টেকনোলজির মোড়কে ঢাকা অনেক অফারই আজকাল লগ্নিকারীদের মোহাবিষ্ট করে। সাবধানতা অবলম্বন করে এগোবেন। কলমে প্রসূনজিৎ মুখার্জি
যে ইনভেস্টমেন্ট প্রোডাক্ট আপনি বোঝেন না, বা যা নিয়ে আপনার জ্ঞান কম, সেই প্রোডাক্টে কখনও লগ্নি করবেন না। আচ্ছা, বলুন তো, গত দুই দশকে কতগুলি নতুন টার্ম আপনি শিখেছেন বিনিয়োগের বাজারের কল্যাণে? বেশ কয়েকটি, তাই না? এর মধ্যে ঠিক ক’টা ব্যবহার করে সম্পদ বাড়াতে পেরেছেন? খুব বেশি নয়, ঠিক কি না? তাহলে এই পরিস্থিতি থেকে কিছু শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন অবশ্যই আছে।
গত তিরিশ বছরের অভিজ্ঞতায় অনেক পরিবর্তন দেখলাম। প্রাইভেট সেক্টরের ফিক্সড ডিপোজিটই ধরুন প্রথমে। কর্পোরেট সংস্থা, এবং পরে NBFC, তো অনেক এল-গেল। ইন্টারেস্ট রেট সাইকেলও বদল হল; আজ অনেক টানাপোড়েন হওয়ার পর ডিপোজিট মার্কেটে চরিত্র পাল্টেছে আমূলভাবে। আবার দেখুন মানি মার্কেটের ‘জমা-খর্চি’ সংস্থাগুলি। হয়তো আপনার মনে আছে এগুলির কথা। এদের ভবিষ্যত ছিল অনিশ্চিত, এবং পতন ছিল প্রায় অনিবার্য। ঠিক তাই-ই হল, কিন্তু তার সঙ্গে দেশের দ্বিতীয় প্রাচীন স্টক এক্সচেঞ্জও অস্তমিত হল। বুঝতেই পারছেন আমি ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের কথা বলছি।
[আরও পড়ুন: স্বচ্ছতা ও লিকুইডিটির আশ্বাস, জেনে নিন UTI-র সর্বশেষ প্রোডাক্টের বিশেষত্ব]
আমার বক্তব্য খুব পরিষ্কার। অবাঞ্ছিত এবং অসাধু অপারেটররা সব সময়ই সতর্ক এবং বড় মাপের নেটওয়ার্ক চালাতে রাজি। এভাবেই সাধারণ মানুষের কাছাকাছি চলে আসতে চায় তারা। প্ল্যানটেশন কোম্পানিদের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? টিক, রাবার ও অন্যান্য বিষয় মারফত ব্যবসা চালানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছিল এরা। আমি কিন্তু খুব বেশিদিনের কথা বলছি না। অসাধু ব্যক্তিরা ইনভেস্টরদের কাছে পৌঁছেছিল তাদের সম্যক জ্ঞানের অভাবের ভিত্তিতে। তাছাড়া মানুষের মনে লোভও কাজ করে পূর্ণমাত্রায়, তখন ‘র্যাশনাল থিঙ্কিং’ তথা যুক্তির নিরিখে বিচার করা বন্ধ হয়ে যায় আপনা থেকেই।
হালে আমরা দেখেছি বিটকয়েন ইত্যাদির ক্ষেত্রে। ক্রিপ্টোতে বহু ধরনের লগ্নি এসেছে, অনেক সংস্থাই তো এই ব্যবসায় পা রেখেছেন। টেকনোলজির দোহাই দিয়ে তো বড় প্রফিটের মায়াজাল ছড়ানো হয়েছে। হয়তো একদিন প্রফিট ঠিকই অাসবে ধারাবাহিকভাবে। তবে সাধারণ ইনভেস্টররা যেন প্রযুক্তির চটক দেখে ভুলে না যান। ক্রিপ্টো যে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে তা ভাল করে বোঝার চেষ্টা করুন। নচেৎ স্বল্প-জ্ঞানের ভিত্তিতে বৃহৎ লগ্নির ভুল আপনিও হয়তো করে ফেলবেন। যা বোঝেন না, তার থেকে দূরে থাকাই উচিত। আপনার টাকা যেন আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কোনও সম্ভাব্য অসাধু ব্যক্তি যেন কখনওই তার দিক নির্দেশনার দায়িত্বে না থাকে।
(চিফ অ্যানালিস্ট, myplexus.com)