shono
Advertisement
Personal Finance

‘ভোলাটিলিটি’তে ভুলবেন না! লগ্নির আগে জেনে নিন খুঁটিনাটি

সম্পদের মূল্যে তারতম্যের মাত্রা সুচিত করে ভোলাটিলিটি।
Published By: Suchinta Pal ChowdhuryPosted: 03:19 PM Jan 08, 2025Updated: 03:20 PM Jan 08, 2025

ভোলাটিলিটি তথা বাজারের টালমাটাল পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। মনে রাখতে হবে, এটি বাজার অর্থনীতির অত‌্যন্ত স্বাভাবিক একটি পরিস্থিতি। কোনও সমস‌্যা নয়। বরং ইক্যুইটি মার্কেটে এই পরিস্থিতিকে পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের সূচনা হিসাবে গণ‌্য করা হয়। জানাচ্ছেন লেখক মিউচুয়াল ফান্ড ডিস্ট্রিবিউটর রমাকান্ত মহাওয়াড়

Advertisement

টালমাটাল পরিস্থিতি ইক্যুইটি মার্কেটের বৈশিষ্ট‌্য, সমস‌্যার কারণ নয়। ইক্যুইটি মার্কেটের পরিসরে বাজারের অস্থিরতা (ভোলাটিলিটি) তথা টালমাটাল পরিস্থিতিকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আতঙ্কের চোখে দেখা হয়। ঊর্ধ্বগামী হোক বা নিম্নগামী–লগ্নিকারীরা আর্থিক মূল্যের দ্রুত পরিবর্তনে প্রায়শই আবেগের বশবর্তী হয়ে হঠকারী পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেন। হয় বিচার-বিমর্ষ না করেই দ্রুত কিছু বেচে দিলেন বা দুম করে কিছু কিনে ফেললেন। কিন্তু বাজারের অস্থিরতা সেই অর্থে সমস‌্যার কোনও কারণ নয়, যেমনটা অনেকে ভেবে থাকেন। বরং এটি ইক্যুইটি মার্কেটেরই এমন একটি বৈশিষ্ট‌্য যা বিকাশ, সম্পদ সৃষ্টি এবং ‘ভ‌্যালু ইনভেস্টিং’-এর প্রভূত সুযোগ তৈরি করে। যদি ‘ভোলাটিলিটি’র সঠিক অর্থ আমরা বুঝতে পারি এবং একে বিনিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অঙ্গ হিসাবেই গ্রহণ করে নিতে পারি, তাহলে আমরা পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদি সাফল‌্য পেতে পারি।

ভোলাটিলিটি কী?
নির্দিষ্ট সময়ের প্রেক্ষিতে কোনও সম্পদের মূল্যে তারতম্যের মাত্রা সুচিত করে ভোলাটিলিটি। ইক্যুইটি মার্কেটে ভোলাটিলিটিকে আর্থিক মূল্যের ওঠানামার মাপকাঠি হিসাবে ধরা হয়, যা বিচার করে ইকোনমিক ডেটা থেকে শুরু করে লগ্নিকারীর আবেগ, সংস্থার পারফরম‌্যান্স প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা মেলে। ‘ভোলাটিলিটি’ যদি স্বল্পমেয়াদি হয়, তবে তা সাময়িক অনিশ্চয়তা তৈরি করে বটে, তবে একইসঙ্গে তা বাজারের পরিস্থিতি, লিকুইডিটি এবং মূল‌্য পরিকাঠামোর বাস্তব ছবিও তুলে ধরে।

এমনিতে বাজারের পরিস্থিতি কিছুটা হলেও অস্থির থাকেই কারণ সেখানে একক নয়, লগ্নিকারী-গ্রাহক মিলিয়ে বহুমুখী মতামতের ভিড় যেমন থাকে তেমনই থাকে দুপক্ষের তরফে প্রত‌্যাশা পূরণের চাপও। মূলে‌্যর তারতম‌্য হয় মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার, ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ কিংবা কর্পোরেট উপার্জনের নিরিখে। আবার এরই বাড়া-কমার মাত্রার উপর নির্ভর করে ‘ভোলাটিলিটি’র মেয়াদ কিংবা তীব্রতা। মনে রাখতে হবে, ইক্যুইটি মার্কেটের অগ্রগতি সর্বদাই ভবিষ‌্যৎমুখী।

