অর্ণব আইচ: পরেরবার গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দেব। বালিগঞ্জের গুলি কাণ্ডে ‘দায় স্বীকার’ করে ব্যবসায়ীদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাঠালো ঝাড়খণ্ডের মাফিয়ারা। ঝাড়খণ্ডের কয়লা অঞ্চলের কুখ্যাত মাফিয়া আমন সাউয়ের ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত মায়াঙ্ক সিং পাঠিয়েছে এই মেসেজ। সোমবার এই মেসেজের স্ক্রিনশট এসে পৌঁছেছে লালবাজারে গোয়েন্দাদের কাছে। এর তদন্ত শুরু করেছেন লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডা দমন শাখার আধিকারিকরা।
গত শনিবার বিকেলে বাইক নিয়ে দুই যুবক দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ এলাকার চক্রবেড়িয়ায় কাছে একটি ব্যবসায়ীর অফিসে আসে। বড় পরিমাণ তোলার টাকা চেয়ে হুমকি দেয় তারা। নিরাপত্তারক্ষী তাদের ধরতে গেলে গুলি চালিয়ে পালায় দু’ জন। সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে রবিবার যখন দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে, তখনই ঝাড়খণ্ডের ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন মহলে আসে ওই হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ। সেটি চেন্নাইয়ের একটি মোবাইল নম্বর থেকে পাঠানো। মেসেজটি যে পাঠিয়েছে, সে নিজেকে ঝাড়খণ্ডের মাফিয়া আমন সাউয়ের সঙ্গী মায়াঙ্ক সিং বলে দাবি করে। মেসেজে হুমকি দিয়ে স্পষ্ট লেখা, শনিবার ল্যান্সডাউন মার্কেটের কাছে কয়লা ব্যবসায়ীর অফিসে যে গুলি চালানো হয়েছে, তা শুধু আওয়াজ শোনানোর জন্য।
[আরও পড়ুন: অভিষেকের কথা মেনে রোগীর কাছেই পৌঁছবেন ডাক্তার, একনজরে ‘ডক্টর অন হুইলসে’র তালিকা]
এই খবর প্রচার হওয়ার ফলে তাদের ‘বস’ আমন সাউ জানতে পেরেছে যে, তার সঙ্গীরা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কোনও কাজ করেছে। এর পরের বার যদি আমন সাউয়ের কথা না শোনা হয়, তবে গুলি করে খুলি উড়িয়ে দেওয়া হবে। ঝাড়খণ্ডের যে কয়লা ব্যবসায়ীদের কলকাতায় অফিস রয়েছে, তাঁদের উদ্দেশে রীতিমতো হুমকি দিয়ে মেসেজে জানানো হয়েছে যে, কলকাতায় বসে ঝাড়খণ্ডের কয়লা খনিতে ব্যবসা করতে গেলে আমনকে টাকা দিতে হবে। নাহলে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। এই মেসেজটি হাতে পাওয়ার পরপরই লালবাজারের গোয়েন্দারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, ঝাড়খণ্ডের জেলে বন্দি রয়েছে সেখানকার মাফিয়া আমন সাউ। রাঁচি থেকে শুরু করে হাজারিবাগ, ধানবাদ এমনকী আসানসোলেও ছড়িয়েছে মাফিয়া আমনের ‘রাজত্ব’। কয়লা ব্যবসায়ী তো বটেই, এছাড়াও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, প্রোমোটার ও অন্যান্য ব্যবসার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের কাছ থেকেও আমন সাউ তোলাবাজি করতে শুরু করে। তার বিরুদ্ধে ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন থানা
এলাকায় তোলাবাজি, খুনের চেষ্টা, অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে। এই অভিযোগেই গত বছর আমন ঝাড়খণ্ড পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। এখন সে জেলে। কিন্তু বিহারের ডাকাত সর্দার সুবোধ সিংয়ের মতোই আমন জেলের ভেতর থেকে তার গ্যাং চালাতে থাকে। এই কাজে আমনকে সাহায্য করে তার সঙ্গী মায়াঙ্ক সিং ও অন্যান্যরা।
গত অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে ঝাড়খণ্ডের অরগোড়া থানা এলাকার একজন ব্যবসায়ী নগেন্দ্র কুমারের হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে দু’কোটি টাকা চেয়ে তাঁকে গুলি করে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। এমনকী, তাঁর ছেলেকে মেরে ফেলা হবে বলে জানানো হয়। আতঙ্কিত ব্যবসায়ী পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়াও জেল থেকে আরও অনেককে আমন এই পদ্ধতিতে হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ। সাধারণভাবে জেলে বসে সঙ্গী মায়াঙ্ককে দিয়েই এই মেসেজগুলি পাঠায় আমন।
[আরও পড়ুন: করোনায় হাসপাতালে ভরতির হার ৫-১০%, দ্রুত বদলাবে পরিস্থিতি, জানাল স্বাস্থ্যমন্ত্রক]
লালবাজারের আধিকারিকদের ধারণা, ঝাড়খণ্ড থেকে বাইকে করে কলকাতায় এসে গুলি চালানো হয়েছে। আবার স্থানীয় কোনও দুষ্কৃতীর সাহায্য নেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। যে বাইকটি করে তারা পালিয়েছে, সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে তার নম্বর জানার চেষ্টা হচ্ছে। সেই সূত্র ধরেই শুরু হয়েছে তদন্ত। যেহেতু তদন্তে আমন সাউয়ের নাম উঠে এসেছে, তাই ঝাড়খণ্ড পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। ঝাড়খণ্ডে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কলকাতার ব্যবসায়ীদেরও গুলি করে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে লালবাজার। আদালতের মাধ্যমে জেল থেকে মাফিয়া আমন সাউকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করার ব্যাপারেও আলোচনা শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে তার সঙ্গী মায়াঙ্ক ও যে দুই যুবক গুলি চালিয়েছে, তাদের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।