শুভঙ্কর বসু: ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। আর গণতন্ত্রের অন্যতম অঙ্গ হল নির্বাচন। তা সে লোকসভা-বিধানসভাই হোক বা পঞ্চায়েত, পুরসভা। ভোট দেওয়া প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নয়, কর্তব্যও বটে। তাই নির্বাচন প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি সম্পর্কে আমজনতাকে সচেতন করার প্রয়াস চলছে অনেকদিন ধরেই। এবার কচিকাঁচাদেরও, অর্থাৎ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভোট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন কমিশন চাইছে, পনেরো থেকে সতেরো বছরের সমস্ত পড়ুয়াকে এ ব্যাপারে সচেতন করার জন্য বারো ক্লাস ও কলেজস্তরের পাঠ্যক্রমে ‘ভোটাধিকার’ বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
স্কুল-কলেজ পড়ুয়াকে গণতন্ত্রের এহেন পাঠ দেওয়ার প্রয়াস নিছক চিন্তাভাবনার স্তরেই আটকে নেই। সিলেবাসে বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করতে ইতিমধ্যেই মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককে চিঠি লিখেছে কমিশন। ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং’ বা (এনসিইআরটি)-কেও প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। চলতি পাঠ্যসূচির মধ্যে বিষয়টিকে এখনই অন্তর্ভুক্ত না করে ‘বুকলেট’ আকারে বিষয়টি পাঠ্যসূচির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না তা যাচাই করেছে এনসিইআরটি। সূত্রের খবর, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে ছাড়পত্র পেলেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
[অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতায়, উদ্ধার ভাই-বোন]
এ প্রসঙ্গে কমিশনের যুক্তি, ভবিষ্যতে যারা ভোটাধিকার পাবে স্কুলস্তর থেকেই তারা ‘ভোট শিক্ষা’ পেয়ে থাকলে আখেরে ভাল হবে। তাছাড়া দুনিয়ার একাধিক উন্নত রাষ্ট্রে তো বটেই, সদ্য গণতন্ত্রের স্বাদ পাওয়া বিভিন্ন দেশেও ভোটাধিকারের প্রসঙ্গ স্কুলপাঠ্যে রাখা হয়েছে। কমিশনের এক কর্তার কথায়, “আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া কিংবা কানাডার মতো রাষ্ট্রে ভোটাধিকারের বিষয়টি অনেক আগেই পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাছাড়া মায়ানমার, কেনিয়া কিংবা নামিবিয়ার মতো নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিও একই পথে হেঁটেছে।” ভারতের মতো এতবড় একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তাহলে কেন পিছিয়ে থাকবে? প্রশ্ন তুলছেন কমিশন কর্তারা।
প্রতি বছর গড়ে অন্তত ২ কোটি নতুন ভোটার তালিকায় সংযুক্ত হন। তাই ১৫ থেকে ১৭-র ছাত্রছাত্রীই কমিশনের টার্গেট। ভোট সংক্রান্ত ঠিক কোন কোন বিষয়গুলিকে পাঠ্যসূচির মধ্যে তুলে ধরতে চাইছে কমিশন? ভোট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করতে চান কমিশন কর্তারা। যেমন ভারতের মতো সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোন পদ্ধতিতে ভোট হয়? ইভিএম যন্ত্র কী? কীভাবে তা কাজ করে? ভিভিপ্যাট কাকে বলা হয়? ভোটদান জরুরি কেন? ভোটের গুরুত্বই বা কোথায়? এসবই পড়ুয়াদের অবগত করাতে চায় কমিশন।
[জাতীয় সংগীতের অবমাননা! প্রতিবাদ করে নিগৃহীত তিলজলা থানার ওসি]
সূত্রের খবর, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ও এনসিইআরটির তরফে সবুজ সংকেত এলে এনিয়ে জাতীয়স্তরে কমিটি গড়া হবে। ঠিক কোন কোন বিষয় সিলেবাসে রাখা হবে তা ঠিক করবে ওই কমিটি। জাতীয়স্তরে কাজটি হয়ে গেলে প্রতিটি রাজ্যে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের তত্ত্বাবধানে এমন একটি করে কমিটি তৈরি করা হবে। যারা সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে আলোচনার করে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
সিসিবিএসই ও আইএসসি-র মতো এনসিইআরটি আওতাভুক্ত বোর্ডগুলি বর্তমানে ‘ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক ২০০৫’-এ গঠিত সিলেবাস অনুযায়ী চলছে। জানা গিয়েছে, নতুন সিলেবাস চালু হলে সিভিকস বা সোশ্যাল সায়েন্স পেপারে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত বসে না থেকে ভবিষ্যতের ভোটারদের সচেতন করতে স্কুলে স্কুলে অভিযান শুরু করেছে কমিশন। ভোটের পাঠ পড়াতে স্কুলে পৌঁছে যাচ্ছেন কমিশন কর্তারা। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ধরনের কর্মসূচি আরও বাড়বে বলে জানা গিয়েছে৷
The post এবার ছোটদের গণতন্ত্রের পাঠ, সিলেবাসে ঢুকছে ‘ভোটাধিকার’ appeared first on Sangbad Pratidin.