সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তখন মুলায়ম সিং যাদব। আজ থেকে পাক্কা ত্রিশ বছর আগের কথা। বাবরি ধ্বংসের পর সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার আবহে বন্ধ হয়েছিল জ্ঞানবাপী (Gyanvapi) মসজিদের বিতর্কিত অংশের দরজা। যা বারাণসী আদালতের নির্দেশে খুলে গিয়েছে বুধবার রাতেই। মসজিদের বেসমেন্টে ‘ব্যাস কা তয়খানা’য় গভীর রাতেই দেবতার উপাসনা শুরু করে দিল হিন্দু পক্ষ।
গতকালই ‘ব্যাস কা তয়খানা’ চত্বরে ভক্তদের উপাসনার অনুমতি দিয়েছিল আদালত। পাশাপাশি সাত দিনের মধ্যে এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেন বিচারক। যদিও কয়েক ঘণ্টা পরেই আদালতের নির্দেশকে হাতিয়ার করে মসজিদে ভিড় জমান হিন্দু পক্ষ। মধ্য রাতেই শুরু হয় পুজোপাঠ, আরতি। পরিস্থিতির উত্তাপ অনুভব করে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। গোটা রাজ্যেই সতর্কতা জারি হয়েছে। মন্দিরে পুজোর বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন হিন্দুপক্ষের আইনজীবী বিষ্ণু শংকর জৈন। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “আদালতের নির্দেশ পালন করেছেন এসজি। প্রতিমা স্থাপনের পর কেভিএম ট্রাস্টের একজন পূজারি ‘শয়ন আরতি’ করেন। এছাড়াও সকল দেবতার নিত্য আরতি- সকালের মঙ্গলা আরতি, ভোগ আরতি, সন্ধ্যা আরতি, সূর্যাস্তের সন্ধ্যা আরতি, শয়ন আরতি ইত্যাদি সম্পন্ন হচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: আয়কর, স্বাস্থ্যবিমায় ছাড়! বাজেটে আজ ভোটবাদ্যি]
জ্ঞানবাপী মসজিদটি রয়েছে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের ঠিক বিপরীতে। ওই মন্দিরের সামনে তয়খানার দিকের রাস্তায় রয়েছে নন্দীর একটি মূর্তি। যেটিকে বৃহস্পতিবার রাত বারোটার সময় নতুন করে প্রকাশ্যে আনা হয়। জ্ঞানবাপীতে এএসআইয়ের সমীক্ষায় যে মূর্তিগুলি উদ্ধার করেছে এএসআই, সেগুলিকে স্থাপন করা হয় রাতেই। এর পরেই দেবতার প্রার্থনা শুরু হয়। প্রসাদ নিবেদন করেন পূজারি। সূত্রের খবর, আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে সাধারণ ভক্তদের জন্যও খুলে দেওয়া হতে পারে মসজিদের ভূগর্ভস্থ ওই কক্ষ।
আগেই জানা গিয়েছিল, এএসআইয়ের রিপোর্টে বলা হয়েছে মসজিদের ওজুখানা চত্বরে অসম্পূর্ণ শিবলিঙ্গের অস্তিত্বও পাওয়া গিয়েছে। সেই সঙ্গেই হনুমান, বিষ্ণু, নান্দীর মূর্তিও থাকার কথা জানাচ্ছে রিপোর্ট। রয়েছে মধ্যযুগীয় দেবদেবীর মূর্তি ও ভাস্কর্যও। অর্ধেক হনুমান ও অর্ধেক সাপের দৈব ভাস্কর্যও সেখানে মিলেছে। যা থেকে মনে করা হচ্ছে, ওই চত্বরে বিভিন্ন দেবদেবীর সন্ধান পাওয়া সেখানে গড়ে ওঠা সংস্কৃতির একটি মিশ্রণের দিকেই ইঙ্গিত করছে। এই অবস্থায় হিন্দুপক্ষকে পুজোর অনুমতি দেওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: হেমন্ত প্রথম নন, দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন ঝাড়খণ্ডের আরও দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী]
প্রসঙ্গত, ২০২১-এর আগস্টেও পাঁচ হিন্দু মহিলা জ্ঞানবাপীর ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’ (ওজুখানা ও তহখানা নামে পরিচিত) এবং মসজিদের অন্দরের পশ্চিমের দেওয়ালে দেবদেবীর মূর্তির অস্তিত্বের দাবি করে তা পূজার্চনার অনুমতি চেয়েছিলেন বারাণসী আদালতে। সেই মামলায় বারাণসী দায়রা আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর নিযুক্ত কমিটির নির্দেশে জ্ঞানবাপী মসজিদের ভিতরে শুরু হয়েছিল ভিডিও সার্ভে। তার পরে সোমবার আদালতে জমা পড়ে এএসআইয়ের রিপোর্ট।