সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মায়ানমারের (Myanmar) মডেল হ্যান লে গত সপ্তাহে থাইল্যান্ডের (Thailand) সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জিততে পারেননি। কিন্তু তবু তিনি ‘পরাজিত’ নন। ২২ বছরের তরুণীর আবেগঘন বক্তৃতায় মুগ্ধ গোটা বিশ্ব। গত সপ্তাহের শেষে প্রতিযোগিতার মঞ্চেই তিনি তাঁর দেশের বিপন্নতার কথা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তারপর থেকেই কার্যত ভাইরাল হয়ে গিয়েছে তাঁর ওই ভিডিও। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার মঞ্চে দাঁড়িয়ে এমন সাহসী ভাষণ রাতারাতি তাঁকে গোটা বিশ্বের কাছে মায়ানমারের প্রতিবাদের মুখ করে তুলেছে।
ঠিক কী বলেছিলেন হ্যান লে (Han Lay)? ‘মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল বিউটি প্যাজেন্ট’-এর মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ”আজ আমার দেশ মায়ানমার… সেখানে শয়ে শয়ে মানুষ মারা যাচ্ছেন। আপনারা দয়া করে মায়ানমারকে সাহায্য করুন। এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক আঙিনার সাহায্য আমাদের খুব প্রয়োজন।” তবে এরই পাশাপাশি নিজের দেশের আমজনতার উপরেও ভরসা ব্যক্ত করেন তিনি। তাঁর কথায়, ”একটা জিনিস বলতে পারি। আমরা, মায়ানমারের জনতা কখনও হাল ছাড়ি না। ওরা রাস্তায় নেমে লড়ছে। আমিও এই মঞ্চ থেকেই লড়াই চালাচ্ছি।”
[আরও পড়ুন: রাফালে চুক্তির মধ্যস্থতাকারীকে কোটি-কোটি টাকা উপহার দাসল্টের! দাবি ফরাসি সংবাদমাধ্যমের]
কেবল মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করাই নয়, মাসখানেক আগে মায়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গনের রাজপথে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল ২২ বছরের তরুণীকে। হ্যান লে’র হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। তাঁর উদ্দীপ্ত ভঙ্গি উদ্বুদ্ধ করেছিল অন্যদেরও।
কিন্তু কেন সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার মঞ্চকে প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে বেছে নিলেন তিনি? ইয়াঙ্গন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ওই তরুণী ‘বিবিসি’কে জানিয়েছেন, ”মায়ানমারে সাংবাদিকদের আটক করা হচ্ছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিই কথা বলার।” তবে ওই মিনিট দুয়েকের বক্তৃতার জন্য যে জুন্টার রক্তচক্ষুর কবলে তাঁকে পড়তে হবে, তা ভালই বুঝছেন হ্যান। তাই আপাতত আগামী তিন মাস থাইল্যান্ডেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এপ্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ”আমার পরিবারকে নিয়ে আমার উদ্বেগ বাড়ছে। আমার বন্ধুরা আমাকে দেশে ফিরতে না করছে।”
উল্লেখ্য, ১ ফেব্রুয়ারি আচমকাই দেশের শাসনক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নেয় মায়ানমার সেনা। পালটা ক্যু বা সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে পথে নামে দেশের আমজনতা। কোথাও তারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, তো কোথাও শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছে। রাজধানী নাইপিদাও থেকে শুরু করে ইয়াঙ্গন পর্যন্ত প্রায় সমস্ত বড় শহরে রাস্তায় সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে সরব হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। আর তাদের থামাতে নির্বিচারে গুলিবৃষ্টি করেছে জুন্টা। এপর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৫০। গোটা বিশ্ব নিন্দায় সরব হলেও নির্বিকার মায়ানমারের সেনা।