shono
Advertisement

শৃঙ্গে ফেলে আসা গণেশ মূর্তি আনতে গিয়েই কি মৃত্যুর মুখে দীপঙ্কর? বাড়ছে জল্পনা

এভারেস্ট নিয়ে বাংলা, ইংরাজিতে তিনটি বই লিখেছেন৷ The post শৃঙ্গে ফেলে আসা গণেশ মূর্তি আনতে গিয়েই কি মৃত্যুর মুখে দীপঙ্কর? বাড়ছে জল্পনা appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:08 AM May 30, 2019Updated: 10:59 AM May 30, 2019

অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: সদ্য প্রয়াত পর্বতারোহী দীপঙ্কর ঘোষের মৃত্যুতে নয়া ইঙ্গিত৷ জলের অভাব নাকি শৃঙ্গে ফেলে আসা গণেশ মূর্তি উদ্ধারে গিয়ে প্রাণহানি ঘটেছে তাঁর, এনিয়ে মাথাচাড়া দিচ্ছে প্রশ্ন৷ মাকালু শৃঙ্গ জয় করে ফেরার পথে জল শেষ হয়ে গিয়েছিল দীপঙ্কর ঘোষের। তিনি শেরপাদের এগিয়ে যেতে বলেছিলেন। দীপঙ্করের কথামতো শেরপারা ফিরে আসেন চার নম্বর ক্যাম্পে। কিন্তু ক্যাম্পে আর ফিরতে পারেননি দীপঙ্কর। অনুমান, মাকালু শৃঙ্গ ও চার নম্বর ক্যাম্পের কাছে ৭৭০০ মিটারের কাছে তুষার ঝড়ের মধ্যে পড়ে যান তিনি। ওখান থেকে আর ফিরতে পারেননি। তুষার ঝড় সামলাতে না পেরে দীপঙ্কর মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়েছিলেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দীপঙ্করের নাকে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।

Advertisement

ঘটেছিল আরও একটি ঘটনা। দীপঙ্করের সঙ্গে মাকালু অভিযানে যাওয়া সঙ্গীরা জানিয়েছেন, মাকালু শৃঙ্গ জয় করে ফেরার পথে একটি গণেশের মূর্তি শৃঙ্গে ফেলে এসেছিলেন দীপঙ্কর। শৃঙ্গ জয় করে কিছুটা নামার পরই বিষয়টি তাঁর মনে পড়ে। তখন তিনি আবার গণেশের মূর্তিটি আনতে শৃঙ্গের দিকে রওনা দেন। ফের নামতে শুরু করেন দীপঙ্কর। এরকম সময়ের সামান্য ভুলই কি প্রাণ কাড়ল পর্বতারোহী দীপঙ্কর ঘোষের? বুধবার দীপঙ্করের মৃতদেহ বালির বেলানগরের বাড়িতে আসার পর এমনই প্রশ্ন দীপঙ্করের বন্ধুদের মনে উঁকি দিচ্ছে। জীবনে ৪৭ বার পর্বত অভিযান করা দীপঙ্কর কি সময়ের হিসেবে সামান্য ভুল করলেন? সে কি জলের জন্য দাঁড়িয়ে না থেকে শেরপাদের সঙ্গে নেমে আসলে ভাল করত? এই প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছে তাঁর বন্ধু অন্যান্য পর্বতারোহীদের মনে।

[ আরও পড়ুন: ‘২০১১ সালে সন্ত্রাস রুখেছি, এবারও রুখব’, শালবনিতে আত্মবিশ্বাসী শুভেন্দু ]

