যে কোনও কাজে কম-বেশি ঝুঁকি থাকেই। কারই বা জীবনের গোটাটাই সহজ-স্বাভাবিক-মসৃণভাবে কেটেছে, বলতে পারেন? বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও সে কথা সত্য। তবে প্রতিটি মানুষ যেমন আলাদা, তাঁদের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতাও আলাদা। কে কতটা ঝুঁকি নিতে সক্ষম, সেটা তাঁকেই বুঝে নিতে হবে। বিশ্লেষণে পার্থপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়
এমন মানব জমিন…
‘Profit is my favourite subject’-সকল বিনিয়োগকারীর প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হল Profit। বাজারে বিনিয়োগের একমাত্র উদ্দেশ্য হল যত বেশি সম্ভব ‘লাভের কড়ি’ ঘরে তোলা। কিন্তু এই Profit Maximization-এর ইঁদুরদৌড়ে আমরা ক্রমাগত ভুলতে বসেছি ‘Satisfaction of Profit’কে। সন্তুষ্টির মাত্রা GDP-র গ্রাফের মতোই ঊর্ধ্বমুখী। তাই বিনিয়োগকারীর প্রধান লক্ষ্য হোক Satisfaction of Profit।
‘Risk hai to isk hai’, Risk-এর সঙ্গে isk-এর সম্পর্কটা সমমুখী হলে তবেই আপনি পেতে পারেন এই ‘Satisfaction of Profit’-এর সন্ধান। তবে সবার আগে আপনাকে খঁুজে দেখতে হবে আপনার মনের ভিতর। আপনি কতটা ঝঁুকি নিতে প্রস্তুত, সেটা আপনাকে পর্যালোচনা করতে হবে। শুধুমাত্র ঝঁুকি নিলেই চলবে না, বুঝতে হবে ঝঁুকি নেওয়ার আপনি যোগ্য কি না।
[আরও পড়ুন: উচ্চ প্রাথমিকের ১৪ হাজার শূন্যপদের কাউন্সেলিং বন্ধ নয়, জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট]
অনেক বিনিয়োগকারীকে দেখেছি যঁারা কেবল রিটার্নের মোহে আবিষ্ট হয়ে নিজের রিস্ক প্রোফাইলকে পাত্তা না দিয়ে হাই রিস্ক ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন এবং ফলস্বরূপ বাজারের পতনে তাদের ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বঁাচি’ অবস্থা। আবার যারা নিজেদের রিস্ক প্রোফাইলকে ‘ম্যানেজ’ করে দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে বিনিয়োগ করেছেন, তঁারা পেয়েছেন কুবেরের অতুল ঐশ্বর্যে্যর সন্ধান। সুতরাং পছন্দ আপনার, আর তার জন্য সারাদিন ফিনান্সিয়াল নিউজপেপারের পাতায় মুখ গুঁজে না থেকে মানব জমিনকে রিস্ক প্রোফাইল পরিমাপের মাধ্যমে উর্বর করলেই সেই ‘এল-ডোরাডো’র হদিশ আপনার হাতের মুঠোয়।
এখন প্রশ্ন, কী এই ‘Risk Profile’? সাধারণভাবে বলতে গেলে আপনি কতটা ঝঁুকি নিতে আন্তরিকভাবে প্রস্তুত। ঝঁুকি বিষয়টি ব্যক্তিবিশেষে পরিবর্তন-সাপেক্ষ। আপনার বয়স, আর্থিক অবস্থা, পারিবারিক ও সামাজিক পরিস্থিতি প্রভৃতির উপর আপনার ঝঁুকি নেওয়ার ক্ষমতা নির্ভর করে। এ ব্যাপারে আপনি আপনার বিনিয়োগ উপদেষ্টার পরামর্শ নিতে পারেন। সফল বিনিয়োগকারী হওয়ার প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল নিজের ঝঁুকি নেওয়ার ক্ষমতাকে বোঝা এবং সেইভাবে বিনিয়োগ করা।
[আরও পড়ুন: দিল্লিতে মুখোমুখি মোদি-মমতা, রাজ্যের বকেয়ার দাবিতে বৈঠক আগামী সপ্তাহেই]
কারণ এর ফলেই বিনিয়োগ আপনার কাছে কেবল পরিসংখ্যার পরিমাপেই আবদ্ধ থাকবে না, পরিণত হবে আর্টে, যা আপনাকে দিতে পারে ‘ফিনান্সিয়াল ফ্রিডম’ তথা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। আশ্চর্য হবেন একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে–সফল বিনিয়োগকারী হতে গেলে আপনার বিনিয়োগের বিষয়ে জ্ঞান, অর্থনীতিতে জ্ঞান, রাজনীতিতে জ্ঞান ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা গুরুত্বপূর্ণ হল আপনার ধৈর্য্য আর নিজেকে জানা, যার মানে নিজের রিস্ক প্রোফাইল অনুযায়ী বিনিয়োগ করা।
সুতরাং, সফল বিনিয়োগকারী হওয়াটা সম্পূর্ণভাবেই আপনার হাতের মুঠোয়। নিজের মানসিক ভাবনা-চিন্তার সামান্য কিছু পরিবর্তনেই আপনার ‘মানব জমিনে’ সোনা ফলতে পারে।