সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিজেপির বাংলা জয় করতে মরিয়া। তাদের একের পর এক কার্যকলাপে তা স্পষ্ট। ‘মন কি বাতের’ পর এবার বারাণসীর মঞ্চেও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এল বাংলার কথা। সেখান থেকে নাম না করেই আক্রমণ করলেন তৃণমূলকে। কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইনের বিরুদ্ধে উত্তাল ভারত। আর সেই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ কৃষকদের বার্তা দিতে বারাণসীর সভামঞ্চকেই বেছে নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)।
সোমবার সেই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, “একটি রাজ্য এখনও কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্প চালু করেনি। মোদির নাম হবে, তাই একটি রাজ্য কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু করেনি। আমরা ক্ষমতায় এলে কৃষকদের কাছে টাকা পৌঁছে দেব।” নাম না করলেও মোদির নিশানায় যে পশ্চিমবঙ্গ এবং রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) সরকার তা স্পষ্ট। কারণ, একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই পিএম কিষাণ যোজনা চালু করা হয়নি। সেক্ষেত্রে রাজ্যের বক্তব্য, রাজ্যেরই অনুরূপ একটি প্রকল্প রয়েছে।
[আরও পড়ুন : শিব সেনায় যোগ দিচ্ছেন না, জল্পনা উড়িয়ে জানালেন উর্মিলা মাতন্ডকর]
দিল্লির সীমানা ঘেঁষে ক্রমশ ব্যাপক আকার নিচ্ছে কৃষক বিক্ষোভ। এই আবহে নয়া কৃষি আইনের পক্ষে সোমবার আরও সুর চড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ইউপিএ সরকারের সঙ্গে তুলনা টেনে তিনি বলেন, “আগে ঋণ মকুবের প্যাকেজ ঘোষণা হলেও তা ছোট কৃষকরা পেতেন না। সে সময় কৃষকদের প্রতারণা করা হত।” তাঁর দাবি, “নয়া আইনে নতুন বিকল্পের হদিশ দেওয়া আছে। কৃষি মাণ্ডি সরানোর কোনও কথা নতুন আইনে নেই, বরং সেগুলির আধুনিকীকরণ হবে এবং কৃষকরা আরও বেশি দামে ফসল বিক্রির স্বাধীনতা পাবেন।”
এই সূত্রেই প্রধানমন্ত্রী মোদি সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের নাম না করে বাংলার মতো যে রাজ্যগুলি ‘পিএম কিষাণ সম্মান নিধি’র (PM Kishan Sanman Nidhi) মতো প্রকল্প চালু করেনি, তাদেরও আক্রমণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা রাজ্য এমন মিথ্যা বলেছিল যে কৃষকরাই বলে বসেছিলেন, আমাদের টাকা চাই না। ফলে ওই রাজ্যে ওই প্রকল্প কার্যকর হয়নি। তবে নির্বাচনে আমাদের সরকার তৈরি হলে ওখানকার কৃষকদের ওই প্রকল্পের এক্তিয়ারে আনবই।” উল্লেখ্য, কেন্দ্রের ‘পিএম কিষান সম্মান নিধি’ প্রকল্পে কৃষককে বছরে ছ’হাজার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রায় একই রকম প্রকল্প চালু করেছে রাজ্যে সরকারও। ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের বছরে পাঁচ হাজার টাকা সাহায্যের ব্যবস্থা আছে এই প্রকল্পে।
[আরও পড়ুন : কোভিড সংক্রমণ রুখতে কেন্দ্রের নয়া নির্দেশিকা, বন্ধ বিশেষ এলাকার সমস্ত বাজার]
সম্প্রতি রাজ্যে কেন্দ্রের কিষান সম্মান নিধি প্রকল্প চালু না হওয়ায় সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। এরপরই নবান্নের তরফে জানানো হয়, ৯ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, রাজ্য সরকারের কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু করতে কোনও অসুবিধা নেই। চিঠিতে তিনি লেখেন, চাষিদের জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই কৃষকবন্ধু প্রকল্প চালু করেছে। তাতে কৃষকদের বছরে পাঁচ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। ১৮ থেকে ৬০ বছয় বয়সী কৃষক বা ক্ষেতমজুর মারা গেলে এককালীন ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয় মৃতের পরিবারকে। এছাড়াও শস্যবিমা যোজনারও ১০০ শতাংশ টাকা রাজ্যই দেয়। এরপরও কেন্দ্রের কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্প রাজ্যে চালু করতে তাঁর কোনও অসুবিধা নেই। তবে সেক্ষেত্রে কেন্দ্রকে প্রকল্পের গোটা টাকাটা রাজ্যকে পাঠাতে হবে। রাজ্য তার মেশিনারি দিয়ে সেই টাকা উপভোক্তাদের হাতে পৌঁছে দেবে।
উল্লেখ্য, আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মোদি। রবিবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে ঋষি অরবিন্দ ঘোষ এবং উনবিংশ শতাব্দীর কবি মনোমোহন বসুর উল্লেখ করেন। এদিন, বারাণসীর সভায় ভাষণে পরোক্ষে বাংলার নির্বাচন প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।