সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: বিদ্যুৎমন্ত্রীর আশ্বাসই সার। পুজোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির মাঝেই ভয়ানক বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মুখে পড়ল ইস্পাতনগরী দুর্গাপুর (Durgapur)। সকাল থেকে প্রায় ৯ ঘন্টা ধরে বিদ্যুৎহীন গোটা ইস্পাতনগরী। বুধবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ আচমকাই ট্রিপ করে যায় সেইল (SAIL) ও এনটিপিসির (NTPC) যৌথ সংস্থা ‘এনএসপিসিএল’এর ১ নম্বর ইউনিটটি। গোটা ইস্পাতনগরীতে বিদ্যুৎ চলে যায়। যেসব মণ্ডপে শেষ মুহূর্তে আলোকসজ্জার কাজ চলছিল, সেই উদ্যোক্তাদের মাথায় হাত পড়েছে। স্তব্ধ কলকারখানার উৎপাদনও।
এনএসপিসিএল সূত্রে জানা গেছে, এদিন সকালে বয়লারে ‘অয়েল গান সাপোর্ট’ দিতে গেলে তা দেওয়া যায়নি। ‘মিস ফায়ার’ হয়ে যান গানটি। এর ফলে বাস্পের ভেতর জল ঢুকে গেলে তা টারবাইনকে ক্ষতি করতে পারত। তাই সঙ্গে সঙ্গেই ‘ম্যানুয়াল’ ট্রিপ করানো হয় ১ নম্বর ইউনিটকে। ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (DSP) উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে ডিএসপি কর্তৃপক্ষ ইস্পাতনগরীর বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আচমকা বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় পুজোর প্রস্তুতিও ধাক্কা খায়। বহু মণ্ডপ উদ্বোধন হয়ে গেলেও বেশ কিছু মণ্ডপে পঞ্চমী ও ষষ্ঠীর দিন উদ্বোধনের জন্যে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছিল।
[আরও পড়ুন: মিনাখাঁয় দুর্ঘটনার কবলে অর্জুন সিংয়ের কনভয়, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন সাংসদ]
কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, এনএসপিসিএলের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে মোট ২ ইউনিট আছে। দৈনিক গড়ে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা দুটি ইউনিটের। ডিএসপির জন্য লাগে ৮০ মেগাওয়াট, অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের জন্যে ১৫ মেগাওয়াট। ইস্পাতনগরীর জন্যে দৈনিক গড়ে ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। বিপর্যয়ের ফলে ২ নম্বর ইউনিটের বিদ্যুৎ শুধুমাত্র কারখানার উৎপাদনের জন্যে ব্যবহার শুরু হয়। বেশ কিছু বিভাগের উৎপাদন কমানোও হয়। সন্ধ্যার পর ১ নম্বর ইউনিটটি চালু করা হতে পারে বলে খবর।
[আরও পড়ুন: উৎসবের মরশুমে রাজ্যে ধেয়ে আসছে দুর্যোগ, বড়সড় বিপদের আশঙ্কা, জেনে নিন কী বলছে হাওয়া অফিস]
এত বড় বিদ্যুৎ বিপর্যয় প্রসঙ্গে ডিএসপির জনসংযোগ আধিকারিক বেদবন্ধু রায় জানান, “ সাময়িক বিপর্যয়ের কারণেই ইস্পাতনগরীর বিদ্যুত পরিষেবা বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে স্বাভাবিক যোগান শুরু হলে পরিষেবাও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।” বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে রাজ্যের কোথাও উৎসবের মরশুমে কোনও বিদ্যুৎ বিভ্রাট হবে না। তার জন্য প্রস্তুত বিদ্যুৎ দপ্তর। কিন্তু পঞ্চমীর দিন দুর্গাপুরের এই ঘটনাই বুঝিয়ে দিল, প্রস্তুতি ততটা নেই।