সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সম্পর্কের বরফ গলাতে উদ্যোগী ভারত-মালদ্বীপ দুদেশই। ভারতবিরোধী অবস্থানের বদলে 'মোদিপ্রীতি' বাড়ছে দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর। কিন্তু তাতে লাভ খুব একটা হচ্ছে না। একসময় ভারতীয়দের 'হলিডে ডেস্টিনেশন'-এর তালিকায় এক নম্বরে ছিল মালদ্বীপ। কিন্তু এখন সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে লাক্ষাদ্বীপ। এখনও হু হু করে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা কমছে মালদ্বীপে। ফলে টান পড়ছে ভাঁড়ারে। এদিকে, ভ্রমণপিপাসুদের ভিড়ে লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে লাক্ষাদ্বীপের।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাক্ষাদ্বীপ সফরের পর থেকে তাল কাটে দিল্লি-মালের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের। সংঘাত তুঙ্গে ওঠে। মোদিকে নিয়ে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর দলের একাধিক নেতা। এমনকী ভারতের সমুদ্র সৈকতগুলো নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত বলেও কটাক্ষ করেন সেদেশের কয়েকজন নেতা। তার পরই নিন্দার ঝড় ওঠে। গোটা ভারত জুড়ে শুরু হয় ‘বয়কট মালদ্বীপ’। বহু তারকা থেকে সাধারণ মানুষ সোশাল মিডিয়ায় মালদ্বীপের বদলে লাক্ষাদ্বীপে যাওয়ার আহ্বান জানান। সেথেকেই লাক্ষাদ্বীপে বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। এপ্রিল থেকে জুনের মাঝামাঝি সময় হল ভারতে পর্যটনের জন্য আদর্শ সময়। রিপোর্ট বলছে, ২০২৩ সালে এসময় লাক্ষাদ্বীপের আগাত্তি বিমানবন্দরে যাত্রী সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৭৪ জন। কিন্তু এবছর তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ২২ হাজার ৯৯০।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা মোদি-বাইডেনের, দিল্লির বিবৃতি উড়িয়ে আমেরিকা বলছে, কথাই হয়নি!]
অন্যদিকে, মালদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রকের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী গত বছর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সেদেশে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৫৪ হাজার ২০৭ জন। কিন্তু এবছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৬০৪ জন। অর্থাৎ পতন ঘটেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। মালদ্বীপে ঘুরতে যাওয়া একটা বড় অংশ হল ভারতীয়রা। ফলে ভারতীয়দের সংখ্যা কমে যাওয়ায় জোর ধাক্কা খাচ্ছে দ্বীপরাষ্ট্রটির পর্যটনশিল্প। টান পড়ছে অর্থনীতিতে। মাস কয়েক আগে এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, গত বছরের ডিসেম্বর মাসেও মালদ্বীপে পর্যটকদের নিরিখে ভারতের স্থান ছিল শীর্ষে। কিন্তু এবছর সেই ক্রম নেমে গিয়েছে পাঁচে।
বলে রাখা ভালো, ৩৬টি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে তৈরি লাক্ষাদ্বীপ। কিন্তু সবকটি দ্বীপে যাওয়ার অনুমতি নেই। বেড়ানোর জায়গা হিসেবে পর্যটকদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় মিনিকয়, কাভারত্তি, আগাত্তি, বনগরম, কদমতের মতো দ্বীপগুলো। সরকারি আইন অনুযায়ী, এই দ্বীপগুলোতে বেড়াতে গেলে বা থাকতে গেলে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি লাক্ষাদ্বীপকেও ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র। এবছরের অন্তর্বর্তী বাজেটে লাক্ষাদ্বীপে পর্যটন শিল্পের উপর জোর দেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।
উল্লেখ্য, ক্ষমতায় এসেই দেশ থেকে ভারতীয় সেনা সরানোর ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছিলেন মুইজ্জু। তার পর থেকে ভারতের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় মালদ্বীপ। তার মাঝে আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করে তাঁর সরকারের তিন মন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য। সেই ‘চিনপন্থী’ প্রেসিডেন্টই উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে। এমনকী তিনি বৈঠকও করেছেন নমোর সঙ্গে। যা খুবই ফলপ্রসু হয়েছে বলেই জানান মুইজ্জু। পাশাপাশি ভারতের আতিথেয়তায় রীতিমত আপ্লুত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও যে ভারতীয় পর্যটকদের মনে বরফ গলেনি তা এই রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট।