স্টাফ রিপোর্টার: যা ছিল ভরসা, সেটাই আপাতত প্রবল বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্বাচন কমিশনের। এবারের লোকসভা ভোটে সব বুথে ওয়েব কাস্টিংয়ের পাশাপাশি ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানোর কথা জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ধুমধাম করে সে কথা প্রচারও ঘাটতি রাখা হয়নি। এই ‘জুটি’-র উপর কমিশনের ভরসাও ছিল বিস্তর। কিন্তু প্রথম দফার ভোটেই সাধের সেই ‘এআই’ প্রযুক্তিই যে এভাবে ল্যাজে-গোবরে করে ছাড়বে, তা ঘুণাক্ষরেও যদি কমিশন কর্তারা জানতেন...
রাজ্যের প্রথম দফার নির্বাচনে ৯৮% বুথে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে ওয়েবকাস্টিং করা হয়েছে। এর মধ্যে বুথে ভোটগ্রহণ কোনও নিয়মভঙ্গ বা গরমিল হচ্ছে, তার নজরদারি হয়েছে ওয়েব কাস্টিংয়ের সাহায্যে। আর সেই ওয়েব কাস্টিংয়ে যাতে বিঘ্ন না ঘটানো হয়, তার পাহারাদার ছিল এআই প্রযুক্তি। কথা ছিল ওয়েব কাস্টিংয়ের সময় কোনও সমস্যা হলে বা কেউ ক্যামেরার মুখ ঘুরিয়ে দিলে বা লেন্স ঢেকে দিলে বা বুথের মধ্যে অতিরিক্ত লোকজন ঢুকে পড়লে তারস্বরে অ্যালার্ম বাজিয়ে তার জানান দেবে এআই প্রযুক্তি। একইভাবে বুথের ভিতর গন্ডগোল বাঁধলে শব্দসীমা নির্দিষ্ট ডেসিবেলের উপরে উঠলেই অ্যালার্ম বেজে উঠবে। কন্ট্রোল রুম থেকে সেই বুথে দ্রুত ‘কুইক রেসপন্স টিম’ বা ‘কিউআরটি’ পাঠিয়েও দেওয়া হবে সেই বুথে।
[আরও পড়ুন: ইভিএম-ভিভিপ্যাট ১০০ শতাংশ মিলিয়ে দেখার দাবি, কমিশনের থেকে ব্যাখ্যা চাইল সুপ্রিম কোর্ট]
ঠিকঠাকই ছিল সব! বাদ সাধল প্রয়োগ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রোগ্রামে বেঁধে দেওয়া প্যারামিটার বা মাপকাঠি এবং সমস্যা না মেটা পর্যন্ত বারবার অ্যালার্ম বেজে যাওয়া বা ‘স্নুজ মুড’ নিয়ে নেওয়া। কমিশন সূত্রে খবর, এই দুই নিয়ে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। যেমন একাধিক বুথের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, একবার কোনও সমস্যায় অ্যালার্ম বেজে উঠলে সেই বুথে যতক্ষণ না কুইক রেসপন্স টিম পৌঁছচ্ছে বা সেই সমস্যার সুরাহা করা হচ্ছে, ততক্ষণ স্বল্প সময়ের ব্যবধানে অ্যালার্ম বেজে চলেছে। আবার কোথাও দেখা যাচ্ছে, বাইরের প্রবল গরম বা রোদের হাত থেকে বাঁচতে একসঙ্গে দশ-পনেরোজন ভোটদাতা বুথের মধ্যে ঢুকে পড়ছেন। লাইনে দাঁড়িয়ে এক এক করে তাঁরা ভোটও দিচ্ছেন কোনও বিশৃঙ্খলা ছাড়াই। কিন্তু এআই-এর বেঁধে দেওয়া মাপকাঠি অনুযায়ী কোনও বুথে দশজনের বেশি লোক ঢুকলেই সতর্কবার্তা দিয়ে অ্যালার্ম বাজার নিয়ম থাকায় ওই বুথে সব ঠিকঠাক চলা সত্ত্বেও অ্যালার্ম বাজছে। আবার, কোনও বুথে বাগবিতণ্ডা বাঁধলে তড়িঘড়ি যাতে তা জানা যায় এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায় সেজন্য বুথের অভ্যন্তরে শব্দের সর্বোচ্চ সীমা ৭০ ডেসিবেলে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই বাগবিতণ্ডা ছাড়াই অন্য কোনও কারণে আওয়াজ সত্তর ডেসিবেলের উপরে উঠলেই অ্যালার্ম বেজে উঠছে।
প্রথম দফার অভিজ্ঞতা থেকে এআই প্রযুক্তিতে কিছু বদল আনা হচ্ছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্যারামিটার পালটানো হচ্ছে। যেমন একবার অ্যালার্ম বেজে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার ওই বুথ থেকে একই সমস্যার কারণে অ্যালার্ম বাজার সময়ের মধ্যে ব্যবধান বাড়ানো হচ্ছে।