সন্দীপ্তা ভঞ্জ: কালের নিয়মে টেলিপর্দায় মহালয়ার অনুষ্ঠানে নতুনত্বের ছোঁয়া আগেই এসেছিল। এবার আরও একধাপ এগিয়ে ভাবল হইচই। সংশ্লিষ্ট ওটিটি প্ল্যাটফর্মে প্রথমবার সিরিজের আকারে এল মহালয়ার অনুষ্ঠান। ফলত, ভোরবেলা চোখ খুলেই তড়িঘড়ি টিভির পর্দা দেখার তাড়া নেই। নিজের সময়মতো দিব্যি দেখে নিতে পারেন 'মহিষাসুরমর্দ্দিনী'।
একেবারে নতুন মোড়কে পুরাণের গল্পের অনুযায়ী মহিষাসুর বধের গল্প তুলে ধরেছেন পরিচালক সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়। আর প্রথমবার দুর্গারূপেই বাজিমাত করলেন রাজনন্দিনী পাল (Rajnandini Paul)। মোট ৭ পর্বের সিরিজ 'মহিষাসুরমর্দ্দিনী'। প্রথম পর্বেই আদিশক্তি ভুবনেশ্বরী এবং ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের সৃষ্টিকর্তার গাথা তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে উঠে এল সিংহবাহিনীর গল্প। আর এই পর্বের শেষেই দেখা গেল দেবী দুর্গার আবির্ভাব। উমারূপে অসুর নিধন করে ত্রিভুবনকে রক্ষা করেন তিনি। তৃতীয় পর্বে দুর্গারূপে রাজনন্দিনী নজর কাড়লেন। এখানে বিন্ধ্যপর্বতে মহাদেবীর সঙ্গে ঘোড়াসুরের যুদ্ধ আর নিধনের কাহিনী দেখালেন পরিচালক সায়ন্তন।
'সতী'র কাহিনী শৈশব থেকে অল্প-বিস্তর সকলের জানা। টিভির পর্দায় মহালয়াতেও একাধিকবার দেখানো হয়েছে। কীভাবে সতীপিঠের উৎস? সেই কাহিনী যথাযথই পরিবেশন করা হয়েছে সিরিজের চতুর্থ পর্বে। যেখানে নজর কাড়ল দেবীর দশমহাবিদ্যা অবতারের প্রয়োগ। পঞ্চম পর্বে ফুটে উঠল দেবসেনাপতি কার্তিকের আবির্ভাবের গল্প। এই পর্বেই শিবের বরে মহিষাসুরের জন্মের কাহিনীও দেখানো হয়েছে। ষষ্ঠ পর্বে সেই চিরাচরিত মহিষাসুরবধের কাহিনী। তবে সবথেকে নজর কাড়ল সপ্তম পর্বে অকালবোধনের কাহিনী। শরৎকালে দেবীদুর্গার আরাধনা করে রাবণবধের জন্য বিশেষ বরপ্রাপ্তি লাভ করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। সেই গল্পই খুব সুন্দরভাবে সিরিজে দেখানো হয়েছে। যেখানে অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণে রামের রাবণবধ। এবং নবমীর অপরাহ্নে যেহেতু শেষমেষ প্রাণত্যাগ করেছিলেন রাবণ, সেই প্রেক্ষিতে রামনবমী পালিত হয়ে সেদিন। অন্যদিকে দশমীর সঙ্গে 'বিজয়া' শব্দটি চিরাচরিতভাবে জুড়ে রয়েছে। সেটা কেন? কারণ দেবীদুর্গার বর অনুযায়ী এদিন যেমন রামের বিজয়উৎসব পালন হয়, তেমনই আরেকদিকে দশেরা পালন হয়। আর ঠিক সেই কারণেই দশমীর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে শুভ বিজয়া দশমী।
'মহিষাসুরমর্দ্দিনী'র চিত্রনাট্য বেশ দক্ষতার সঙ্গেই সাজানো হয়েছে। যার ফলে একঘেয়ে লাগে না। মহালয়ার অনুষ্ঠান দেখতে বরাবরই কৌতূহল থাকে দর্শকদের। তবে সিরিজের মোড়কে দিব্যি সারপ্রাইজ এল ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই-এর তরফে। একাধিক অসুরের উপস্থাপন এবং তাদের সাজপোশাকে আধুনিকতার মিশেল দেখতে মন্দ লাগে না! ভিএফএক্স বেশ উন্নত মানের। যেখানে যেরকম বডি ল্যাঙ্গুয়েজ প্রয়োজন, রাজনন্দিনী ঠিক সেভাবেই গোটা সিরিজজুড়ে অভিনয় করেছেন। কখনও স্নিগ্ধ আবার কখনও ক্রুদ্ধ। শিবের ভূমিকায় রোহন ভট্টাচার্যকেও বেশ মানিয়ে গিয়েছে। আদিশক্তি মহামায়াকে ঘিরে যে কাহিনী আবর্তিত হয়েছে, তাতে সবমিলিয়ে 'মহিষাসুরমর্দ্দিনী' দেখতে একঘেয়ে বা মন্দ লাগেনি। বেশ ভালো।