মাকালু অভিযানে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া দীপঙ্করের দেহ মঙ্গলবারই ফেরানো হয় কলকাতায়। দেহটি বুধবার সকালে বালির বেলানগরের বাড়িতে রাখা ছিল। সেখানেই দীপঙ্করকে শেষশ্রদ্ধা জানান হাওড়ার বিশিষ্টরা। তাঁকে শ্রদ্ধা জানান রাজে্যর মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তারপর বালির শ্মশানঘাটে দীপঙ্করের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে দেহ নিয়ে গিয়ে কোন্নগর পুরসভার পিস প্যারাডাইসে রাখা হয়। ২০১১ সালে বাবা-মাকে হারিয়েও এভারেস্ট জয়ী দীপঙ্কর পর্বত অভিযানের নেশায় ছুটে বেরিয়েছেন। ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে দীপঙ্কর তাঁর বউদির কাছেই থাকতেন। ভাইপো সায়ন ঘোষকেও পর্বত অভিযানের পাঠ দিতেন দীপঙ্কর।

৫৪ বছর বয়সি দীপঙ্করের ছোট থেকেই পর্বত অভিযানে যাওয়ার নেশা। ১৯৯৫ সালে দীপঙ্কর প্রথম পর্বত অভিযান করেন। কুমায়ুন হিমালয়ের ভানুটি পর্বত অভিযান দিয়ে শুরু করেন দীপঙ্কর। তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি দীপঙ্করকে। একের পর এক পর্বত অভিযান করেছেন তিনি। জুটেছে পুরস্কারও। ২০১৬ সালে পর্বত অভিযানে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলেও পড়েছিলেন বালির এই পর্বতারোহী। তুষার ঝড়ের কবলে পড়ে দীপঙ্করের হাতের আটটি আঙুলে তুষার ক্ষত হয়। পায়ের একটি আঙুলেও হয় তুষার ক্ষত। হাতের আটটি আঙুল ও পায়ের একটি আঙুল কার্যত উড়ে যায়। কিন্তু তাতেও দমেননি দীপঙ্কর। ২০১৮ তে চো ইউ পর্বত অভিযানে গিয়ে সফল হন তিনি। তার পর এবার মাকালু অভিযানে যান দীপঙ্কর।

[ আরও পড়ুন: ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে নৈহাটি পুরসভায় তাণ্ডব মুখঢাকা দুষ্কৃতীদের ]

দীপঙ্কর ঘোষের পুরস্কারের ঝুলিও বেশ পূর্ণ। পর্বত অভিযান ও অভিযানে গিয়ে সেখানে শ্রেষ্ঠ ছবি তোলার জন্য পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি। ‘ভারত গৌরব’ পুরস্কার কিংবা রাজ্য সরকারের ‘খেল পুরস্কার’ সবই জুটেছে দীপঙ্করের ঝুলিতে। পর্বত অভিযানে গিয়ে শ্রেষ্ঠ ছবি তোলার জন্য দু’বার আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছেন দীপঙ্কর। এছাড়া এভারেস্ট অভিযান নিয়ে বাংলা ও ইংরেজিতে তিনটি বই লিখেছেন দীপঙ্কর। বই লিখেছেন কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান নিয়েও। কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে গিয়ে পর্বতারোহী ছন্দা গায়েনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল দীপঙ্করের। সেই অভিজ্ঞতার কথাও তাঁর বইয়ে লিখেছেন দীপঙ্কর। পর্বত অভিযানে যাওয়া প্রচুর ছবি ও পাওয়া প্রচুর পুরস্কার নিজের ঘরে যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছেন দীপঙ্কর। বুধবার সেই ঘরে গিয়ে দেখা গেল ঘর যেন শূন্য। ঘরের চতুর্দিকে ছড়িয়ে শুধু স্মৃতি। ভাইপো সায়ন ঘোষ জানালেন, কাকার স্মৃতি সম্বলিত ঘরটি টিকিয়ে রাখার জন্য এগিয়ে আসুক পর্বতপ্রেমীরা। দীপঙ্কর ঘোষের বন্ধু পর্বতারোহী সৌম্য মুখোপাধ্যায় জানালেন, হিসেবি, বুদ্ধিমান ও অভিজ্ঞ দীপঙ্করের পর্বতে হারিয়ে যাওয়া খুবই দুঃখজনক।

The post শৃঙ্গে ফেলে আসা গণেশ মূর্তি আনতে গিয়েই কি মৃত্যুর মুখে দীপঙ্কর? বাড়ছে জল্পনা appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement