সুকুমার সরকার, ঢাকা: রোহিঙ্গা শিবিরে ক্রমে বাড়ছে জেহাদিদের গতিবিধি। বিগত দিনে একের পর এক রোহিঙ্গা নেতা খুন ও অপহরণের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সরকার। মায়ানমার থেকে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে কার্যত বিপাকে পড়েছে ঢাকা। এহেন পরিস্থিতি নিয়ে এবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রসংঘে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসবাদীদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে তোপ দেগেছেন হাসিনা। তিনি বলেন, “সম্পূর্ণ মানবিক কারণে আমরা অস্থায়ীভাবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। গত মাসে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচূত হওয়ার ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন আমাদের জন্য সত্যিই অসহনীয় হয়ে উঠেছে।” নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘের সদর দপ্তরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে সাধারণ সভার (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনে ভাষণ দেন হাসিনা। তিনি বলেন, “আমি মায়ানমার থেকে বাস্তুচূত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। গত মাসে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচূত হওয়ার ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে। সম্পূর্ণ মানবিক কারণে আমরা অস্থায়ীভাবে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু পরিস্থিতি এখন আমাদের জন্য সত্যিই অসহনীয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।”
রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনও পদক্ষেপই করছে না মায়ানমার। এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক হতাশার জন্ম দিয়েছে। এই পরিস্থিতি সম্ভাব্য মৌলবাদকে ইন্ধন দিতে পারে। এই অবস্থা চলতে থাকলে এটি আমাদের আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। বাস্তুচূত রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মায়ানমারে ফিরে যেতে চায় এবং সেখানে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে আগ্রহী। আসুন আমরা এই নিঃস্ব মানুষের জন্য তাদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করি।” হাসিনা আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দক্ষতা ও বৈধতা নিয়ে মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। এর ফলে একটা শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে অর্জিত সাফল্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।”
[আরও পড়ুন: দুর্গাপুজোর আগে বাংলাদেশে ফের প্রতিমা ভাঙচুর, পুলিশে অভিযোগ দায়ের]
উল্লেখ্য, মায়ানমারের (Myanmar) জঙ্গি সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি তথা আরসা-কে মদত দিচ্ছে পাকিস্তানের আইএসআই। আরসা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীটির সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টালিজেন্স ও তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের মতো সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোর যোগ দীর্ঘদিনের। ২০১৭ সালের আগস্টে আরসা মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর পর থেকেই সেখানে আরসার বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু হয়। এই জেহাদি গোষ্ঠীগুলোই সক্রিয় বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরে।