সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মস্কোতেই সমাধিস্ত করা হল রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে। প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানাতে এসেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। রুশ প্রশানের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই সকলের গলায় শোনা যায় পুতিন-বিরোধী স্লোগান। নাভালনির দেহ হাতে পেতে কার্যত যুদ্ধ করতে হয়েছিল তাঁর পরিবারকে। দেহ কবর দেওয়া নিয়েও আরোপ করা হয়েছিল নানা বিধিনিষেধ। নিষেধাজ্ঞা ছিল স্মরণসভা নিয়েও। কিন্তু শুক্রবার কোনও কিছুই আটকাতে পারেনি সাধারণ মানুষকে।
এদিন মস্কোর মারইনোর চার্চ অফ দ্য আইকন অফ দ্য মাদার অফ গডে নাভালনির শেষকৃত্যের আয়োজন করা হয়। এক সময় এই শহরেই থাকতেন নাভালনি। এদিন প্রিয় নেতাকে বিদায় জানাতে আসেন বহু মানুষ। কিন্তু কাউকেই চার্চের ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। গেটের বাইরে থেকেই সকলে একবার নাভালনিকে শেষবার দেখার অনুরোধ জানান। বরিসভস্কয় কবরস্থানেও ভিড় করেন শয়ে শয়ে মানুষ। সেখানেও শোনা বলা পুতিন-বিরোধী স্লোগান। অনেকেই চিৎকার করে বলেন, “আর যুদ্ধ নয়। আমরা পুতিনহীন রাশিয়া চাই।” কেউ কেউ বলেন, “নাভালনি তুমি সর্বদা আমাদের হৃদয়ে থাকবে। আমাদের ক্ষমা করো।” গ্রেপ্তারির আশঙ্কায় রাশিয়ায় আসেননি নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া। সোশাল মিডিয়াতেই স্বামীকে বিদায় জানিয়ে লিখেছেন, ‘২৬ বছরের ভালোবাসা ও আনন্দের জন্য ধন্যবাদ।’
[আরও পড়ুন: একমুঠো ভাতের জন্য হাহাকার অবরুদ্ধ গাজায়, আকাশপথে ত্রাণ পৌঁছে দেবে আমেরিকা]
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রুশ জেল থেকে নাভালনির মৃত্যুর খবর মিলেছিল। তার পর থেকেই সরগরম হয়ে ওঠে রাশিয়ার রাজনীতি। ‘পুতিন-বিরোধী’ নেতার মৃত্যুর কারণ নিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর দাবি করা হয়। প্রায় ১ সপ্তাহ পর ছেলের দেহ দেখার অনুমতি পান নাভালনির মা। পুতিনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া। তিনি অভিযোগ করেন। “পুতিন এবং মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবায়ানিন এর জন্য দায়ী। আমরা অ্যালেক্সেইর স্মরণসভা করার জন্য কোনও জায়গা পায়নি। ক্রেমলিনের লোকেরাই ওঁকে মেরেছে। তার পর তাঁর দেহ নিয়ে উপহাস করেছে। ওঁর মাকে নিয়ে উপহাস করেছে। এখন ওরা অ্যালেক্সেইর স্মৃতি নিয়েও উপহাস করবে।” জানা গিয়েছে, মস্কোর একাধিক চার্চ নাভালনির শেষকৃত্য করতে অস্বীকার করে।
শুক্রবার জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল রুশ প্রশাসন। কিন্তু সব নিষেধ উড়িয়ে রাশিয়ার একাধিক রাস্তায় ভিড় করে বহু মানুষ। এদিন গোটা রাশিয়া প্রায় ৬৭ জনকে আটক করা হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারির পর থেকে নাভালনির মৃত্যু নিয়ে সেভাবে কিছুই বলতে শোনা যায়নি ক্রেমলিনের তরফে। কিন্তু রয়টার্স সূত্রে খবর, শুক্রবার ক্রেমলিন জানিয়েছে, ‘নাভালনির পরিবারের প্রতি আমাদের কিছুই বলার নেই।’ রুশ জেল কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়েছিল, স্বাভাবিক কারণে মৃত্যু হয়েছে নাভালনির। কিন্তু এই মৃত্যু নিয়ে দানা বেঁধেছে রহস্য। যার উত্তর হয়তো নাভালনির সঙ্গেই কবরে চাপা পড়ে গিয়েছে।