প্রয়োজন প্রত্যেকের আলাদা, লগ্নির উদ্দেশ্যও বিবিধ। তবু ভালো স্টক চেনার সূত্রের খোঁজ চাইলে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই প্রাইস-টু-আর্নিং রেশিও তথা পি-ই রেশিওর কথা বলে থাকেন। কী এই পি-ই রেশিওর বৈশিষ্ট্য? কীভাবেই বা তা সাহায্য করে ভাল শেয়ার চিনতে, তথ্য সংকলনে টিম সঞ্চয়
স্টক নিয়ে বিভিন্ন সময় আমাদের বক্তব্য শুনেছেন পাঠকরা। তাঁদের একাংশ প্রশ্ন করেছেন– কীভাবে ভালো শেয়ার বেছে নিতে হয়? বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা এই নিয়ে। তাঁদের অনেকেই প্রাইস-টু-আর্নিং (P/E) রেশিও উল্লেখ করেছেন, জানিয়েছেন সাধারণ লগ্নিকারী এই পি-ই রেশিওর ভিত্তিতে লগ্নির কথা চিন্তা করতে পারেন। আজ নির্দিষ্টভাবে এই মাপকাঠি নিয়েই চর্চা করতে চাই আমরা। শুরু করছি ‘পি-ই’ সঞ্চয় দিয়ে। তবে তার আগে একই সঙ্গে অন্য একটি রেশিও নিয়ে জেনে নেওয়া ভালো হবে। আর্নিং পার পেয়ার (EPS) সম্বন্ধে একটু জেনে রাখুন প্রথমেই।
EPS = (সংস্থার নেট ইনকাম) ÷ (মোট শেয়ারের সংখ্যা)
কোম্পানির প্রফিটেবিলিটির আন্দাজ পাবেন, যদি সেটির ইপিএস জানতে পারেন। সেটির নিট রোজগারকে ভাগ করুন আউটস্ট্যান্ডিং শেয়ারের সংখ্যা দিয়ে। সংস্থার উপার্জনের ধারাবাহিকতা বুঝতে নিয়মিতভাবে ইপিএস অনুসরণ করতে থাকুন। যেখানে ইপিএস নিরবিচ্ছিন্নভাবে উঁচুর দিকে, সেখানে প্রফিটেবিলিটি নিয়ে দুঃশ্চিন্তা নেই। কয়েক ক্ষেত্রে নেট ইনকাম থেকে ডিভিডেন্ড বাদ দিয়ে হিসাবটি করা হয়। কোন সংস্থা, সেটির নিজের ইন্ডাস্ট্রিকে অবস্থান কোথায়, তা জানতে অন্য সংস্থার ইপিএসের তুলনা করুন। তুল্যমূল্য বিচার করতে পারেন।
[আরও পড়ুন: সন্দেশখালিকে উত্তপ্ত করতে ‘নন্দীগ্রাম মডেল’! বিজেপির ষড়যন্ত্র ফাঁস করে অডিও প্রকাশ কুণালের]
এবারে, মূল প্রসঙ্গে ফিরি। পি-ই রেশির দিয়ে বুঝবেন যে স্টকটি – ‘দামী’ না ‘কম-দামী’, আর সেই জন্যই বিনিয়োগকারীদের জন্য এই রেশিও এত প্রাসঙ্গিক।
Price-to-Earnings = (স্টকের দাম) ÷ (ইপিএস)
যেভাবে কেবল একটি স্টকের পি-ইর হিসাব কষে নেওয়া যায়, সেভাবেই পুরো ইনডেক্সের পি-ই’ও বার করতে পারেন আপনি। সেই স্টক (অথবা ইনডেক্স) অন্যদের তুলনায় কেমন, তার স্বচ্ছ ধারণা পাবেন এই পদ্ধতিতে। এই প্রসঙ্গে কয়েকটি জরুরি তথ্য–
(ক) l Forward P/E : স্টকের দামের সঙ্গে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য আর্নিংয়ের ভিত্তিতে
lTrailing P/E : স্টকের দামের সঙ্গে গত চার কোয়ার্টারের আর্নিংয়ের ভিত্তিতে।
