বিশ্বদীপ দে: ‘জীবন এত ছোট কেনে’? এ আক্ষেপ কি কেবল তারাশঙ্করের উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের? তা তো নয়। আসলে জন্মের পর থেকেই সব মানুষের মধ্যে এমন এক অস্বস্তিকর প্রশ্ন ঘাপটি মেরে বসে থাকে। কিন্তু আমেরিকার (US) হেস্টার ফোর্ডের অন্তত এমন আক্ষেপ থাকার কথা নয়। সবচেয়ে বেশি বয়সি মার্কিনি মহিলা হিসেবে রেকর্ড গড়া এই বৃদ্ধা সদ্যপ্রয়াত হলেন ১১৫ বয়সে (অথবা ১১৬ বছর )। এই ‘অথবা’ জনগণনার হিসেবের গোলমালের কারণে উদ্ভুত হলেও তাঁর বয়স যেটাই হোক, তাঁর থেকে বেশি দিনের আয়ু আর কারও ভাগ্যে জোটেনি আমেরিকায় (Oldest living American)।
‘মার্কিন সেন্সাস ব্যুরো’র হিসেব অনুযায়ী, হেস্টার ফোর্ডের জন্ম ১৯০৪ কিংবা ১৯০৫। পরিবারে কার্যত এক বটবৃক্ষের মতো হয়ে অবস্থান করতেন তিনি। তাঁর জন্মদিনে কেবল বাড়ি নয়, উত্তর ক্যারোলিনার শার্লটের সেই পাড়াতেই কার্যত উৎসবের আবহ তৈরি হয়ে যেত।
[আরও পড়ুন: OMG! সন্তানের নাম ‘Department of Statistical Information’! কারণ জানলে অবাক হবেন]
শতাব্দী পেরিয়েও পৃথিবীর বুকে যাঁর জন্য বরাদ্দ ছিল জল, হাওয়া তাঁকে দেখতে ভিড় তো হবেই। কিন্তু পরিবারের মানুষদের কাছে তাঁর উপস্থিতিটা কেবল যেন সংখ্যার বিচারে নয়। তাঁর পরিবারের তরফে বর্ষীয়সী বৃদ্ধার মৃত্যুতে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ‘‘আমাদের পরিবারের কাছে উনি ছিলেন একজন স্তম্ভের মতো। সকলকে ভালবাসা, আর সমর্থন দিয়ে গিয়েছে আজীবন।’’ তাঁকে আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান প্রজন্ম ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তাঁর জন্মসাল ১৯০৪ সালে হলে সারা পৃথিবীর নিরিখে তিনি হবেন দীর্ঘায়ু ব্যক্তিদের মধ্যে তৃতীয়। আর ১৯০৫ সালে জন্ম হলে তিনি হবেন তালিকায় ষষ্ঠ। কিন্তু সেসব তো শুকনো হিসেব। সন-তারিখের হিসেব দিয়ে কি আর ওই দীর্ঘ জীবনকে মাপা যায়? জন্মের পর থেকে ছোট বয়সে খেতে তুলো তোলার কাজ করতেন। ১৪ বছরে বিয়ে। তারপর এক দীর্ঘ জীবন। জীবন, নাকি মহাজীবন? ১৪ সন্তান, ৬৮ নাতি-নাতনি, ১২৫ জন পুতি ও তাঁদের ১২০ জন সন্তান- চার প্রজন্মের বংশধরদের দেখে তবে চোখ বুজলেন তিনি। আর রেখে গেলেন এক দীর্ঘ জীবনের ইতিহাস।