রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: একে তো বিদ্রোহে জেরবার দল, তার উপর ৪৫-এর গেরোয় এবার নতুন বিতর্ক শুরু হল বঙ্গ বিজেপিতে (West Bengal BJP)। মণ্ডল কমিটির সভাপতিদের বয়স ৪৫ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নতুন নিয়মে ৪৫ বছর বয়সের বেশি কেউ থাকতে পারবে না মণ্ডলের সভাপতি পদে। আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছে দলের আদি নেতারা। অভিজ্ঞতা না থাকলে সংগঠন সঠিকভাবে পরিচালিত হবে কী করে?
তাহলে দলের প্রবীনরা তো মণ্ডলের দায়িত্বে থাকতেই পারবে না। তাই দলের এই নতুন নিয়ম বাতিলের দাবি তুলল আদি নেতারা। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষকে চিঠি দিলেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সহ-সভাপতি ও বর্তমানে রাজ্য কর্মসমিতির সদস্য রাজকমল পাঠক। তবে শুধু রাজকমলবাবুই নন, রাজ্য বিজেপির প্রবীন নেতাদের বড় অংশেরই দাবি, মণ্ডল কমিটির সভাপতির বয়সসীমা বাড়ানো হোক। তা না হলে প্রবীন-নবীনের সমন্বয় থাকবে না দলে। ক্ষোভ-বিক্ষোভ অব্যাহত বঙ্গ বিজেপিতে। মণ্ডল কমিটি গঠন নিয়ে নতুন করে জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে অসন্তোষ।
[আরও পড়ুন: ডিএনএ পরীক্ষা নাকি শ্রাদ্ধ? নেতাজি অন্তর্ধান রহস্য উন্মোচনে এবার চন্দ্র বসু বনাম চন্দ্রচূড় ঘোষ]
বহু জেলায় মণ্ডল কমিটিতে পুরনোদের বাদ দিয়ে নতুন ও তৎকাল নেতারা প্রাধান্য পাচ্ছেন। রাজ্যের শীর্ষ নেতাদের একাংশের পছন্দের লোকেরাও বিভিন্ন মণ্ডল কমিটির সভাপতি পদে জায়গা পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। আর এই মণ্ডল কমিটি নিয়ে দলের মধ্যে অশান্তির জেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই রাজ্য কমিটি ও জেলা কমিটি থেকে পদত্যাগও করেছেন। জেলা কমিটির নিচে অর্থাৎ নিচুস্তরে গেরুয়া শিবিরের সংগঠনের ভিত হচ্ছে বুথ, শক্তিকেন্দ্র ও মণ্ডল কমিটি। ৫০ থেকে ৭০টি বুথ নিয়ে একটি মণ্ডল গঠিত হয়। রাজ্যজুড়ে বিজেপির মণ্ডল রয়েছে ১,২৬৩টি। রাজ্য সভাপতি বদলের পর জেলায় জেলায় নতুন করে মণ্ডলের কমিটিও বদলাচ্ছে। যদিও মণ্ডল কমিটিগুলির বর্তমান যা অবস্থা তাতে বহু জায়গায় বড় কর্মসূচি হলে সেভাবে ঝান্ডা ধরার লোকও মিলবে না। তার উপর দলের সর্বভারতীয় সংগঠন সম্পাদক বিএল সন্তোষ নির্দেশ দিয়েছেন, মণ্ডল কমিটির সভাপতিদের বয়স ৪৫-এর মধ্যে হতে হবে। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিচুতলায় যেখানে বিজেপি করার লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে ৪৫ বছরের কমবয়সিদের খুঁজে পাওয়াটাও যেমন সমস্যা, আবার আদি নেতারা বাদ পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে।
দলের প্রাক্তন রাজ্য সহ-সভাপতি রাজকমল পাঠক চিঠি দিয়েছেন বিএল সন্তোষকে। ৪৫-এর নিয়ম বাতিলের আরজি জানিয়ে রাজকমলের বক্তব্য, দলে প্রবীন-নবীনকে মেলাতে হবে। নাহলে সংগঠন পরিচালনায় সমস্যা হবে। বঙ্গ বিজেপির পুরনো ও বর্ষীয়ান নেতা রাজকমল পাঠক। তাঁর কথায়, ৪৫ বছর বয়স হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সে লোক কাজের। তাকেও মণ্ডল সভাপতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে নতুন-অনভিজ্ঞদের আনা হচ্ছে। যে ভাল কাজ করছে তাকে শুধু বয়সের জন্য ৪৫ বছরে বসিয়ে দেওয়া হবে কেন? কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে প্রশ্ন বিজেপির এই রাজ্য নেতার। পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) ক্যাবিনেট ছিল অভিজ্ঞদের নিয়ে। সব পুরনোদের সরিয়ে কেবল নতুনদের এনে রাজনীতি করেননি দিলীপ ঘোষ। অর্থাৎ টিম অমিতাভ চক্রবর্তীর দিকেও পরোক্ষে আঙুল তুলেছেন রাজ্য বিজেপির এই প্রবীন নেতা।