shono
Advertisement

মোদিতেই পূর্ণ আস্থা ট্রাম্পের, হিউস্টনের মঞ্চে একে অপরকে ‘প্রিয় বন্ধু’বলে সম্বোধন

গণসংবর্ধনা সভাকে সামনে রেখে আসলে ট্রাম্পের হয়ে ভোটপ্রচার মোদির, উঠছে সমালোচনা। The post মোদিতেই পূর্ণ আস্থা ট্রাম্পের, হিউস্টনের মঞ্চে একে অপরকে ‘প্রিয় বন্ধু’ বলে সম্বোধন appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:59 AM Sep 23, 2019Updated: 09:07 AM Sep 23, 2019

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এক বছর বাদেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ফের ক্ষমতায় ফেরাই লক্ষ্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের। দরকার বিপুল জনসমর্থন। তাই টার্গেট আমেরিকায় বসবাসকারী বড় সংখ্যক ভারতীয়দের সমর্থন। তাঁদের মন পেতে নিজের কাজের ঢালাও বিজ্ঞাপন করলেন ‘স্বভাব-ব্যবসায়ী’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। একইসঙ্গে স্পষ্ট জানালেন, তাঁর আস্থা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপরেই। ট্রাম্পকে পালটা ‘ভারতের প্রকৃত বন্ধু’ বলে উল্লেখ করলেন  মোদিও। এটাই ‘হাউডি মোদি’র সংক্ষিপ্ততম নির্যাস।

Advertisement

হিউস্টনের ‘হাউডি মোদি’ নামের অনুষ্ঠানটি ছিল মোদির গণসংবর্ধনা। কিন্তু দুই রাষ্ট্রনেতার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তা হয়ে গেল ট্রাম্পের ভোট প্রচারের সভা। ‘হাউডি মোদি’ অর্থাৎ মোদি, তুমি কেমন আছো? এই শীর্ষক অনুষ্ঠানটি বদলে হয়ে গেল, হোয়াট হ্যাভ ইউ ডান ট্রাম্প? মানে, ট্রাম্প তুমি কী করেছো? তাই কৌশলী ট্রাম্প তুলে ধরলেন, তিনিই ভারতীয়দের স্বার্থরক্ষাকারী সেরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং তিনিই প্রবাসী ভারতীয়দের সবচেয়ে ভাল অভিভাবক। দৃশ্যত হাততালি দিয়ে তাতে সায় দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদিও।

[আরও পড়ুন: ভারতে আক্রমণ চালাতে মরিয়া জইশ, ফের বালাকোটে শুরু জঙ্গি প্রশিক্ষণ]

কূটনীতির সেরা নীতি হল, পারস্পরিক দেওয়ানেওয়া এবং একে অপরের স্বার্থরক্ষা। সেটা মেনেই ভারতের স্বার্থরক্ষাকারী ট্রাম্পকেই জেতানোর জন্য প্রবাসী ভারতীয়দের কাছে আবেদনও জানালেন প্রধানমন্ত্রী। স্বভাবতই ভীষণ খুশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। খুল্লমখুল্লা মোদি জানিয়ে দিলেন, ‘আমেরিকা মে অব কি বার ট্রাম্প সরকার’। তিনি চান, ট্রাম্প ফের জিতুন। প্রথমে মোদি এদিন মিনিট দশেক ভাষণ দেন। তাতেই স্লোগান, হাততালি, উচ্ছ্বাসে তেতে ওঠেন স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রায় ৫০ হাজার প্রবাসী ভারতীয়। এরপর ট্রাম্প ধন্যবাদজ্ঞাপক ভাষণ দিতে উঠে প্রায় ২৫ মিনিট টানা বক্তৃতায় তুলে ধরেন কেন তিনি ভারতের সত্যিকারের বন্ধু, কেন তিনি ভারতকে ভালবাসেন। ট্রাম্পের ভাষণকে স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিয়ে স্বাগত জানান উপস্থিত ৫০ হাজার দর্শক। ট্রাম্পের পর মোদি ভাষণ দেন প্রায় ঘণ্টাখানেক। দেশের ঘড়িতে তখন রাত পৌনে এগারেটা পেরিয়েছে।
মোদি প্রথমেই বলেন, “আমাদের দেশ ভারতে এখন রবিবার অনেক রাত হলেও কোটি কোটি মানুষ টিভির সামনে এই অনুষ্ঠান দেখছেন। এখন আমাদের মধ্যে বিশেষ এক অতিথি রয়েছেন। তাঁকে ছাড়া আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কোনও কথাই হয় না। যখনই দেখা হয়েছে, আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন উনি। উনি হলেন ভারতের সবচেয়ে শুভাকাঙ্ক্ষী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উনি সর্বকালের সেরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট। উনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে আন্তরিকভাবে লড়াই করছেন। উনি আমার প্রিয় বন্ধু, ভারতের প্রকৃত বন্ধু।” মোদি আরও বলেন, “আমি একা কেউ নই, কিচ্ছু নই। ভারতের আসল শক্তি ১৩০ কোটি ভারতবাসী। আমি সেই ১৩০ কোটি ভারতবাসীর কর্মচারী মাত্র।” জবাবে মোদির মনের কথা বললেন ট্রাম্প। ইসলামিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, কোমর বেঁধে লড়বে আমেরিকা ও ভারত। মাটি থেকে মহাসাগর থেকে মহাকাশ – সর্বত্র ভারতের সঙ্গে নিরাপত্তা ইস্যুতে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবে আমেরিকা।


সীমান্তে নিরাপত্তা নিয়ে, অনুপ্রবেশ নিয়ে ভারতের মতোই চিন্তিত আমেরিকাও। সীমান্ত সন্ত্রাস ভারতের কঠিন সমস্যা বন্ধুর তাই ভাগ করে নিয়ে প্রযুক্তি দিয়ে ভারতকে সাহায্য করে যাবে আমেরিকা। মহাকাশে আধিপত্য বিস্তারে একজোট হয়ে কাজ করবে দুই দেশ। বাণিজ্য, অর্থনীতিতেও ভারতের স্বার্থরক্ষা করবে আমেরিকা। এমনই আশ্বাস মিলল ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠান থেকে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য অনুষ্ঠান ভোটপ্রচারের সভায় বদলে যায়। ট্রাম্প খোলাখুলি জানিয়ে দেন, তিনি আসন্ন ভোটে প্রবাসী ভারতীয়দের সমর্থন আশা করছেন। ট্রাম্প বলেন, “আমাদের দেশে ৪০ লক্ষ ভারতীয় রয়েছে, তাঁদের আলাদা করে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাই। স্টেডিয়ামে উপস্থিত ৫০ হাজার ইন্দো-আমেরিকানকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নতুন আমেরিকা গঠনে এই পরিশ্রমী ভারতীয়দেরও বিশাল অবদান আছে। তাঁরা আমেরিকার উন্নতির জন্য উদয়াস্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। তাঁদেরকে কুর্নিশ জানাই। আমাদের প্রশাসন প্রতিদিন আপনাদের (অভিবাসী ভারতীয়দের) নিরাপত্তা দিতে ও আপনাদের সুবিধার জন্য কাজ করছে। মোদির জন্য যেমন ভারতে ৩০ কোটি মানুষ দারিদ্র থেকে উন্নীত হয়েছেন, তেমনি আমার সরকারের চেষ্টাতেই আমেরিকায় বেকার সমস্যা কমেছে। শুধু টেক্সাসেই ৭৫ হাজার চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে ভারতের সঙ্গে শীঘ্রই বাণিজ্য চুক্তি করবে আমেরিকা।”
ট্রাম্পের দাবি, টেক্সাসেই রয়েছে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক গ্যাসের সম্ভার। এখান থেকেই ভারতে গ্যাস রপ্তানি করা হবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন নতুন আবিষ্কার করে মার্কিনদের সাহায্য করছেন ভারতীয় চিকিৎসকরা। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথায়, “মোদি আর আমি দু’জন মিলে কঠিন পরিশ্রম করছি একসঙ্গে কাজ করার জন্য।” ভারতীয় অভিবাসীদের প্রতি ট্রাম্পের এই স্বীকৃতির জন্য তাঁকে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানান উপস্থিত দর্শকরা।

[আরও পড়ুন: হিউস্টন বিমানবন্দরে নমোর কীর্তি মন জয় করল মার্কিন মুলুকের]

কূটনীতিকদের একাংশের মতে, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ও অভিবাসী ভারতীয়দের ভূমিকা হবে বিরাট। তাই ‘হাউডি মোদি’র আড়ালে তাঁদেরই ভজনা করলেন ট্রাম্প। অন্যদিকে, ভারতের সামগ্রিক স্বার্থেই (চিন-পাকিস্তান যুগলবন্দিকে রুখতে) মোদিও চান ট্রাম্প ফের জিতে ক্ষমতায় আসুন। তাই দু’জনেই এদিন দু’জনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। তাতে মোদি, মোদি চিৎকারে তাল মিলিয়েছেন ৫০ হাজার জনতা। তবে আঙ্কল স্যাম (ট্রাম্প এ নামেই পরিচিত বিশ্ব রাজনীতিতে) ও তাঁর বন্ধু ‘মিস্টার মোডি’র এই ঐতিহাসিক শো যে সুপারহিট হবে, তার পূর্বাভাস আগেই ছিল। হলও তাই। মার্কিন মুলুকের শক্ত জমিতে ভারতীয়দের ভিতকে আরও সুদৃঢ় করল রবিবার হিউস্টনে নরেন্দ্র মোদির বহু আলোচিত মেগা ইভেন্ট ‘হাউডি মোদি’।

The post মোদিতেই পূর্ণ আস্থা ট্রাম্পের, হিউস্টনের মঞ্চে একে অপরকে ‘প্রিয় বন্ধু’ বলে সম্বোধন appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement