সুকুমার সরকার, ঢাকা: অনন্ত যৌবনের অধিকারী হতে চেয়ে খুন। আর যৌনশক্তি হারানোর ক্ষোভে নিজের বাবাকে হত্যা। প্রথম কাণ্ডটি বাংলাদেশের (Bangladesh) যশোরের। দ্বিতীয়টি উত্তর জনপদ জেলা লালমনিহাটে। তবে দুই হত্যাকারীই শেষমেশ ধরা পড়ল পুলিশের জালে। পুলিশের দাবি, দু’জনেই খুনের কথা পুলিশের কাছে কবুল করেছে। বৃহস্পতিবার যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে এই তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম।
গত ৩০ মে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রাম থেকে নকিম উদ্দিন নামে একজনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ (Organs) বিচ্ছিন্ন ছিল। এই ঘটনায় নিহতের ছেলে মাজহারুল বাঘারপাড়া থানায় মামলা দায়ের করে। পুলিশ তদন্তে নেমে লিটন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যৌবনশক্তি ফিরে পাওয়ার আশায় কবিরাজের নির্দেশে নকিমকে হত্যা করেছে পুলিশের কাছে স্বীকার করে লিটন। সে আরও জানায়, বৈবাহিক জীবনে (Married life) অসুখী, তাই আট বছর ধরে কবিরাজ আবদুল বারেকের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছে। কবিরাজের পরামর্শ, সে যদি কোনও পুরুষের বিশেষ অঙ্গ ও চোখের মণি সংগ্রহ করতে পারে, তাহলে অনন্ত যৌবনের অধিকারী হবে।
[আরও পড়ুন: টানা সাড়ে ৫ ঘণ্টা জেরার পর CBI দপ্তর থেকে বেরলেন অনুব্রত মণ্ডল]
এই পরামর্শমতো কাজ করতে গিয়ে কখনও রিকশাচালক, কখনও কৃষি শ্রমিক, কখনও আবার দিনমজুর হয়ে কাজ করে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে লিটন। কিন্তু তাদের হত্যা করে শরীরের ওই সব অঙ্গ সংগ্রহ করতে পারেনি। সর্বশেষ নকিম উদ্দিনকে শ্বাসরোধে হত্যার পর অঙ্গগুলি সংগ্রহ করেন। গ্রেপ্তার কবিরাজ আবদুল বারেক বলেন, ”আমি ১৭ বছর ধরে কবিরাজি করছি। লিটন আট বছর ধরে চিকিৎসা নিচ্ছে। সে আমাকে জানায়, সাংসারিক জীবনে সে প্রচণ্ড অসুখী। স্ত্রীকে সুখী করতে পারে না। আমি তাকে ওই তিনটি অঙ্গ অর্জন করতে বলি। আমি তাকে জীবিত মানুষ হত্যা করে অঙ্গ আনতে বলিনি। বলেছি যেখানে পোস্টমর্টেম হয়, সেখান থেকেই ম্যানেজ করা সম্ভব।”
[আরও পড়ুন: এবার কলকাতা মেট্রোর স্টেশনের অন্দরেই করা যাবে বিজ্ঞাপনী অনুষ্ঠান! চলবে সিনেমার প্রমোশনও]
অপরদিকে, লালমনিহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় যৌবন হারানোর ক্ষোভে কবিরাজ বাবাকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার ছেলে। কবিরাজ বাবার চিকিৎসার কারণে যৌবন হারিয়েছে এমন ক্ষোভ থেকে নিজের বাবাকে খুন করে জাহাঙ্গির আলম। চার বছরের দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ এ তথ্য উদঘাটন করেছে। খুনিকে গ্রেপ্তার করে স্বীকারোক্তি আদায় করেছে পুলিশের জেলা অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই কালিগঞ্জ উপজেলার নিথক অচিনতলা এলাকায় গভীর রাতে নিজের শোয়ার ঘরে খুন হন বছর চল্লিশের গোলাম হোসেন। তাঁকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলা, কাঁধে ও ঘাড়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তার বড় ছেলের দায়ের করা মামলায় তদন্ত কাজ শুরু করলেও প্রথম দিকে কোনো রহস্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই মামলায় জাহাঙ্গীর আলমকে গত ১০ এপ্রিল আটক করে আদালতে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালতের দেওয়া রিমান্ডে পিতাকে হত্যার কথা স্বীকার করে জাহাঙ্গীর।
ধৃত যুবক জানায়, তার বাবা ২০০৯ সালের দিকে কবিরাজি চিকিৎসায় তার যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে দেন। পরের বছর বিয়ে করলে বাসর ঘরে ঢুকে বুঝতে পারে, তার যৌন ক্ষমতা নেই। সেই থেকে স্ত্রীর সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে মনোমালিন্য শুরু হয়। দীর্ঘ আট বছরের সংসার জীবনে অক্ষমতা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কলহ ও বিরোধ লেগে থাকলে বাবার প্রতি ক্রমশ ক্ষোভ তৈরি হতে থাকে। সেই ক্ষোভ থেকেই বাবাকে হত্যা করে।