পরের মাসেই মুক্তি পাচ্ছে শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ‘কণ্ঠ’। দুই বাচিক শিল্পীর ভালবাসার গপ্পো। প্রেমসাগরে তাঁদের ডুব দেওয়া। বৃষ্টিস্নাত শহরের বুকে ভরসার কাঁধে মাথা রাখা। এই সবকিছুর সঙ্গেই ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে রয়েছে তাঁদের ‘কণ্ঠ’। যা তাঁদের ভালবাসা, আবদার, হাসি-ঠাট্টা, রাগ-অভিমান, লড়াইয়ের সাক্ষী। ল্যারিঞ্জিক্যাল ক্যানসারে আক্রান্ত এক বাচিক শিল্পীর স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয়ে করেছেন পাওলি দাম। যিনি রেডিও জকি অর্জুন মল্লিকের এই পুরো লড়াইয়ের সাক্ষী তথা সঙ্গী। শিবপ্রসাদের সঙ্গে জুটি বাঁধা থেকে ‘কণ্ঠ’র অভিজ্ঞতা- সব নিয়েই অকপট আড্ডায় পাওলি দাম। সঙ্গে সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
পৃথার চরিত্রে অভিনয়ে করার অভিজ্ঞতা…
পাওলি– প্রথমবার শিবুদা-নন্দিতাদির সঙ্গে কাজ, তাই আমার কাছে খুব স্পেশ্যাল ‘কণ্ঠ’। ভীষণ সুন্দর তো বটেই! সঙ্গে বেশ কঠিন অভিজ্ঞতাও।
সেটা কেমন?
পাওলি– ছবির বিষয়বস্তুটাই তো কঠিন। দুই বাচিক শিল্পী অর্জুন, পৃথা। আকাশবাণীতে তাদের দেখা, প্রেমে পড়া, বিয়ে, সংসার… রেডিও জকি অর্জুন এবং নিউজ রিডার পৃথার জীবনে এভাবেই সবকিছু সুন্দর চলছিল। হঠাৎ করেই তাদের জীবনে ক্রাইসিস আসে। ধরা পড়ে ক্যানসার। শুরু হয় যুদ্ধ। কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি ওরা। আর সেটা করতে গিয়েই অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। জীবনের অনেক কিছু হয়তো অজানাই থেকে যেত এই চরিত্রটা না করতে পারলে।
[আরও পড়ুন: সাহানার কণ্ঠে ‘সবাই চুপ’ মনে ধরেছে শিবু-পাওলির]
পৃথার চরিত্রটা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
পাওলি– ‘কণ্ঠ’তে অভিনয় করার আগে বহু ল্যারিঞ্জিক্যাল ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। সেসময়ে খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছিলাম তাদের মানসিক লড়াইটাকে। প্রতিনিয়ত তারা এত ধৈর্য, মানসিক শক্তি জুগিয়ে চলেন, তা সত্যি যে কাউকে অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো। পৃথাও ঠিক সেরকমই একটা চরিত্র। একদিকে অফিসের কাজ করা, সংসার সামলানো, অন্যদিকে স্বামীকে দেখা। এই কঠিন দুর্দিনে স্বামীর পাশে তার ভরসা হয়ে দাড়ানো। কতটা মানসিক শক্তি প্রয়োজন ওই পরিস্থিতি সামলাতে গেলে, সেটা বুঝেছি। চ্যালেঞ্জিং তো বটেই!
ছবিতে পৃথা-অর্জুনের কেমিস্ট্রিটা কেমন?
