রাজা দাস, বালুরঘাট: সীমান্ত লাগোয়া জেলা দক্ষিণ দিনাজপুর (Dakhsin Dinajpur)। নয়ের দশকে তৎকালীন পশ্চিম দিনাজপুর জেলা বিভাজিত হয়ে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর হয়। যদিও তার অনেক আগে থেকেই বালুরঘাট (Balurghat) সদর শহর হিসেবে পরিচিত। এখানেই প্রশাসনিক সমস্ত কাজকর্ম হতো। পরে গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে বালুরঘাটকে আলাদা লোকসভা কেন্দ্র বলে ঘোষণা করা হয়। জনবিন্যাস, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক পরিমণ্ডল সবকিছুর দিক থেকে বালুরঘাট রাজনৈতিক শিবিরগুলির কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। একদা বাম শরিক আরএসপি-র শক্ত ঘাঁটি ছিল বালুরঘাট। এখান থেকে বিধানসভা ভোটে জেতা বাম জনপ্রতিনিধিরা রাজ্য মন্ত্রিসভারও সদস্য হয়েছেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাম দুর্গ পতনের প্রভাব পড়েছে এখানেও। আসুন, চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election 2024) আগে বালুরঘাট কেন্দ্রের কী পরিস্থিতি, তা খুঁটিয়ে দেখে নেওয়া যাক।
জনবিন্যাস
বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের ভোটারদের মধ্যে অধিকাংশই হিন্দু। ৬৫ শতাংশ হিন্দু, ৩৫ শতাংশ মুসলিম। এছাড়া তফসিলি জাতি-উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির বাসিন্দারা কমবেশি রয়েছেন প্রায় প্রতিটি ব্লকেই। তপন ব্লকটি অবশ্য তফসিলি জাতি অধ্যুষিত। বাংলায় সংস্কৃতি চর্চার পীঠস্থান হিসেবে বহুল পরিচিতি রয়েছে বালুরঘাটের। বিশেষত নাট্যচর্চায় অত্যন্ত প্রশংসিত এই এলাকা।
[আরও পডুন: ‘আজ খুঁটিপুজো করলাম, বিসর্জন মে মাসের শেষে’, বিজেপিকে বিদায়ের বার্তা অভিষেক]
বিধানসভা কেন্দ্র
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাত বিধানসভা কেন্দ্র:
- তপন
- বালুরঘাট
- গঙ্গারামপুর
- কুমারগঞ্জ
- কুশমন্ডি
- হরিরামপুর
- ইটাহার (উত্তর দিনাজপুর)
রাজনৈতিক পরিস্থিতি
২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর পর লাল দুর্গ ভেঙে পড়ে সীমান্ত এলাকাতেও। কাস্তে-হাতুড়ি-তারার শরিক কোদাল-বেলচার ধারও কমেছে। তবে লড়াই থেকে সরে আসেনি বামফ্রন্টের অন্যতম শরিক আরএসপি (RSP)। ধীরে ধীরে বালুরঘাটের মাটির দখল নিয়েছে ঘাসফুল শিবির। তবে গেরুয়া উত্থানও কম নয়। জেলার ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে দুয়ের প্রাপ্তি ৩-৩। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদ গিয়েছে তৃণমূলের (TMC) দখলে। ৮ টি পঞ্চায়েত সমিতিতেও ফুটেছে ঘাসফুল। আর ৬৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে মাত্র ৪টিতে পদ্ম ফুটেছে আর বাকি ৬০ আসনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল।
[আরও পড়ুন: ‘বিজেপিতে ফিরছি, লাইনে আরও বড় নেতা’, বিস্ফোরক দাবি ‘গেরুয়া’ অর্জুনের]
২০২৪ লোকসভা ভোটের লড়াই
বালুরঘাটের সাংসদ তথা অধ্যাপক সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) এই মুহূর্তে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি। এবারও তাঁকেই ফের ভোটযুদ্ধের সৈনিক করেছে গেরুয়া শিবির। এদিকে শাসকদল তৃণমূল রাজ্যের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রকে লোকসভার লড়াইয়ে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিরোধী শিবিরের আরেক দল আরএসপিও ঘোষণা করে দিয়েছে নিজেদের প্রার্থীর নাম। বালুরঘাট কেন্দ্র থেকে আরএসপি প্রার্থী শিক্ষক নেতা জয়দেব সিদ্ধান্ত। কংগ্রেস প্রার্থী না দিলে এখানে ত্রিমুখী লড়াই হচ্ছে আসন্ন নির্বাচনে।
কার পাল্লা ভারী?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, সুকান্ত মজুমদার সমানতালে রাজ্য ও কেন্দ্রে সক্রিয়। একদিকে রাজ্য বিজেপির (BJP) সভাপতি হিসেবে সময়োপযোগী একাধিক কর্মসূচি পালন, অন্যদিকে দিল্লির দুয়ারে নানা ইস্যুতে সরব হওয়া। মোটের উপর সুকান্ত মজুমদারকে রাজনীতির ময়দানে দেখা যায় সবসময়েই।
আবার রাজ্যের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রর রাজনৈতিক জীবন দীর্ঘদিনের। তিনি দুবারের বিধায়ক, জনপ্রিয়। তবে লোকসভায় তাঁর প্রথম পরীক্ষা।
আবার আরএসপি প্রার্থী জয়দেব সিদ্ধান্ত শিক্ষক নেতা হিসেবে বিশেষ পরিচিত সংশ্লিষ্ট মহলে। সুতরাং ব্যালটের লড়াই বেশ ভালোই হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর ভোট কাটাকাটির অঙ্কে কার লাভ, কার লোকসান, তার জন্য অবশ্য বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না।