কর্মজীবন শেষ। তো কী? অবসরজীবনেও উপভোগ করুন একই স্বাচ্ছন্দ্য এবং বাঁচার তাগিদ। শুধু দরকার একটু পরিকল্পনা। কর্মজীবন থেকেই যদি অভিজ্ঞ পরামর্শদাতার সান্নিধ্যে এসে, সুন্দরভাবে পরিকল্পনা করে রাখেন, জীবনের পরবর্তী ইনিংস খেলার, তাহলেই সম্ভব স্বপ্নপূরণ। কীভাবে এগোবেন, কী কী দিকে মনোযোগ অবশ্যই দেবেন, বিস্তারিত জানালেন মিউচুয়াল ফান্ড ডিস্ট্রিবিউটর ও ইনসিওরেন্স অ্যাডভাইসর শুভ্র নন্দী
সঞ্চয়-এর পাতায় আমার প্রথম লেখা, বিষয় ‘রিটায়ারমেন্ট করার পর অ্যাসেট অ্যালোকেশন এবং সেই সংক্রান্ত পরিকল্পনা’। বুঝতেই পারছেন, আজকের দিনে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ এটি। অবসর নিয়েছেন, কিন্তু পুঁজি অতি স্বল্প, স্বচ্ছন্দে জীবন যাপন করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে – এমন অভিযোগ অনেকেই করতে বাধ্য হন। পরিকল্পনার অভাবই এর মূল কারণ বলে মনে করা হয়। এর ব্যাপারে বিশদে বলতে গেলে প্রথমেই সংক্ষিপ্ত আকারে কয়েকটি পয়েন্ট
দিয়ে দিই :
১. কর্পাস গঠনের প্রচেষ্টা খুব জরুরি
২. পুঁজি ঠিক কী নিয়ম মেনে তৈরি করবেন, সেই জ্ঞান যেন থাকে
৩. কোন ধরনের ইনভেস্টমেন্টের বিকল্পগুলো আপনার পক্ষে সহায়ক হবে, জানা দরকার
এবার একটু আলোচনা করে নিই। গোড়াতেই জিজ্ঞাসা করি, আপনার ‘পোস্ট রিটায়ারমেন্ট’ সম্বন্ধে যথেষ্ট ভেবেছেন? আপনার নিজস্ব লক্ষ্যগুলি কি পূরণ হয়েছে? অবসর সময়ে কীভাবে দিন কাটাবেন, তা নিয়ে ধারণা আছে? এই সব প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি বিষয় জানিয়ে রাখা উচিত বলে মনে করি। আপনার অবসরোত্তর কিছু ইচ্ছা আছে হয়তো; যেমন ধরুন বিশ্বভ্রমণ অথবা বিগত দিনে ফেলে আসা কোনও শৌখিন ‘হবি’ নতুনভাবে শুরু করা।
[আরও পড়ুন: ইচ্ছেঘরের চাবি! জেনে নিন হোম লোনের খুঁটিনাটি]
অনেকেই এর জন্য সময় ব্যয় করতে রাজি থাকেন রিটায়ার করার পর। হয়তো কেউ নতুন বাড়ির সন্ধানে থেকে সেখানে উঠে যেতে চান। অথবা কেউ সাধারণভাবে সমস্ত ‘ফিনান্সিয়াল লায়াবিলিটি’ ত্যাগ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। এঁদের জন্য বলি বিশেষ করে, নিজের পরিবারভুক্ত মানুষগুলিকে আর্থিক সিদ্ধান্তগুলোর সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করুন। লগ্নি বা উইল সংক্রান্ত মতামতগুলি আলোচনা করে স্থির করুন ঠিক কী করবেন। এরই সঙ্গে ইমার্জেন্সির জন্য তৈরি থাকতে হবে, বুঝতেই পারছেন। তার জন্য যথেষ্ট ইনসিওরেন্স এবং ‘ইমার্জেন্সি ফান্ড’ কি আছে? আপনি হয়তো সেই সময় কম ঝুঁকি চাইবেন, রিস্ক বেশি নয় এমন বিনিয়োগ করার কথা ভাবতে চাইবেন। খুব স্বাভাবিক, এমনই সাধারণভাবে দেখতে পাই চারধারে।
এবার আমি কয়েকটি নীতি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছি, আশা করি মন দিয়ে পড়বেন।
১. কৌশল ঠিক করে সিস্টেম্যাটিক উইথড্রয়াল প্ল্যান পরিচালনা করুন।
২. নিজের ফিক্সড অ্যাসেট যা থাকছে, তা ব্যবহার করা যায় কি না ভেবে দেখুন। রোজগার বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করতে পারেন যাতে মুদ্রাস্ফীতিকে বিশেষভাবে হারাতে পারেন।
৩. সব সময়ই ইনফ্লেশন আপনার প্রধান প্রতিপক্ষ, মনে রাখবেন। ধরা যেতে পারে, সাধারণ রিটেল ইনফ্লেশনের হার ৫% – অতএব আজ যার ভ্যালু এক কোটি টাকা, তা কুড়ি বছর বাদে (৫% মুদ্রাস্ফীতি ধরে নিয়ে) ৩৪ লক্ষ টাকার সামান্য কমে গিয়ে দাঁড়াবে।
রিটায়ারমেন্ট কর্পাসের পর্যালোচনা
১. কোন বয়সে রিটায়ার করেছেন? হাতে কত সময় আছে মনে হয়?
