অর্ণব আইচ: এ যেন দাবা খেলা। রীতিমতো ‘ঘুঁটি সাজিয়ে’ এসএসসি দুর্নীতি করেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তার জন্য অনেককে পদ থেকে সরিয়ে নিজের পছন্দমতো ব্যক্তিদের এনে বসিয়েছিলেন পদে। এমনই অভিযোগ তুলেছে সিবিআই।
চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতিতে আসল মাস্টারমাইন্ড প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এসএসসির পরামর্শদাতা তথা কর্ণধার শান্তিপ্রসাদ সিনহাকে ওই পদে বসিয়েছিলেন পার্থই। আর তার জন্য এসএসসির অন্য কর্তাদের বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে সরাতে শুরু করেন তিনি। সিবিআই চার্জশিটে জানিয়েছে, এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারপার্সন শর্মিলা মিত্রকে সরিয়ে দেন পার্থ। সেই জায়গায় তিনি নিয়ে আসেন শান্তিপ্রসাদ সিনহাকে। এই কারণেই শান্তিপ্রসাদকে নিয়ে আসা হয়, যাতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ইচ্ছামতো জালিয়াতি ও বেআইনিভাবে এসএসসিতে নিয়োগ করা যায়। আরও একটি ঘটনার কথা সিবিআই উল্লেখ করেছে। এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান হিসাবে অধ্যাপক সৌমিত্র সরকার যোগদান করলে তাঁর উপর বিভিন্ন ধরনের চাপ দিতে শুরু করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি এসএসসির এক কর্তা পর্ণা বসুকে এসএসসির সদর দপ্তর থেকে দক্ষিণ আঞ্চলিক কমিশনে বদলি করার জন্য চাপ দেন।
[আরও পড়ুন: কোভিডের মতো উপসর্গ ডেঙ্গুর! গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় মৃত্যু আরও দু’জনের]
সিবিআইয়ের দাবি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) একাধিক নির্দেশ পালন করতে রাজি হননি সৌমিত্রবাবু। এমনকী, চোখের সামনে নিয়োগ দুর্নীতি শুরু হলে প্রতিবাদও করেছিলেন। ২০১৯ সালে প্যানেল বাতিল হওয়ার পর ‘সি’ ও ‘ডি’ গ্রুপের চাকরির জন্য ৩৮১ জনের সুপারিশপত্র শান্তিপ্রসাদ সিনহা তৈরি করেন। তিনিই ওই সুপারিশপত্রগুলি পাঠিয়েছিলেন মাধ্যমিক পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। অভিযোগ, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশেই তৈরি করা হয় ওই সুপারিশপত্রগুলি। এই দুর্নীতি দেখে এসএসসির চেয়ারম্যান হিসাবে সৌমিত্র সরকার ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর শান্তিপ্রসাদ সিনহাকে শোকজ করে চিঠি দেন। তাঁকে জবাবদিহি করতে বলা হয়।
সিবিআইয়ের পক্ষে জানানো হয়েছে, ওই শোকজের চিঠি পাঠানো নিয়েই তুমুল ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ‘দুর্নীতিতে সামিল না হওয়ায়’ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সৌমিত্র সরকারকে। ঘুঁটি সাজাতে পদোন্নতি দেওয়া হয় এসএসসির তৎকলীন কর্তা অশোক সাহাকে। তাঁকে দিয়েই দুর্নীতির কাজ করানো হয়। শান্তিপ্রসাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেননি পার্থবাবু। আবার সৌমিত্রবাবুকেও পার্থ চট্টোপাধ্যায় ডেকে সতর্ক করে দেন বলে অভিযোগ সিবিআইয়ের। তবে সৌমিত্র সরকারের নাম রয়েছে চার্জশিটে। এসএসসির আইন ও নিয়ম তিনি কীভাবে ভেঙেছেন তা-ও দেখানো হয়েছে। এসএসসি গ্রুপ ‘সি’র দুর্নীতির চার্জশিটে সুবীরেশের নাম না থাকলেও তাঁর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে অভিযোগ সিবিআইয়ের। সেই ভূমিকাও তুলে ধরা হয় বলে জানিয়েছে সিবিআই।