সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের নতুন বিদেশমন্ত্রী হয়েছেন প্রাক্তন তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী হাসান মাহমুদ। দায়িত্ব পাওয়ার পরে সবার প্রথম ভারতের সঙ্গেই বৈঠক করলেন তিনি। সোমবার তিনি কথা বলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে। আগামিদিনে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও মজবুত করতে আশাবাদী তাঁরা। জানা গিয়েছে, শীঘ্রই ভারত সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে মাহমুদের। নির্বাচনে জয়লাভ করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সবার প্রথম শুভেচ্ছা জানিয়েছিল ভারতই। বিদেশমন্ত্রকে প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ‘বন্ধু’ ঢাকার কাছে অগ্রাধিকার পেল দিল্লি।
সোমবার বিদেশমন্ত্রকে বিদেশমন্ত্রী হাসান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয় তাঁদের মধ্যে। বৈঠক শেষে প্রণয় ভার্মা জানান, “বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে নতুন মেয়াদে ভারতের অংশীদারত্ব আরও জোরদার করা হবে। দুই দেশের মধ্যে উন্নয়ন ও সহযোগিতা আরও গতিশীল হবে। আমি তাঁকে আমাদের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়েছি। দুই দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করব। ২০২৩ সালে আমরা অনেক ইতিবাচক কাজ করেছি। এই সময়ে আমরা অনেক বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। যেগুলোর মধ্যে জ্বালানি সরবরাহ লাইন, বিদ্যুৎ প্রকল্প, বাণিজ্য খাতে অর্থনৈতিক লেনদেন, ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম রয়েছে।”
[আরও পড়ুন: ‘ওরা মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, সাজা হবে’, ‘আগুন-সন্ত্রাসী’দের হুঁশিয়ারি হাসিনার]
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে হাসান মাহমুদ বলেন, “ভারতের পক্ষ থেকে আমাকে দিল্লি সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা সময়টা দেখছি। কখন আমার এবং ভারতের বিদেশমন্ত্রীর জন্য সুবিধাজনক হয়।” ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “২০১৪ সালেও নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ভারত তখন আমাদের পাশে ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনকেও বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ভোট নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্থাপন করা হয়েছিল। সে সময়ও আমরা ভারতকে আমাদের পাশে পেয়েছিলাম। এবারও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান কী ছিল বা কী আছে, তা আপনাদের জানা।”
উল্লেখ্য, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক রক্তে গড়া। আক্ষরিক অর্থেই তাই। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে ভারতীয় ফৌজ। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে প্রাণ আহুতি দেন তিন হাজার ভারতীয় জওয়ান। সেসমস্তই মুজিবকন্যা জানেন। দিল্লি পাশে না থাকলে পিতৃহন্তা রাজাকররা আবারও মাথাচাড়া দেবে এটাও তাঁর থেকে ভালো কে বোঝে। তাই ভারতকে পাশে নিয়েই চলায় বিশ্বাসী শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে যখন হাসিনা প্রথমবার বাংলাদেশের মসনদে বসেন তখন থেকে তিনি ভারতের সঙ্গে এই সখ্য বজায় রেখেছেন। ২০২২ সালে ভারত সফরে এসে তিনি বলেছিলেন, “বাংলাদেশের কখনও ভারতকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান আমরা অস্বীকার করতে পারি না।” বাংলাদেশ যে শুধু ভারতের প্রতিবেশি রাষ্ট্র তা নয় কৌশলগত অংশীদারও।