অপেক্ষার প্রহর গোনা শেষ, আসতে চলেছে ভাল সময়। একাধিক সেক্টরে দেখতে পাবেন লাভের মুখ, বিশেষ করে উন্নত ভ্যালু প্রোপোজিশন আসবে ইকুইটি মার্কেটে। সরকারি স্তরে সংস্কারও ইতিমধ্যেই গতি পেয়েছে। সব মিলিয়ে তাই বরোদা বিএনপি পারিবা মিউচুয়াল ফান্ডের চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার সঞ্জয় চাওলা মনে করেন, বাজার লগ্নিকারীকে ভবিষ্যতে অনেক সুযোগ দেবে। প্রয়োজন কেবল তার সদ্ব্যবহার করা। সঞ্জয় চাওলার সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে নীলাঞ্জন দে
বরোদা বিএনপি পারিবা মিউচুয়াল ফান্ডের দৃঢ় বিশ্বাস-ভারতীয় ইকুইটি মার্কেট আগামি বেশ কিছু বছর ধরে উন্নতমানের ভ্যালু প্রোপোজিশন আনতে সক্ষম হবে, ইনভেস্টররা একাধিক সেক্টরে রিফর্মের ভিত্তিতে লাভবান হবেন। এ নিয়ে বরোদা বিএনপি পারিবা মিউচুয়াল ফান্ডের সিআইও শ্রী সঞ্জয় চাওলার মন্তব্য, “ইনডেক্সের ওঠাপড়া নিয়ে অহেতুক ভাববেন না। বরং স্টক বাছাই করার উপর বিশেষ নজর দিন’’। ‘সঞ্চয়’-এর পাঠকদের জন্য রইল তাঁর বিশেষ সাক্ষাৎকার।
আগামী কয়েকটি কোয়ার্টারে স্টক মার্কেট কোন দিকে যাবে বলে মনে হয়?
দেখুন, ভারতীয় অর্থনীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে চলেছে। এগুলির সাহায্যে স্টক মার্কেটে গতি আসবে বলে আমার ধারণা। কোনও ভবিষ্যৎবাণী করছি না, কিন্তু সাম্প্রতিক ট্রেন্ড দেখে বলতে চাই যে সংস্কারের ব্যাপারে সরকারি স্তরে উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো। হ্যাঁ, পৃথিবীতে এখন মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ঠিকই, তবে চাহিদাও আছে ভাল রকম। তাই ম্যানুফ্যাকচারিং এবং সার্ভিসেস সেক্টর, দুই-ই উন্নতি করবে। সব মিলিয়ে বাজার লগ্নিকারীকে অনেক সুযোগ দেবে, নতুন এবং পুরনো ইনভেস্টররা এই বিষয়ে আশ্বস্ত থাকতে পারেন। সুযোগ বুঝে অ্যালোকেশন বাড়ানোর এটাই সময়-তাই লক্ষ্য হোক বড় মাপের তহবিল।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আপনার নিজস্ব ইনভেস্টমেন্ট স্টাইল কেমন হবে?
মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে আমরা গোনাগুনতি কিছু স্টকে বিনিয়োগ করি বটে, কিন্তু সব সেক্টরগুলি নিয়েই নিরন্তর চর্চা জারি রাখি। লার্জ ক্যাপ বা বৃহৎ কোম্পানির স্টক তো এমনি নজরের বাইরে যায় না, মিড ক্যাপ নিয়েও আগ্রহ কম নেই। একজন দায়িত্বশীল ফান্ড ম্যানেজার হিসাবে বলি-কর্পোরেট সেক্টর সামগ্রিকভাবে কী ফল দেখাল, কেমন প্রফিট করতে পারল, বা রেভিনিউ কোন খাতে এল, এই ফ্যাক্টরগুলি খুব জরুরি। বেছে নেওয়া স্টকগুলিকে আমরা এই আতস কাচের মধ্যে দিয়ে দেখি। যদি আমাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সেই সব স্টক, তবেই পোর্টফোলিওতে যোগ করি। ইনভেস্টরদের জেনে রাখা ভাল যে তাঁরা যেন সর্বতোভাবে তাঁদের প্রচেষ্টা জারি রাখেন। এককালীন ইনভেস্টমেন্ট তাঁরা করতে পারেন এবং একই সঙ্গে সিস্টেম্যাটিক লগ্নির প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন। দীর্ঘমেয়াদে চালু রাখতে পারলে ইকুইটি মার্কেটে তাঁরা উপকৃত হবেন।
[আরও পড়ুন: বাড়ছে সিঙ্গল প্রিমিয়াম ইনসিওরেন্স প্ল্যানের চাহিদা, জেনে নিন খুঁটিনাটি]
বরোদা বিএনপি পারিবার সর্বশেষ ফান্ড কীভাবে লগ্নি করবে? আমি মাল্টি অ্যাসেট ফান্ডের এনএফওর কথাই বলছি।
ইকুইটি, ডেট এবং গোল্ড আমাদের বেছে নেওয়া তিনটি অ্যাসেট ক্লাস। নতুন প্রস্তাবিত ফান্ডে ফিক্সড ইনকাম এবং সোনা দুই-ই থাকবে। অর্থাৎ পোর্টফোলিওতে সামান্য হলেও একটি অংশ এই দুই অ্যাসেট দিয়ে গঠিত হবে। বাকি প্রধান অংশে থাকবে ইকুইটি। সব মিলিয়ে যথেষ্ট ডাইভারসিফায়েড হবে বলে আমরা মনে করি। সেক্টোরাল অ্যালোকেশনের নিরিখে বেশ কিছু ছোটবড় ক্ষেত্রে আমরা লগ্নি করব। বিনিয়োগকারীরা যদি ধারাবাহিকভাবে সিপ করেন তাহলে উপকৃত হবেন, রুপি কস্ট অ্যাভারেজিংয়ের সুবিধা পেতে পারবেন। এনএফওটি ১২ই ডিসেম্বর বন্ধ হবে, ন্যূনতম অ্যাপ্লিকেশনের অঙ্ক ধার্য করা হয়েছে ৫,০০০ টাকা।
এমন একটি ফান্ড কীভাবে ভ্যালু অ্যাডিশন করতে পারে সাধারণ কোনও বিনিয়োগকারীর জন্য?
ডাইভারসিফিকেশন আজকের বাজারে খুব প্রয়োজনীয়। কারণ ভোলাটিলিটি সবসময় আছে, থাকবেও। যথেষ্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিজের অ্যাসেটগুলি রাখা উচিত, তাহলে অন্তত কিছুটা রিস্কের মোকাবিলা করা সম্ভব। আমাদের এই ফান্ডের ক্ষেত্রেও এই যুক্তি প্রযোজ্য। ডেট বা ফিক্সড ইনকাম তো কমবেশি স্থিতিশীল, সেখানে বিনিয়োগকারী বড় কোনও ঝুঁকির এই মুহূর্তে সম্মুখীন হবেন না। কারেন্ট ইনকাম এবং লিকুইডিটি, এই দুই জরুরি শর্ত পূরণ হতে পারে ডেটের মাধ্যমে। গোল্ড (আমাদের জন্য গোল্ড এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফ) এই মুদ্রাস্ফীতির বাজারে বেশ ডিফেন্সিভ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। ইনফ্লেশন তথা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে সারা বিশ্ব আজ চিন্তিত, তাই গোল্ডের সেই চিরন্তন চাহিদা অটুট আছে। এছাড়াও স্টকগুলি আমরা খুব বুঝেশুনে নির্বাচন করতে চাই। যাতে প্রধান কোনও সেক্টর বাদ না পড়ে তাও দেখতে হবে। যে ইনভেস্টর উপযুক্ত ডাইভারফিকেশনে বিশ্বাস করেন, তিনি এমন ফান্ড নিজের পোর্টফোলিওর অন্তর্গত করতে পারেন।