কৃষ্ণকুমার দাস: মাছের মড়ক রুখতে দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুস রবীন্দ্র সরোবরের জলে তরল অক্সিজেন (Liquid Oxygen) মেশানোর প্রক্রিয়া শুরু করল রাজ্য সরকার। শুধু তাই নয়, শতাব্দীপ্রাচীন এই জাতীয় সরোবরের সৌন্দর্যায়ন ও নানা প্রজাতির গাছের উদ্যান বানিয়ে বাড়তি সবুজায়নের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিচ্ছে রাজ্যের নগরোন্নয়ন দপ্তর। আশঙ্কার তথ্য এই যে প্রায় ১০০ বছর ধরে পাঁক জমে ১৯২০ সালে তৈরি কৃত্রিম এই লেকের গভীরতা ২৫ ফুট থেকে কমে দশ ফুট হয়ে গিয়েছে।
এই মূহূর্তে রবীন্দ্র সরোবরের (Rabindra Sarobar) কেন্দ্রস্থলের গভীরতা দশ ফুট থাকলে তীরের দিকে তিন ফুটেরও কম জল আছে। বস্তুত এই কারণেই উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার বিষয়টি নিয়ে সরোবর বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবিদ ও ঢাকুরিয়া লেকের সঙ্গে যুক্ত প্রাতঃভ্রমণকারীদের পরামর্শ নিতে কর্মশালা করছে কেএমডিএ। পাঁক থেকে প্রতিনিয়ত বুদবুদ আকারে সৃষ্ট মিথেন গ্যাস (Methane) বন্ধের পাশাপাশি জলজ উদ্ভিদের সংখ্যা কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় তা ওই কর্মশালার মুখ্য আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠবে বলে কেএমডিএ সূত্রে দাবি।
[আরও পড়ুন: হিরোশিমা বিস্ফোরণের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি ভয়ংকর টোঙ্গার অগ্ন্যুৎপাত! দেখাল নাসার উপগ্রহ চিত্র]
রবীন্দ্র সরোবরের বাস্তুতন্ত্র স্বাভাবিক করতে সচেষ্ট রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “১০০ বছরের বেশি বয়স এই কৃত্রিম লেকের। পরিবেশগত কারণে জলের অক্সিজেনের মাত্রা কমেছে। তাই সরোবর সংস্কার ও অক্সিজেন বৃদ্ধির পাশাপাশি সৌন্দর্যায়নের জন্য কর্মশালায় বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে।” অবশ্য এর আগে মাছের মড়ক ঠেকাতে অক্সিজেন বৃদ্ধিতে ‘হুইল’ বসানো হলেও তা কিছুদিন পরে বন্ধ হয়। তাই ব্যয়সাধ্য তরল অক্সিজেন মেশানোর কর্মসূচি কতদিন চলবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সরোবরের সঙ্গে যুক্ত পরিবেশবিদরা।
[আরও পড়ুন: বন্ধু জাপানের কাছে ক্যাঙারুর আবদার, ‘উপহার’ পাওয়ার অপেক্ষায় আলিপুর চিড়িয়াখানা]
প্রায় ১৯২ একর জমিতে তৈরি ঢাকুরিয়ায় (Dhakuria) কৃত্রিম জলাশয় দূষণের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত। জাতীয় পরিবেশ আদালত ২০১৮ সালে ছটপুজো বন্ধের পাশাপাশি জলের নিচের পাঁক তুলে ফেলার নির্দেশ দেয়। কিন্তু পুরসভা ও পুলিশ ছটপুজো বন্ধ করলেও পাঁক তোলেনি। উল্টে সরোবরের পাশে বিলাসবহুল ক্লাব থেকে দূষণ বেড়েছে। ২ নম্বর গেট কোর্ট বন্ধ করতে বললেও কেএমডিএ ‘পকেট গেট’ খোলায় বস্তিবাসীরা সরোবরে কাপড় কাচেন। মর্নিং ওয়াকারদের আহ্বায়ক ও পরিবেশবিদ সৌমেন্দ্রমোহন ঘোষ অভিযোগ করেন, “তরল অক্সিজেন মেশালে সাময়িক স্বস্তি হবে, কিন্তু স্থায়ী সমাধান করতে হলে জমা দশ ফুট পুরু পাঁকের অন্তত অর্ধেক তুলতে হবে। কাশ্মীরে ডাল লেকে যেভাবে ‘হাইড্রো রেকিং’ করে পাঁক তোলা হয় সেটাই একমাত্র পথ।”
পরিবেশ আদালতে যাঁর মামলার জেরে ছটপুজো বন্ধ হয়েছে সেই পরিবেশবিদ সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, “লেক বাঁচাতে কোর্টের আদেশ তো মানছেই না, উল্টে মাছের মড়ক ধামাচাপা দিতে ভোরে কর্মী নামিয়ে সরোবর সাফ করছে কেএমডিএ।” যদিও ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়াররা পালটা দাবি করেন, “যেহেতু কৃত্রিম সরোবর, তাই পাঁক তুলে ফেললে জল ধরে রাখা যাবে না। শুকিয়ে যাবে ঢাকুরিয়া লেক।”