সাম্প্রতিক বঙ্গ বাজেটে স্ট্যাম্প ডিউটিতে আনা হয়েছে অস্থায়ী কিছু বদল। কী কী সেই পরিবর্তন আর কীভাবেই বা তা, সম্পত্তি সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রভাব ফেলতে পারে আর সেক্ষেত্রে কী কী বিষয়ে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে, তা নিয়ে বিশদে জানালেন কলকাতা হাইকোর্টে প্র্যাকটিসরতা আইনজীবী, শোহিনী চক্রবর্তী।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পেশ করা সাম্প্রতিক বাজেটে স্ট্যাম্প ডিউটির ক্ষেত্রে একটি সাময়িক পরিবর্তন এসেছে – চালু রেটের উপর দুই শতাংশ রিবেট যেটি ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাম্প অ্যাক্ট, ১৮৯৯’-এর Schedule 1A-এর Article-23 (conveyance)-এর আওতায় পড়া সমস্ত ডকুমেন্টের উপর প্রযোজ্য হবে একটি মাত্র ব্যতিক্রম ছাড়া : অ্যামালগ্যামেশন অফ কনটিনিউয়াস ল্যান্ড। এছাড়াও আনুষঙ্গিকভাবে চালু থাকা সার্কেল রেট/আইজিআর রেট (পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে) দশ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছে। এটিও সাময়িক। প্রসঙ্গত, যে সমস্ত ডকুমেন্টগুলি ৯ জুলাই বা তারপর সম্পাদিত হয়েছে, কেবল সেগুলির জন্যই এই সুবিধাগুলি পাওয়া যাবে। এগুলির রেজিস্ট্রেশন ৩০ অক্টোবরের মধ্যে করে নিতে হবে।
এ তো হল স্ট্যাম্প ডিউটির ব্যাপারে বাজেটের সংশ্লিষ্ট অংশটি। যাঁরা জমিজমা নিয়ে চর্চা করেন নিয়মিত, তাঁদের জন্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। যাঁরা এ সম্বন্ধে তেমন বেশি কিছু জানেন না, তাঁদের একটু আলাদাভাবে বলা দরকার।
[আরও পড়ুন: ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে আড়াল করছেন BJP MP John Barla! বিস্ফোরক নির্যাতিতা]
প্রথমেই বলি স্ট্যাম্প ডিউটি একটি কর, যেটি কয়েক ধরনের ডকুমেন্টের ক্ষেত্রে নেওয়া হয়। কর দিতে দেরি হলে যেমন পেনাল্টি গুনতে হতে পারে, এখানেও অনেকটা তাই। স্ট্যাম্পড ডকুমেন্ট, যেটি যথাযথভাবে করা হয়েছে, আইনমাফিক হয়। সেটি প্রমাণ হিসাবে কোর্টে দাখিল করাও যায়। কোন শ্রেণির ডকুমেন্টে স্ট্যাম্প দরকার তা বিশদে জানানো আছে ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাম্প অ্যাক্ট, ১৮৯৯’-এ। এখানে বলে রাখি ‘রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট,১৯০৮’-এর সম্বন্ধে। এই আইনটিতেও বলা আছে কোন কোন ধরনের ডকুমেন্টে রেজিস্ট্রেশন আবশ্যিক। বলাই বাহুল্য সেইসব ডকুমেন্টগুলি বিনা রেজিস্ট্রেশনে আইনগতভাবে সিদ্ধ হয় না। এও জানাই যে রেজিস্ট্রেশন ফি কিন্তু স্ট্যাম্প ডিউটি নয়, দুটি আলাদা চরিত্রের। এই দুটিরই রেট রাজ্য সরকার ঠিক করে, এবং ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন হয়ে থাকে।
অধিকাংশ সময় রেটগুলি ধার্য করা হয় প্রপার্টির মার্কেট ভ্যালুর ভিত্তিতে। এ ব্যাপারে বিশদ জানতে (পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে) চাইলে, বিশেষত রাজ্য সরকারের তৈরি ক্যালকুলেটর (সম্পত্তির মার্কেট ভ্যালু পেতে হলে) নিয়ে পড়তে চাইলে, সরকারি ওয়েবসাইট wbregistration.gov.in দেখুন।
এইখানে নিচের বিষয়গুলি উল্লেখযোগ্য :–
এই সাময়িক উপেরাক্ত রিবেটের আগে ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাম্প অ্যাক্ট, ১৮৯৯’-এর Schedule 1A-এর Article-23 অনুযায়ী– কোনও স্থাবর সম্পত্তির ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে, শর্তাধীনভাবে, স্ট্যাম্প ডিউটির রেট ছিল :
(ক) মার্কেট ভ্যালুর ৫ শতাংশ পঞ্চায়েত এলাকায়।
(খ) মার্কেট ভ্যালুর ৬ শতাংশ মিউনিসিপ্যালিটি বা কর্পোরেশন (বা নির্দিষ্টভাবে নোটিফায়েড এলাকায়)।
আরও ১ শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটি ধার্য করা হয় (গ্রাম বা শহর, দুই ক্ষেত্রেই) যেখানে মার্কেট ভ্যালু ১ কোটি টাকার বেশি। রেজিস্ট্রেশন ফি হয় মার্কেট ভ্যালুর ১ শতাংশ, (ন্যূনতম ৫০ টাকা)।
এই উপরোক্ত রেটগুলি সাধারণত সেল বা লিজ ডিড (deed), জমি-বাড়ি বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়।
সবশেষে বলে রাখি বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকানা বা অনুরূপ বাসস্থানের স্থায়ী সংস্থান-বহু ক্ষেত্রেই আর্থিক নিশ্চয়তা এবং মানসিক শান্তি দিতে সক্ষম হয়। রিয়েল এসটেটে বিনিয়োগ বহুভাবে লাভজনক হতে পারে, এ আমরা অনেকেই প্রত্যক্ষ করেছি। এই সাম্প্রতিককালের রিবেট সাময়িক হলেও, আশাব্যঞ্জক। আমার বিশ্বাস, মানুষ এতে উপকার লাভ করবেন। সমস্ত আইনি দিকগুলি যাচাই করে, এবং পেশাদার আইনজীবীর পরামর্শমতো পদক্ষেপ নিলে, প্রপার্টি সংক্রান্ত সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন। তাতে আর ভুল-ভ্রান্তির জায়গা থাকবে না।