স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় ক্রীড়া বিল আনার প্রস্তাব দিল কেন্দ্রীয় সরকার। একরাশ সংস্কার সমেত। সেই বিলের যে ড্রাফট হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে যেমন অ্যাথলিটদের ভোটাধিকার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে, তেমনই আরও বেশি করে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে মহিলাদের। পাশাপাশি মহিলা অ্যাথলিটদের সুরক্ষার উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে বিলে। গঠন করা হচ্ছে অ্যাপিলেট স্পোর্টস ট্রাইবুনাল। যেখানে নিষ্পত্তি হবে সমস্ত ক্রীড়া সম্পর্কিত মামলার।
ঠিক কী কী রয়েছে স্পোর্টস বিলে? নিচে একটা খসড়া তুলে দেওয়া হল:
১) স্পোর্টস রেগুলেটরি বোর্ড গঠন করা হবে। যা কিনা প্রধান সংস্থা হবে। স্পোর্টস রেগুলেটরি বোর্ডই ঠিক করবে কোন জাতীয় স্পোর্টস ফেডারেশনদের (এনএসএফ) মান্যতা দেওয়া হবে? দেশের খেলাধুলো কী ভাবে চলবে, তা ঠিক করবে স্পোর্টস রেগুলেটরি বোর্ড।
২) আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি অনুসরণ করে চলবে সব কিছু। অবশ্যই জাতীয় স্বার্থকে মাথায় রেখে। জাতীয় স্পোর্টস ফেডারেশনদের পেশাদার সিইও নিয়োগ করতে হবে।
৩) বিল অনুসারে সমস্ত এনওসি, এনপিসি ও এনএসএফে অ্যাথলিট কমিশন গঠন করতে হবে। যেখানে অ্যাথলিটরা নিজেদের সুবিধে-অসুবিধের কথা বলতে পারবেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অংশ নিতেও পারবেন তাঁরা। পাশাপাশি সমস্ত এনওসি, এনপিসি, এনএসএফে এথিক্স কমিশন রাখতে হবে। রাখতে হবে ডিসপিউট রেসোলিউশন কমিশনও।
৪) বিল অনুযায়ী, এনওসি, এনপিসি, এনএসএফের জেনারেল বডির ভোটিং সদস্যদের দশ শতাংশ অ্যাথলিটরা হবেন। যাঁদের নির্বাচন করবে অ্যাথলিটস কমিশন। এঁদের মধ্যে থেকে ন্যূনতম দু’জন সদস্য (একজন পুরুষ ও একজন মহিলা) থাকবেন এক্সিকিউটিভ কমিটিতে।
৫) প্লেয়ার সুরক্ষার উপর প্রবল জোর দেওয়া হয়েছে বিলে। দেখা হবে, নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের যাতে যৌন হেনস্থার শিকার কোনও ভাবে না হতে হয়। মনে করা হচ্ছে, প্লেয়ার সুরক্ষায় এ এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
৬) খেলা সংক্রান্ত সমস্ত মামলা-মোকদ্দমার নিষ্পত্তি করার জন্য আলাদা করে গঠন হচ্ছে অ্যাপিলেট স্পোর্টস ট্রাইবুনাল। এতে দু’টো সুবিধে। এক, আদালতের উপর চাপ কমবে। খেলাধুলো সংক্রান্ত মামলার জন্য স্পোর্টস ট্রাইবুনাল থাকার কারণে। দুই, ক্রীড়া সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হবে।
৭) আন্তর্জাতিক নিয়মবিধি মেনে ডোপিং-বিরোধী কর্মকাণ্ডে জোর দেওয়া হবে প্রভূত ভাবে। ডোপিং সংক্রান্ত আইন ভাঙলে কঠোর শাস্তিও দেওয়া হবে। এর ফলে বিশ্বমঞ্চে ভারতের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশে অলিম্পিক আয়োজনের ক্ষেত্রে যা সুবিধা করে দেবে।
৮) সমস্ত এনওসি, এনপিসি, এনএসএফ-কে আরটিআইয়ের (রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্ট) আওতায় আনা হবে। তাতে জনসাধারণের মধ্যে সমস্ত কার্যকলাপের স্বচ্ছ্বতা বজায় থাকবে।
৯) বিভিন্ন ক্রীড়াসংস্থার এক্সিকিউটিভ কমিটিতে অন্তত তিরিশ শতাংশ সদস্য মহিলা হতে হবে।
১০) আইওএ, পিসিআই, এনএসএফদের অভিজ্ঞ নির্বাচনী অফিসার নিয়োগ করে নির্বাচন করতে হবে। দেশের সাধারণ নির্বাচনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হতে হবে সেই নির্বাচনী অফিসারদের।
১১) একমাত্র স্বীকৃত ক্রীড়া সংস্থারাই দেশের নাম এবং দেশের পতাকা ব্যবহার করতে পারবে। যদি সেই নিয়ম কেউ ভাঙে, তা হলে এক বছরের নির্বাসন বা দশ লক্ষ টাকা জরিমানা কিংবা দু’টোই হতে পারে।
ক্রীড়া বিলের প্রস্তাব আসার পর জল্পনা শুরু হয়েছে দেশের ক্রিকেটমহলেও। বলা হচ্ছে, ক্রীড়া বিলের আওতায় কি আসতে চলেছে ভারতীয় বোর্ড? যা কিনা এত দিন ধরে স্ব-শাসিত সংস্থা হিসেবে কাজ করেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, ভারতীয় বোর্ড ক্রীড়া বিলের আওতায় এলে অবাক হওয়ার হবে না। দেখা যাক!