ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: ডেঙ্গু (Dengue) নয়। নয় ম্যালেরিয়া! এমনকী, স্ক্রাব টাইফাসের মতো কীট দংশনও হয়নি। স্রেফ ভাইরাল ফিভারে হু হু করে কমছে প্লেটলেট। কমছে হিমোগ্লোবিন! ব্যাপারটা একটু খোলসা করে বলা যাক। আশ্বিন, কিন্তু ভরা বর্ষা। ভরপুর ডেঙ্গুর মরশুম। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। বছর ষোলোর বাদল রায় (নাম পরিবর্তিত) টানা তিনদিন জ্বরে কাহিল। জ্বর না কমায় ডেঙ্গু পরীক্ষা হল। রিপোর্ট নেগেটিভ!
ফের পরীক্ষার নিদান দিলেন ডাক্তারবাবু। কিন্তু এবারও নেগেটিভ! এদিকে জ্বরও কমছে না। একের পর এক ম্যালেরিয়া, স্ক্রাব টাইফাস, টাইফয়েড সব টেস্ট হল। বিস্ময়কর ব্যাপার, সব রির্পোট নেগেটিভ! শেষ পর্যন্ত আর কোনও ঝুঁকি না নিয়ে এম আর বাঙুরে পাঠানো হল বাদলকে। দেখা গেল রোগীর প্লেটলেট ২০ হাজার। হিমোগ্লোবিন ৬। হাসপাতালের ডাক্তারবাবু স্রেফ নাড়ি টিপে গতানুগতিক প্যারাসিটামল আর পুষ্টিকর খাবারের পরামর্শ দিলেন। ক্রমশ রোগী সুস্থ হয়ে উঠল। আর ক’দিন পর বাড়ি ফিরবে বাদল।
স্বাস্থ্য ভবনের তথ্য বলছে, বেখাপ্পা বর্ষায় বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। এম আর বাঙুরের মতো আর জি কর, বি সি রায় শিশু হাসপাতাল এমনকী, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালেও এমন রোগী ভর্তি হয়েছে গত তিন-চার দিনে। বি সি রায় শিশু হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. দিলীপ পাল বলেন, ‘‘যে কোনও ভাইরাস সংক্রমণেই প্লেটলেট কমতে পারে। হিমোগ্লোবিন কমে। তবে প্রথাগত নিয়মে আমরা বাড়াবাড়ি না হলে প্লেটলেট বা হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করি না। কিন্তু যেভাবে ক্রমশ বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে, তাতে তিন দিনের বেশি জ্বর (Viral Fever) হলে প্লেটলেট আর হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার।’’ একই অভিমত মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি অ্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. বিপ্লবেন্দু তালুকদারেরও। বিপ্লবেন্দুর কথায়, ‘‘ভাইরাস সংক্রমণ হলে হিমোগ্লোবিন ও প্লেটলেট কমবেই। এটাই স্বাভাবিক।’’
[আরও পড়ুন: মা ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা, কলকাতার ৪৫ টি জায়গায় সিসিটিভির সফটওয়্যার আপডেট]
চিকিৎসকদের মতে সাধারণ জ্বরেও প্লেটলেট ও হিমোগ্লোবিন কমার মূলত চারটি কারণ। প্রথমত, যে কোষগুলি প্লেটলেট উৎপাদন করে যে কোনও ভাইরাস প্রথমেই সেগুলিকে বাধা দেয়। কিন্তু শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রথমে ব্যাপক বাধা দেয়। ফলে রক্তবাহী নালিতে শুরু হয় সাইটোকাইন স্ট্রম। প্লেটলেট কমার এটি অন্যতম কারণ। দ্বিতীয়ত, ভাইরাস সংক্রমণের জন্য রক্তবাহী নালি থেকে প্লাজমার সঙ্গে প্লেটলেটও বেরিয়ে যায়। বিপ্লবেন্দুর কথায়, ‘‘অনেক সময় রক্তক্ষরণ না হলেও এই সময়ে রোগীর বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জার ক্ষতি হয়। এই সময়ে ফ্যাগোসাইটিস পদ্ধতিতে শ্বেত রক্তকণিকা পাশের শ্বেত রক্ত কণিকাকে খেতে শুরু করে। এই অবস্থাকে ‘ম্যাক্রোফেজ অ্যাক্টিভেশন সিনড্রোম’ বলা হয়। রক্তপরীক্ষায় এই ঘটনা ধরা পড়লেও কিন্তু প্লেটলেট দেওয়া উচিত নয়। এমনকী, হিমোগ্লোবিনেরও দরকার নেই। স্বাভাবিক নিয়মেই ক্ষতিপূরণ হয়।’’