দুলাল দে: লাল কার্ডের জন্য সাফ সেমিফাইনালে কোচের বেঞ্চে বসতে পারবেন না ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচ (Igor Stimac)। দুটো হলুদ কার্ড দেখার জন্য শেষ চারে নেই ডিফেন্সের স্তম্ভ সন্দেশ জিঙ্ঘানও। আর কুয়েত ম্যাচের পর বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপিং সংগ্রহ করে ভারতীয় দল সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, তাদের ইচ্ছাকৃত সমস্যায় ফেলা হয়েছে। একটা চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছে টিম! এখানেই শেষ নয়। প্রমাণ সহ পুরো ঘটনা উল্লেখ করে ভারতীয় দলের তরফে সাফ কমিটির কাছে একটা প্রতিবাদ পাঠানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। যেখানে দেখানো হবে, কীভাবে স্টিমাচ সহ পুরো ভারতীয় দলকে সমস্যায় ফেলতে চেয়েছিলেন কুয়েত ম্যাচের চতুর্থ রেফারি!
কুয়েত (Kuwait) ম্যাচের আগে স্টিমাচ সহ ভারতীয় ‘থিঙ্কট্যাঙ্ক’ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেমিফাইনালে যাতে তাজা থাকেন, তাই সুনীল সহ দলের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারদের বিশ্রাম দেওয়া হবে। কিন্তু ম্যাচের দিন সকালে কুয়েতের শক্তি নিয়ে কাটাছেঁড়ার পর ঠিক হয়, কয়েকজনকে বিশ্রাম দিয়ে পুরো দল নামানো হবে। কিন্তু সন্দেশের দ্বিতীয় হলুদ কার্ডটাই সমস্যায় ফেলে দিয়েছে পুরো ভারতীয় দলকে। কারণ, সুনীল ছাড়া ভারতীয় দল যদি কারও উপরে মারাত্মক রকমের ভরসা করে, তিনি সন্দেশ জিঙ্ঘান। পুরো ভারতীয় শিবির মনে করছে, কোচের মতোই সন্দেশকে কার্ড দেখানোর উদ্দেশ্য, সেমিফাইনালে তাঁকে মাঠের বাইরে রাখা।
কিন্তু ঠিক কী হয়েছিল কুয়েত ম্যাচে? কেন কার্ড দেখে সেমিফাইনালে মাঠের বাইরে থাকতে হবে ইগর স্টিমাচকে? তার থেকেও বড় কথা, শুধুই কি সেমিফাইনাল? নাকি একই প্রতিযোগিতায় দু’বার লাল কার্ড দেখার জন্য ইগর স্টিমাচকে ফাইনালেও মাঠের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে সাফ (SAFF Championship) কর্তৃপক্ষ? যা জানা যাচ্ছে তা হল, ম্যাচের প্রথমার্ধে মহেশে ‘থ্রু’ বাড়ান আশিক কুরুনিয়নকে। মহেশের ‘থ্রু’ ধরে কুয়েতের জোনে ঢুকে পড়েন আশিক এবং সুনীল। অফসাইড না হলেও অফসাইডের সিদ্ধান্ত জানান রেফারি। যা দেখে ডাগআউট থেকে চিৎকার করে ভারতীয় কোচ বলেন, ‘‘ডু ইওর জব প্রপারলি।’’ সামান্য এই কথার জন্য চতুর্থ রেফারি পাকিস্তানের আরশাদ-উল-হক সঙ্গে সঙ্গে রেফারির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আর রেফারি এসে হলুদ কার্ড দেখিয়ে যান। এরপর কুয়েতের ফুটবলাররা ভারতীয় ফুটবলার পিছন থেকে একাধিক ট্যাকল করে ফেলে দিলেও রেফারির কার্ড একবারের জন্যও বের হয়নি। অথচ সন্দেশের সামান্য ট্যাকলে সঙ্গে সঙ্গে হলুদ কার্ড বেরিয়েছে! পাকিস্তান ম্যাচে একটা হলুদ কার্ড আগেই দেখা ছিল যাঁর।
[আরও পড়ুন: বিজেপি নাকি তৃণমূল, রাজ্যসভা নির্বাচনে নওশাদের ভোট কার দিকে? তুঙ্গে জল্পনা]
ঠিক এরপরেই কুয়েতের একজন ফুটবলার, ভারতীয় দলের (India Football Team) বেঞ্চের কাছে এসে কোচ ইগর স্টিমাচকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। স্টিমাচ তাঁকে শান্ত হতে বললে মুখে আঙুল দিয়ে স্টিমাচকে অশালীন ইঙ্গিত করেন ফুটবলারটি। এরপর স্টিমাচও সেই ভাষাই প্রয়োগ করেন, যা ফুটবলারটি প্রয়োগ করেছিলেন ভারতীয় কোচের উদ্দেশ্যে। এই ঘটনাটি যখন ঘটছে, তখন চতুর্থ রেফারি আরশাদ-উল-হক ব্যস্ত ছিলেন উদান্তা আর রহিম আলিকে পরিবর্ত হিসেবে নামানোর জন্য। সব ছেড়ে আরশাদ-উল-হক সঙ্গে সঙ্গে রেফারি আলগমগীরকে ডাগ আউটের কাছে ডেকে এনে বোঝান। এবং রেফারি সঙ্গে সঙ্গে লাল কার্ড দেখিয়ে স্টিমাচকে মাঠ থেকে বার করে দেন! কিন্তু একই দোষে দুষ্ট কুয়েতের ফুটবলারটিকে একটা হলুদ কার্ড পর্যন্ত দেখানো হয়নি! ম্যাচের শেষের দিকে আনোয়র আলির আত্মঘাতী গোলে কুয়েত যখন খেলায় ফিরেছে, কুয়েতের পুরো রিজার্ভ বেঞ্চে ভারতীয় দলের ডাগ আউটে চলে এসেছিল। সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন চতুর্থ রেফারি। কিন্তু কোনওরকম পদক্ষেপ নেননি তিনি।
যখন পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন ডেকে আনেন রেফারিকে। শেষে কার্ড দেখানো হয় একজন মাত্র ফুটবলারকে। যিনি দলের তৃতীয় গোলকিপার। আর এতেই চক্রান্ত দেখছে ভারতীয় দল। কিছু বলবেন না, বলবেন না করেও কোচ ইগর স্টিমাচ বললেন, ‘‘সেইসব পুরনো দিন চলে গিয়েছে। যখন অন্য দলের কর্তা, রেফারিরা আমাদের বিরুদ্ধে যা খুশি বলতেন, আর আমরা মাঠের ভিতরে, বাইরে সহ্য করতাম। এই ভারতীয় দল নতুন ভারতীয় দল। এখানে একটা বললে, দুটো ফেরত দেব। এই দল লড়াই করার জন্য তৈরি।’’ কুয়েতের ফুটবলাররা যখন মাঠের ভিতর ভারতীয় ফুটবলারদের বিরুদ্ধে ইচ্ছে করে পা চালাচ্ছিলেন, তখন যেভাবে ভারতের ফুটবলাররা তেড়ে গিয়েছেন, তাতে রীতিমতো খুশি স্টিমাচ। বললেন, ‘‘দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দলের এই আগ্রাসনটাই দেখতে চেয়েছিলাম। আবারও বলছি, কেউ একটা মারলে পাল্টা দুটো দেব আমরা।’’ যাক গে যাক। আপাতত তাঁর এবং সন্দেশের সেমিফাইনালে না থাকার ধাক্কা ভারতীয় দল কী ভাবে সামলায়, সেটাই দেখার।