গৌতম ব্রহ্ম: কোভিডের ভয়ে গোটা বিশ্ব তখন থরহরিকম্প। কোন ওষুধে কাবু হবে অতিমারী কেউ জানে না। শুধু চলছিল উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা। ওই পরিস্থিতিতে কোভিডজয়ীদের প্লাজমা সংগ্রহ করে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ট্রায়াল শুরু করে একদল চিকিৎসক-গবেষক। ডা. যোগিরাজ রায়, ডা. প্রসূন ভট্টাচার্য, ডা. দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়, ডা. শেখররঞ্জন পাল, ডা. সন্দীপ পাল প্রমুখ। অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ সেই প্লাজমা দেওয়া হয় ৪০ জন কোভিড রোগীকে। সেই সাহসী পদক্ষেপকে মান্যতা দিল বিশ্ববন্দিত নেচার গোষ্ঠী। প্লাজমা থেরাপির (Plasma Therapy) ফলাফল প্রকাশিত হল ‘নেচার কমিউনিকেশন’ পত্রিকায়। যাকে সংক্রামক ব্যাধির গবেষণায় মাইলফলক বলেই মনে করছে চিকিৎসকমহল।
২০২০ সালের মে মাস। অতিমারী শুরুর মাসখানেকের মধ্যেই কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা দিয়ে অসুস্থদের সুস্থ করে তোলার ট্রায়াল শুরু হয়। যে কোনও নতুন সংক্রামক ব্যাধিতেই এটা জরুরি। কলকাতাতেও কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা ‘কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ’-এর উদ্যোগে আর অর্থানুকূল্যে ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজি’, আইডি হাসপাতাল আর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ একসঙ্গে এই ট্রায়াল শুরু করে।
[আরও পড়ুন: রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর তৈরিতে উদ্যোগী নবান্ন, কলকাতার আশপাশে শুরু জমির খোঁজ]
ডা. দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “রোগীদের একটা ক্ষুদ্র অংশ লাভবান হলেও সংখ্যাবিজ্ঞানের দিক থেকে আমরা জানতে পারি, কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা দিয়ে উল্লেখযোগ্য লাভ হচ্ছে না। কিন্তু রোগটির প্যাথোফিজিওলজি নিয়ে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য হাতে আসে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এই ট্রায়ালের সুফল পাওয়ার চেষ্টা শুরু করছে বিজ্ঞানীমহল।”
প্লাজমার লাভজনক থেরাপির অংশটি আরেকটি পেপারে প্রকাশিত হবে। এছাড়া একটি আন্তর্জাতিক কাজেও বঙ্গজ ট্রায়ালের তথ্য দেওয়া হয়েছিল। অতিমারী আবহে নানা অসুবিধে সত্ত্বেও দিনে প্রায় ১২-১৬ ঘণ্টা কাজ করে এই ধরনের একটা কাজ কলকাতায় বসে আইডি হাসপাতাল থেকে করা গিয়েছে, এবং একটা পৃথিবীবিখ্যাত জার্নালে তা প্রকাশিত হয়েছে এটা অবশ্যই উৎসাহজনক। এছাড়া শহরের বিজ্ঞানী আর চিকিৎসকরা একযোগে একটা আন্তর্জাতিক স্তরের কাজ করলেন, সেটা ভারতীয় গবেষণায় খুব উল্লেখযোগ্য। এমনটাই জানালেন যোগিরাজ রায়।