সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: উগ্র হিন্দুত্বে ধুয়ে মুছে সাফ সংখ্যালঘুরা! কট্টর হিন্দুত্বকে হাতিয়ার করেই লোকসভা নির্বাচনে ঝাঁপিয়েছিল বিজেপি। ফলে সেখানে যে মুসলিম সাংসদ থাকবে না তা জানাই ছিল। তবে তথ্য পরিসংখ্যান বলছে বিজেপি তো বটেই আস্ত এনডিএতে একজনও নেই মুসলিম সাংসদ। শুধু মুসলিম কেন, শিখ, বৌদ্ধের পাশাপাশি সংসদে এনডিএ'র তরফ থেকে থাকছে না একজন খ্রিষ্টান সাংসদও।
লোকসভা নির্বাচন সাঙ্গ হওয়ার পর সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে একটি পরিসংখ্যান। যেখানে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি (BJP) তো বটেই পুরো এনডিএতে (NDA) এবার ব্রাহ্মণদের জয়জয়কার। এনডিএ'র তরফ থেকে এবার ১৪.৯ শতাংশ ব্রাহ্মণকে এবার দেওয়া হয়েছিল টিকিট, তার মধ্যে জয়ী হয়েছেন ১৪.৭ শতাংশ। পাশাপাশি রাজপুত ও অন্যান্যদের মিলিয়ে এনডিএতে এবার ৩৩.২ শতাংশ সাংসদ উচ্চ সম্প্রদায়ভুক্ত। এছাড়া ওবিসি ও ইন্টারমিডিয়েট কাস্টের ((মারাঠা, জাঠ, লিঙ্গায়েত, পাতিদার, রেড্ডি, ভোক্কালিগা)) থেকে সাংসদ হয়েছেন ৪১.৯ শতাংশ। ১৩.৩ শতাংশ তফসিলি সম্প্রদায়ের এবং ১০.৮ শতাংশ তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের। অদ্ভুতভাবে মুসলিম, খ্রিষ্টান, শিখ, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একজনও সাংসদ নেই এনডিএ থেকে। রিপোর্ট বলছে, এনডিএ'র শরিক দলগুলি থেকে এবার মাত্র ০.৯ শতাংশ মুসলিম, ০.২ শতাংশ খ্রিষ্টানকে প্রার্থী করা হয়েছিল তবে কেউই জয়ী হতে পারেননি। এই তালিকায় ০.২ ও ০.৪ শতাংশ শিখ ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষকে প্রার্থী করা হয়। তারাও এবার জয়ী হয়নি।
এনডিএ'র প্রার্থী তালিকার এই তথ্য পরিসংখ্যান এক্স হ্যান্ডেলে তুলে ধরেছেন তামিলনাড়ুর কংগ্রেস সাংসদ মানিকাম ঠাকুর। পাশাপাশি তিনি লিখেছেন, 'লোকসভায় নবনির্বাচিত এনডিএ সাংসদের মধ্যে একজনও মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ বা বৌদ্ধ সাংসদ নেই। প্রকৃত গণতন্ত্রকে চালিয়ে নিয়ে যেতে ধর্মীয় বৈচিত্রের প্রতিনিধিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু 'আঙ্কেলজি' তা হতে দেবেন না। এই মনোভাব দেশের গণতন্ত্রে কতটা খারাপ প্রভাব ফেলতে পারবে কল্পনা করবেন।' সংখ্যালঘুহীন মোদির সরকারের ছবিটা প্রকাশ্যে আসার পর রাজনৈতিক মহলের দাবি, এনডিএ'র অন্যান্য শরিকদলগুলি যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে প্রার্থী দেয়নি তা কিন্তু নয়। কিন্তু এনডিএ'র 'বিগ ব্রাদার' বিজেপির উগ্র হিন্দুত্বের তেজে নিভে গিয়েছে সংখ্যালঘু প্রার্থীদের জয়ের আশা। যার ফল, এবার একটিও সংখ্যালঘু সাংসদকে জেতাতে পারেনি কোনও শরিকদল।
অন্যদিকে ইন্ডিয়া জোটের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এবার ইন্ডিয়াতে উচ্চ সম্প্রদায় থেকে সাংসদ হয়েছেন মাত্র ১২.৪ শতাংশ। ইন্টারমিডিয়েট কাস্ট (মারাঠা, জাঠ, লিঙ্গায়েত, পাতিদার, রেড্ডি, ভোক্কালিঙ্গা) ও ওবিসি (যাদব, কুরমি) থেকে সাংসদ হয়েছেন ৪২.৬ শতাংশ। তফসিলি জাতি থেকে সাংসদ হয়েছেন ১৭.৮ শতাংশ, তফসিলি উপজাতি থেকে ৯.৯ শতাংশ, মুসলিম ৭.৯ শতাংশ, খ্রিষ্টান ৩.৫ শতাংশ, শিখ ৫ শতাংশ ও অন্যান্য ১ শতাংশ।