পাওলি– প্রেম-বিয়ে-সংসার সবই দিব্যি চলছিল। কিন্তু, একটা সময়ে ওদের সম্পর্কে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। মানসিক বোঝাপড়ার গ্রাফটা ওঠানামা করে, যখনই অর্জুনের ল্যারিঞ্জিক্যাল ক্যানসার ধরা পড়ে। বাদ চলে যায় ওর বাকযন্ত্র। মনের ভাবপ্রকাশের উপায় হারিয়ে ফেলে সে। অর্জুনের কাছে সবথেকে কষ্টকর ওর কাছের মানুষ, স্ত্রীই বুঝতে পারে না ও কী বলতে চাইছে। দু’জনেই যেহেতু বাচিক শিল্পী। পৃথাকে কাজ করতে দেখে স্বাভাবিকভাবেই অর্জুনের মনে রাগ-অভিমান-ঘৃণার সৃষ্টি হয়। অপরদিকে, মেজাজ হারানোর উপায় নেই পৃথার।
ছবিটা করতে গিয়ে কখনও এরকম সংশয় কাজ করেছে যে এই কণ্ঠরোধের সমস্যাটা যদি আমারও হত, তাহলে…
পাওলি– ও বাবা.. এটা আর বোলো না। ভীষণভাবে। ছবিটা করার পর থেকে সারাক্ষণ এই ভয়টা আমায় তাড়া করে বেড়ায়। শুধু আমার না, আমার আশেপাশের অনেকেই ট্রেলার দেখে আমায় বলেছেন, সত্যিই কত বড় একটা সমস্যা, কিন্তু এটা তো কখনও ভেবেই দেখেনি! কমিউনিকেট করব কীভাবে?
কণ্ঠ আমাদের সবার কাছেই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। অভিনেত্রী হিসেবে কীভাবে যত্ন নাও গলার?
পাওলি– আমরা শুধু শরীরের বাহ্যিক দিকেই নজর দিই। কিন্তু ইন্টারন্যাল ব্যাপারগুলোও দেখা জরুরি। এই ছবি ধূমপান এবং তামাক-বিরোধী বার্তা দেবে। যা আজকের প্রজন্মের জন্য খুবই জরুরী। ডাবিং হোক বা কোনও শো, হাইপিচে কথা বললেই সমস্যা হয় আমার। অনবরত কথা বলার জন্য গলায় চাপ পড়ে। তখন গার্গেল করি, স্টিম নিই। এগুলো মাস্ট! প্রচণ্ড ঠান্ডা আর গরম দুটোই এড়িয়ে চলি। আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল ভয়েস রেস্ট। যেটা আমি মাঝেমধ্যেই করি।
[আরও পড়ুন: ক্যানসার আক্রান্তের সংগ্রাম নিয়ে সেলুলয়েডে ‘কণ্ঠ’, পোস্টারেই গল্পের আভাস]
সেটা কীরকম?
পাওলি– মৌনব্রত পালন করি। ঘুম যেরকম প্রয়োজনীয়, ভয়েস রেস্টও সেরকমই ভীষণ জরুরি। সিনেমাটা আমায় অনেক কিছুতে নাড়িয়ে দিয়েছে জানো! বাকযন্ত্রে ক্যানসার আক্রান্ত মানুষগুলোর লড়াই, নিজের লোকেরাই তাদের কেমন একঘরে করে রেখেছে। ওদের অভিজ্ঞতার কথা চোখে জল আনার মতো। “ইট ওয়াজ অ্যান ইমোশনাল জার্নি”।
শিবুদার সঙ্গে প্রথমবার জুটি বাঁধলে… পরিচালক শিবুদা না অভিনেতা শিবুদা, কাকে এগিয়ে রাখবে?
পাওলি– অদ্ভুতভাবে ওর মোডের সুইচ অন-অফ করার ক্ষমতা রয়েছে। ভীষণ ইন্টারেস্টিং। এই একদিকে অভিনয় করছে, প্রোডাকশন সামলাচ্ছে তো আবার পরিচালনা। কিন্তু নন্দিতাদি থাকায় সেটাতে রিলিফ পেয়েছিল। তাই সেদিকটা খুব একটা দেখতে হয়নি শিবুদাকে। অভিনেতা শিবুদা অসাধারণ। বিশেষ করে ‘সবাই চুপ’ গানটিতে শিবুদার রোম্যান্টিক অবতার দেখলাম। আমি বলেওছি, যে পরবর্তীতেও রোম্যান্টিক ছবিতে আমাদের জুটি বাঁধা উচিত।
The post ‘সারাক্ষণ ভয়টা আমায় তাড়া করে বেড়ায়’, ‘কণ্ঠ’ নিয়ে অকপট পাওলি appeared first on Sangbad Pratidin.