২. লাইফ এক্সপেকট্যান্সি সাধারণ ভারতীয়দের ক্ষেত্রে গড়ে ৭০ বছর বা তার কাছাকাছি, জেনে রাখুন–
৩. বাকি জীবনের জন্য গড়পড়তা মাসে কত খরচ করতে হবে, তা জানেন কি?
৪. মেডিক্যাল ইমার্জেন্সির জন্য, রাতবিরেতে সামাল দিতে আপৎকালীন ফান্ড হাতের কাছে রাখুন।
৫. লগ্নির চিন্তা করুন রিস্ক প্রোফাইল বুঝে। প্রয়োজনে বর্তমান লগ্নির পূর্নবিন্যাস করুন। ভবিষ্যতে এগুলো খুব কার্যকরী হবে আশা করা যায়।
অনেকে ফিক্সড ইনকামের কথা ভাবেন, তার বৈশিষ্ট্যসমূহ যদি পছন্দসই হয় তাহলে স্মল সেভিংস স্কিমের কথা খেয়াল রাখুন। উদাহরণ হিসাবে সিনিয়ার সিটিজেন সেভিংস স্কিমের কথা বলা চলে।
[আরও পড়ুন: শুধু রেটিং নয়, লগ্নির আগে নজরে রাখুন নানা ঝুঁকিও]
নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, নির্দিষ্ট হারে নিয়মিত আয় করা যাবে। পোস্ট অফিসের মান্থলি ইনকাম স্কিমও এই কারণে পছন্দ করেন বহু মানুষ। একইভাবে ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিটও উল্লেখ করতে পারি এই প্রসঙ্গে। এক থেকে পাঁচ বছরের জন্য এই শ্রেণির বিকল্প খুঁজে নিতে অসুবিধা হবে না।
এবার আসি অ্যানুইটির কথায়। আজীবন যদি ফিক্সড রেটে রোজগার করতে ইচ্ছুক থাকেন, তাহলে এই নিয়ে ভাবতে পারেন। বিশেষত যেখানে নানা ধরনের বিকল্প আছে। যেমন ধরুন সিঙ্গল লাইফ, জয়েন্ট লাইফ, রিটার্ন অফ পারচেজ প্রাইস ইত্যাদি। নিজের প্রয়োজন বুঝে সঠিক বিকল্প নিয়ে নেবেন।
একটু আগে সিস্টেম্যাটিক উইথড্রয়াল নিয়ে বলেছি। বেশি জটিল না করে সহজভাবে জানাই যে SWP খুব কার্যকরী হতে পারে। সাবলীল গতিতে এর সুবিধা অবসরপ্রাপ্ত মানুষের হাতে চলে আসতে পারে। রেগুলার ইনকাম পাবেন, সঙ্গে থাকবে আরও একটি বড় মাপের সুবিধা।
হ্যাঁ, আমি ক্যাপিটাল অ্যাপ্রেসিয়েশনের সম্ভাবনার কথাই বলছি। মিউচুয়াল ফান্ডের এই সুযোগ আমার পরিচিতদের মধ্যে অনেকে চান বলে জানি। মোটের উপর বিকল্পের অভাব হবে না যদি প্ল্যানিংয়ের অংশটুকু নিয়ে প্রথমেই ভেবে নেন। বিনা পরিকল্পনায় তো কিছুই সাধিত হয় না। আপনার অবসরের পর কীভাবে দিন কাটবে, তা নিয়ে যদি গোড়াতেই চিন্তাভাবনা করেন, তাতে আপনারই উপকার হবে ভবিষ্যতে। সঠিক ইনভেস্টমেন্ট বেছে নিয়ে, রিস্ক কমিয়ে লগ্নি করুন। অবশ্যই ট্যাক্সের কথা খেয়াল রাখবেন। ‘ট্যাক্স এফিসিয়েন্সি’ যেন সুষ্ঠুভাবে হয়, তা দেখতে হবে। না হলে রিটায়ারমেন্টের পর অসুবিধায় পড়তে পারেন। সামগ্রিকভাবে নিজের সেভিংস কীভাবে সদ্ব্যবহার করবেন, বুঝে নেবেন। পরিকল্পনায় যেন ঘাটতি না থেকে যায়।