সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের (Ukraine) এই ‘বিপরীত ছবি’। যে কেউ বুঝবে, ছবিতে রয়েছে প্রেমের গল্প। অসহায় প্রেম! ইউক্রেন তো এখন শীতল মৃত্যুপুরী। সেই মৃত্যুপুরীর এক মেট্রো স্টেশনে শেষবার দেখা করতে এসেছেন ওঁরা! উষ্ণ ভালবাসার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন আন্দ্রেয়ি, প্রিয় প্রেমের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন ইলিনা। মনে সংশয়, এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো! যুদ্ধ যে বেঁধে গিয়েছে!
কল্পকথা না, রাশিয়ার (Russia) হামলার পর ইউক্রেন বাস্তবেই মৃত্যুপুরী। পুতিনের বাহিনীর লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণে প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। পালটা মার দিচ্ছে ইউক্রেনের সেনাও। এখনও পর্যন্ত সরকারি হিসেবে মৃত্যু হয়েছে ৩০০ জনের। মৃতের আসল সংখ্যা না জানি কত! সে দেশের ২৩টি প্রদেশে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। যুদ্ধবিমান থেকে ফেলা হচ্ছে ভয়ঙ্কর বোমা। যে আকাশে পাখি ওড়ে, সেই অনন্ত আকাশ ঝলসে যাচ্ছে বারুদ-আগুনে। আজাকিভ বন্দরে হামলা হয়েছে। খারকভ শহর এবং আজাকিভ বন্দরে লাগাতার বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে ১০ জন নিরীহ নাগরিকের। ভেঙে পড়ছে একের পর এক বসতি, বাড়িঘর। মানুষের তৈরি অস্ত্রে মরছে মানুষ! একজন মানুষের মৃত্যু মানে কতগুলি সম্পর্কের মৃত্যু? কত না বলা কথা, স্বপ্ন, প্রেম! ওঁরা শেষবার দেখা করতে এসেছিলেন কিয়েভ শহরের ওই মেট্রো স্টেশনে! পিছনে থমকে যাওয়া বিষ-নীল ট্রেন!
[আরও পড়ুন: ইউক্রেনের পরিস্থিতি ‘ঘোর অনিশ্চিত’, নাগরিকদের জন্য বিশেষ নির্দেশিকা জারি ভারতীয় দূতাবাসের]
ছবিতে এমনভাবে প্রেমিকা ইলিনাকে ছুঁয়ে আছেন প্রেমিক আন্দ্রেয়ি, মনে হচ্ছে মেট্রো স্টেশন নয়, জীবনের শেষ স্টেশন দাঁড়িয়ে ওঁরা। আন্দ্রেয়ি আর ইলিনার চোখে অনন্ত চাহুনি! কিন্তু এ তো অন্যায়! এত তাড়াতাড়ি ওঁদের প্রেমের মৃত্যু হবে কেন!
বছর দেড়েক আগেই তো আলাপ। দু’জনেই কিয়েভের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। গ্রন্থাগারে হয় আলাপ। ইলিনা বেশি কথা বলে, আন্দ্রেয়ি অন্তর্মুখী। গ্রন্থাগারেই একদিন খুব চেঁচিয়ে কথা বলে ইলিনা। আপত্তি করে আন্দ্রেয়ি। তাতেই ঝগড়া লাগিয়ে দেয় ইলিনা। মেয়েটা আন্দ্রেয়িকে দারুণ বকেছিল সেদিন। ছুটে এসে ঝামেলা থামান গ্রন্থাগারের ম্যানেজার। পরদিন বিকেলে যখন বরফ পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ ইলিনার পছন্দের রঙের স্কার্টের মতো সাদা হয়ে গিয়েছে। তখন ক্যান্টিনে কফি খাচ্ছিল আন্দ্রেয়ি, মুখে সিগার। সেখানে হুড়মুড় করে ঢুকে ইলিনা বলে ‘সরি’। ওমনি দুম করে সুন্দরী ইলিনার প্রেমে পড়ে গেল ছেলেটা!
[আরও পড়ুন: রুশ চপার থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বোমা, ইউক্রেনে নিহত তিনশোরও বেশি]
কিয়েভের এই মেট্রো স্টেশনেই তার শেষ? আর কি দেখা হবে না? অথচ অনেক কিছু বলার আছে আন্দ্রেয়ির। ইলিনার নরম বুকেও ঘুরছে হাজার কথা। বিয়ে করার পর সংসারের অনেক ঝামেলা থাকবে। বিয়ের আগেভাগে তাই ওঁরা যেন কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে ভেবেছিল! হানিমুনে ভারতে আসার শখ ইলিনার। তাজমহল খুব পছন্দ। আন্দ্রেয়ি বলেছিল, সময় মতো চাকরি জুটলেই হবে ভারত অভিযান।
কিন্তু চারপাশে মৃত্যুপুরী। স্তব্ধ মেট্রোর সামনে থমকে গিয়েছে এক তরুণ ও এক তরুণীর প্রেম, জীবন! বরাবরের মতো যুদ্ধের ধমকে পিছু হঠছে ভালবাসা! প্রশ্ন হল, মহাযুদ্ধের শেষে বাঁচবে ইলিনা? বেঁচে থাকবে আন্দ্রেয়ি? কী হবে ওঁদের প্রেমের? যুদ্ধবাজরা কি এর উত্তর জানেন? তাঁদের কাছে কি পৌঁছেছে এই নীরব প্রেমের গল্প? শুধু যুদ্ধবাজরা কেন, গোটা পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছেও প্রশ্ন রাখল, আন্দ্রেয়ি-ইলিনার নীরব ছবি!
(যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইউক্রেনের একটি মেট্রো স্টেশনের যে যুগলের ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাঁদের নাম জানা যায়নি, এখানে তাঁদের জীবনের যে সংক্ষিপ্ত গল্প লেখা হল তাও কল্পনাপ্রসূত। এটুকু স্বাধীনতা নেওয়া হল, কারণ যুদ্ধের কারণে প্রেম তথা সম্পর্কের মৃত্যু- সেটাই এই ছবির প্রকৃত বিষয়। কবি বলেছেন, “কত হাজার মরলে তবে মানবে তুমি শেষে, বড্ড বেশি মানুষ গেছে বানের জলে ভেসে”, আদতে এই প্রশ্নই তুলল ইউক্রেনের মেট্রো স্টেশনের মন কেমন করা ছবি।)
শীর্ষ ছবি: সৌজন্যে AFP।