শুভঙ্কর বসু: শহরে এসে প্রথমদিনই সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক সারলেন পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পুলিশ-পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। শুনলেন প্রত্যেক দলের অভিযোগ-অনুযোগ। ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিলেন। তবে তাঁরই সামনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। জানিয়ে দেন, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী কমিশনারের (সিইও) সামনে কোনও কথা তিনি বলবেন না। বিষয়টি নিয়ে সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হয় আলোচনার টেবিলে। তারপরই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান সিইও। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর তৈরি হয়।
এদিকে আজ বিকেলে সমস্ত জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করার কথা বিবেক দুবের। প্রত্যেক জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কী হাল-হকিকত সে বিষয়ে খোঁজ খবর নেবেন তিনি। প্রথম দফার ভোটের ১১ দিন আগে, রবিবার বিকেলে কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন তিনি। সেখানে ছিলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও) আরিজ আফতাব। ছিলেন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সিদ্ধিনাথ গুপ্তও। ভোটারদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো এবং পুলিশকে তাঁদের দায়িত্ব স্মরণ করানোর জন্য ভোটের অনেক আগেই রাজ্যে এসেছেন বলে জানান দুবে। সেইমতো সোমবার সকাল থেকেই কাজ শুরু করে দেন। প্রথমে তৃণমূল। তারপর বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএম। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা আলাদা আলাদা ভাবে বৈঠক করেন বিবেক দুবের সঙ্গে। শাসক-বিরোধী পরস্পরের বিরুদ্ধে নানারকম নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ তোলে। বিবেক গতকালই সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘অবাধ এবং সুষ্ঠু ভোটের জন্য বাংলায় এসেছি আমি। লক্ষ্য, ভোটারদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো। পুলিশকে পুলিশের কাজ করার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।’’
এদিন সকালে তৃণমূলের তরফে তাপস রায় এবং শুভাশিস চক্রবর্তী এই বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাঁরা বেরনোর পর ঢোকেন বিজেপির প্রতিনিধিরা। কংগ্রেসের তরফে যান প্রদীপ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে যান প্রতিনিধিরা। বামেদের দলের নেতৃত্বে ছিলেন রবীন দেব।
প্রত্যেক দলের তরফেই নিজেদের কথা জানানো হয়। প্রথম তিন দফায় যে-আটটি জেলায় ভোট হওয়ার কথা, আজ বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানকার জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন দুবে। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের বক্তব্য, রাজ্যে ভোট ঘোষণার পরে বড়সড় ঘটনা ঘটেনি। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার ঘটনায় ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে প্রচার পর্ব এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির বদল হতে পারে। অবশ্য কমিশন সূত্রের দাবি, অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে তারা বদ্ধপরিকর।
আজ বিকেলে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ এবং মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভিডিও-সম্মেলন করবেন বিবেক। প্রথম দু’দফায় পাঁচ কেন্দ্রের ভোটের জন্য সাধারণ পর্যবেক্ষকেরা পৌঁছে গিয়েছেন। এসে গিয়েছেন পুলিশ-পর্যবেক্ষকেরাও। তৃতীয় দফার ভোটের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার সাধারণ এবং পুলিশ-পর্যবেক্ষকেরা আসতে শুরু করবেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রথম তিন দফার ভোটে নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন, স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রূপায়ণ, অতীতের ভোটে গোলমাল পাকানো লোকেদের মধ্যে ক’জন গ্রেপ্তার হয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকার নিরাপত্তা, মদ-সহ বেআইনি সামগ্রী বাজেয়াপ্ত-সহ আইনশৃঙ্খলার সার্বিক চিত্র নিয়েই জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যের বিশেষ পুলিশ-পর্যবেক্ষক বিবেক।
The post কমিশনের ভূমিকায় ক্ষোভ মুকুলের, আলোচনা ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন সিইও appeared first on Sangbad Pratidin.