাপের কামড়ে মৃত্যুর নজির তেমন নেই বলেই এই সাপের বিষের কোনও অ্যান্টি ভেনাম তৈরি করা হয়নি। তবে যেহেতু ইয়েলো বেলিডের দংশনে কিডনি বিকল হয়, তাই ডায়ালিসিস করা যেতে পারে। শ্বাসকষ্ট শুরু হলে রোগীকে ভেন্টিলেশনে রেখে বাঁচানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।
একই বক্তব্য সামুদ্রিক সাপ বিশেষজ্ঞ অন্বেষণ পাত্রের। তাঁর পর্যবেক্ষণ, এই সাপ ভয়ংকর। এই নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এই সাপ মূলত আরব সাগরে বেশি সংখ্যায় দেখা যায়। বঙ্গোপসাগরে কদাচিৎ দেখা মেলে। অন্বেষণের কথায়, আমাদের দেশে মূলত ২৪ রকমের সামুদ্রিক সাপ দেখা যায়। আরও দু’ ধরনের সাপ দেখা গিয়েছে। তবে এক-দু’বারের বেশি নয়। এই দু’ডজনের মধ্যে ইয়েলো বেলিডের বিষের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। তাই একে নিয়ে আতঙ্কও বেশি।
[আরও পড়ুন: অপরিষ্কার মুখগহ্বরই কি ওরাল ক্যানসারের বাড়বাড়ন্তের কারণ? জবাব দিলেন বিশেষজ্ঞ]
আসলে বাংলার মানুষ কালাচ, চন্দ্রবোড়া, গোখরো, কেউটের সঙ্গে বেশি পরিচিত। এই মহা-চারের বিষের অ্যান্টি ভেনাম রয়েছে। অর্থাৎ দংশনের ১০০ মিনিটের মধ্যে ১০০ মিলি মানে ১০ ভায়াল এভিএস দিতে পারলে রোগী সাধারণত বেঁচে যায়। কিন্তু ইয়েলো বেলিডের ক্ষেত্রে তো এভিএস কাজই করবে না। সেটাই চিন্তার। যদিও চিকিৎসকরা বার বার আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। অতএব, দিঘায় যান। সমুদ্র স্নান করুন। কিন্তু চোখ-কান খোলা রাখুন। সমুদ্রে নামলে নৌকোর বৈঠার মতো ল্যাজ বিশিষ্ট, হাঁসের মতো মুখওয়ালা হলদেটে পেটের সাপ দেখলে সাবধান হয়ে যান। কাছে গিয়ে সেলফি বা ভিডিও নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। নিরাপদ দূরত্ব রাখুন। সতর্ক করলেন অন্বেষণ। মনে করিয়ে দিলেন, সামুদ্রিক সাপ পর্যটকদের কামড়েছে এমন নজির নেই বললেই চলে। তবে মৎস্যজীবীরাই এর শিকার হন। জাল থেকে খালি হাতে সাপ ছাড়ানোর সময় এই কাণ্ড ঘটে।