‘ভোলাটিলিটি’ তথা বাজারের অস্থির স্থিতি কেন কোনও সমস‌্যা নয়?
অনেকেই মনে করেন, বাজারের টলোমলো অবস্থা লগ্নিকারীদের কাছে বড়সড় সমস‌্যা। কিন্তু এই ধারণা সত্যি নয়। এটি অত‌্যন্ত স্বাভাবিক একটি পরিস্থিতি। কেন? ব‌্যাখ‌্যা রইল নিচে।
১. উদ্ভাবনে জোর এবং দক্ষতা: ভোলাটিলিটি থাকলে ইক্যুইটি মার্কেট যে কতটা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে, তা বোঝা যায়। অন‌্যথায় কর্পোরেট পারফরম‌্যান্সে বদল এলে বাজারের উপর তার কতটা কী প্রভাব পড়ছে বা সেই অনুযায়ী বাজার কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তা বোঝা মুশকিল।

২. দীর্ঘমেয়াদি লগ্নির সুযোগ: যারা দীর্ঘমেয়াদী স্তরের লগ্নিতে ইচ্ছুক, তাদের জন‌্য ভোলাটিলিটি সুযোগ এনে দেয়। লগ্নিকারীরা এক্ষেত্রে ভালো কোয়ালিটির স্টক, স্বল্প মূল্যে কিনতে পারেন। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, এই পর্যায়ে যারা ডিসিপ্লিনডভাবে এগিয়েছেন, তারাই শেষে গিয়ে পুরস্কৃত হয়েছেন। ভোলাটিলিটি যেমন একাধারে ঝুঁকিময় পরিবেশ ডেকে আনে, তেমনই সুযোগেরও সন্ধান দেয়।

৩. ‘রিস্ক অ‌্যান্ড রিওয়ার্ড’: অন‌্যান‌্য অ‌্যাসেট ক্লাসের তুলনায় ইক্যুইটিটি মার্কেটে রিটার্নের অঙ্ক বেশি। বন্ড বা ফিক্সড ইনকাম ইনস্ট্রুমেন্টসে এমন নয়। কারণ এক্ষেত্রে ঝুঁকি জড়িয়ে। মূল্যের তারতম‌্য না ঘটলে, লগ্নিকারীদের পুরস্কৃত করার স্বার্থে কোনও রিস্ক প্রিমিয়াম থাকে না। কাজেই যদি দীর্ঘমেয়াদি রিটার্ন আশা করেন, তাহলে ভোলাটিলিটির অস্তিত্ত্ব প্রয়োজন।

৪. ভোলাটিলিটি ক্ষণস্থায়ী: ভোলাটিলিটির মেয়াদ সীমিত সময়ের জন‌্যই থাকে। তবে এর সঙ্গে জড়িত বৃহত্তর আর্থিক বিকাশ এবং কর্পোরেট আর্নিংসের প্রভাব যা দীর্ঘমেয়াদি সুফল ডেকে আনে–এড়িয়ে গেলে চলবে না। ইতিহাস ঘাঁটলেও একই ছবি দেখা যাবে। লগ্নিকারীরা এক্ষেত্রে কম্পাউন্ডিং গ্রোথের সুবাদে দীর্ঘমেয়াদি লাভ সুনিশ্চিত করেছেন।
সঠিক চিন্তাধারা অনুসরণ করুন

ভোলাটিলিটির প্রেক্ষিতে এগোতে হলে লগ্নিকারীদের উদ্দেশ‌্য দীর্ঘমেয়াদি হতেই হবে। পাশাপাশি তাঁদের পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন করতে হবে এবং স্বল্পমেয়াদি লাভের আশা ছেড়ে মৌলিক ফলাফলের দিকে নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে তাঁরা সিপ (সিস্টেম‌্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল‌্যান) এর সুবিধা নিতে পারেন।

সব শেষে বলি, ভোলাটিলিটি ইক্যুইটি মার্কেটের অবিচ্ছেদ‌্য অঙ্গ। এর অস্তিত্ত্বই জানান দেয় বাজার কতটা গতিশীল বা নতুন আগমনের প্রেক্ষিতে বাজারের গতিবিধিতে আদৌ কোনও প্রভাব পড়ছে কি না। কাজেই একে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসাবেই দেখা উচিত লগ্নিকারীদের, কোনও সমস‌্যা হিসাবে নয়। ধৈর্য‌্যশীল হলে, অনুশাসন মেনে চললে এবং সঠিক পরিকল্পনামাফিক এগোলে অচিরেই ইক্যুইটি মার্কেট থেকে এর সুফল পেতে পারবেন লগ্নিকারীরা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • টালমাটাল পরিস্থিতি ইক্যুইটি মার্কেটের বৈশিষ্ট‌্য, সমস‌্যার কারণ নয়।
  • নির্দিষ্ট সময়ের প্রেক্ষিতে কোনও সম্পদের মূল্যে তারতম্যের মাত্রা সুচিত করে ভোলাটিলিটি।
  • অনেকেই মনে করেন, বাজারের টলোমলো অবস্থা লগ্নিকারীদের কাছে বড়সড় সমস‌্যা।
Advertisement