(খ) বাজার সবসময়ই ‘ফরওয়ার্ড লুকিং’ অন্যদিকে, স্টকের দাম সাধারণত আর্নিংয়ের ক্ষেত্রে ‘ডিসকাউন্টেড’।
[আরও পডুন: ‘কাঁটার মুকুট লাগে ভারী’, বিধানসভায় তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য ‘ক্লান্ত’ মদনের]
(গ) অনেক সময় লগ্নিকারীরা ফরওয়ার্ড আর্নিংই গণ্য করেন, বিশেষ করে যেখানে তঁারা সক্রিয়ভাবে কেনাবেচা করতে চাইছেন। বিনিয়োগ যেখানে তুলনায় বড় বা জনপ্রিয় স্টকে হচ্ছে, সেখানে এই ধারাটি প্রযোজ্য হয়ে থাকে। ট্রেলিং পি-ই একটি ‘হিস্টরিকাল আর্নিং’ সঙ্গে জড়িত মাপকাঠি।
ইনভেস্টরদের জন্য টিপস
তুলনায় ছোট বা স্বল্প-জানা কোম্পানির ক্ষেত্রে ফরওয়ার্ড পি-ই নিয়ে বেশি মাতামাতি না করাই উচিত।
দু-তিন বছরের ফরওয়ার্ড পি-ই নিয়ে অালোচনা করে থাকেন অনেক ব্রোকিং সংস্থার অ্যানালিস্টরা।
চলতি পি-ই রেশিওর সঙ্গে ঐতিহাসিক পি-ই রেশিও যদি তুলনা করেন, তাহলে বর্তমানে ট্রেডিং কেমন হচ্ছে তা বুঝবেন। প্রিমিয়াম না ডিসকাউন্ট, আবার এই প্রশ্নের উত্তর পাবেন।
দুটো সংস্থার পি-ই যদি পাশাপাশি রেখে চর্চা করেন, তাহলে মনে রাখুন সংস্থা দুটি যেন একই সেক্টরের হয়। সেগুলির মাপ (‘সাইজ’ অর্থে) যেন একই ধরনের থাকে। তাহলেই তুলনীয় হবে সে দুটি।
উঁচু পি-ই-র অর্থ স্টকটি দামী, আর কম পি-ই হলে সেটি তেমন দামী নয়, ধরে নেওয়া যেতে পারে। কম পি-ই যুক্ত স্টক বাড়তে পারে, তবে তা কেবল মাত্র একটি সম্ভাবনা।
যদি চড়া পি-ই থাকা সত্বেও লগ্নিকারীরা কিনতে চান স্টকটি, তাহলে বুঝতে হবে তঁারা উঁচু ভ্যালুয়েশনে সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হলেও যথেষ্ট দাম দিতে রাজি। সেখানে অনুমান করতে হবে ইনভেস্টররা আর্নিং গ্রোথ সম্বন্ধে সন্দিহান নন।
পি-ই-র ভিত্তিতে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত?
কেবল এই মাপকাঠি ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে দেখতে হবে যে বিষয়গুলি:
ধরা যাক কোন ক্ষেত্রে ১২ মাসের ট্রেনিং পি-ই হচ্ছে কুড়ি, আর সেটি আনুমানিক ১০% প্রিমিয়ামে আছে দশ বছরের অ্যাভারেজের তুলনায়। সামান্যভাবে বলতে গেলে, এই স্টকটি তুলনায় দামী বলে সম্ভাব্য হতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য। তবে ইকু্যইটি মার্কেটে এত সহজে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না বেশির ভাগ ইনভেস্টরের ক্ষেত্রেই। আরও বহু ধরনের শর্ত কাজ করে প্রতিবার, আর স্টকের দাম নির্ধারণও হয়ে থাকে সেইভাবে।