শুভময় মণ্ডল: আদৌ ভিড় হবে তো সভায়? একুশে জুলাইয়ের তৃণমূলের শহিদ দিবসের ২৪ ঘণ্টা আগে এই প্রশ্নই ঘুরছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, গতবারের ভিড়কেও ছাপিয়ে যাবে এবারের একুশের সভা। কিন্তু বাংলার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সভায় ভিড় হওয়া নিয়ে সন্দিহান ওয়াকিবহাল মহল। আরও একটি বিষয় নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। একুশের মঞ্চে কি দেখা যাবে রাজনৈতিক রণকৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোরকে? মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নিতে দেখা যাবে পিকে-কে (এই নামেই রাজনৈতিক মহলে সুবিদিত প্রশান্ত কিশোর)? জল্পনার পারদ চড়ছে একুশের সভার আগে।
এবারের ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ পড়ছে রবিবার। ছুটির দিন হওয়ায় ধর্মতলা সংলগ্ন রাস্তায় পথচলতি মানুষের ভিড় কিছুটা হলেও কম থাকবে বলে অনেকেরই ধারণা। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব সেকথা মুখে না বললেও ওয়াকিবহাল। সে কারণে সংগঠিত ভিড়ের উপরেই শাসকদলকে অনেকটাই ভরসা করতে হতে পারে বলে অনেকের অভিমত। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘গত বারের রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে এ বার। আগামী দিনের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ শুনতেই মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আসবেন।’’ লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার পর একুশের সভা হল তৃণমূলের বড় পরীক্ষা। সভায় ভিড়ের উপর দলের অনেক কিছুই নির্ভর করছে। নেতা-নেত্রীরা লোক আনার কোনও কসুর রাখছেন না, কিন্তু যেভাবে জেলায় জেলায় শাসকদলের সংগঠনে ভাঙন ধরিয়েছে বিজেপি তাতে আশঙ্কার মেঘ দেখছে নেতৃত্ব। সমাবেশের ২৪ ঘণ্টা আগেই মঞ্চ তৈরির কাজ ৯০ শতাংশ শেষ। প্রতিবারের মতো ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে ত্রিস্তরীয় মঞ্চ তৈরি হয়েছে। সেই মঞ্চেই থাকবেন শাসকদলের মন্ত্রী-বিধায়ক ও শহিদ পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু মূল মঞ্চে ওঠার সিঁড়ির পাশে একটি ছোট্ট ঘর তৈরি করা হয়েছে। সেই ঘর নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা। এই ঘরেই কি থাকবেন প্রশান্ত কিশোর? ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে গুঞ্জন। যদিও এবিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন শীর্ষ নেতারা।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই দলে দলে শহরে ভিড় জমাচ্ছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। লোকসভায় উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ ফলাফল ও বন্যার প্রকোপ হলেও কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দুই দিনাজপুর, মালদা, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং থেকে প্রচুর তৃণমূল কর্মী এসে গিয়েছেন কলকাতায়। তাঁদের থাকার জন্য সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক, কসবার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, আলিপুরের উত্তীর্ণ, মিলনমেলা প্রাঙ্গণ, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে অস্থায়ী বন্দোবস্ত করা হয়েছে। হয়েছে খাওয়া-দাওয়ার ঢালাও আয়োজন। ডিম-ভাত, সবজি-সহযোগে আহারের ব্যবস্থা করা করা হয়েছে। আট জোড়া ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে দূর-দূরান্ত কর্মী-সমর্থকদের আসার জন্য। শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে জেলা নেতৃত্বকে বাস ভাড়া করে সমর্থকদের আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস ভাড়া করার ক্ষেত্রেও কমতি নজরে পড়েছে। মোটের উপর সব জেলাতেই গতবারের তুলনায় কম বাস ভাড়া করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। কারণ, হিসাবে অর্থের জোগানকে বাধা বলে জানাচ্ছেন একাধিক নেতা-নেত্রী। সবমিলিয়ে নেতৃত্ব মুখে যাই-ই বলুক, স্বর্তঃফূর্তভাবে সভায় যোগদানের উদ্দীপনায় যে গতবারের তুলনায় ভাটা পড়েছে সেকথা অনস্বীকার্য।
[আরও পড়ুন: একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি তুঙ্গে, দল বেঁধে কলকাতায় ঢুকছেন তৃণমূল কর্মীরা]
এই পরিস্থিতিতে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একুশের মঞ্চ থেকে কী বার্তা দেন তা জানতে মুখিয়ে রাজনৈতিক মহল। এবারের স্লোগান, গণতন্ত্র ফিরিয়ে দাও, মেশিন নয় ব্যালট ফেরাও। অনেকেরই মত, পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোরের নির্দেশমতোই লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির ধাক্কা থেকে দলীয় কর্মীদের বের করার দাওয়াই দেবেন মমতা। আগামী বছরই রাজ্যে পুরভোট। অনেকেরই ধারণা, এবারের পুরভোট তৃণমূল বনাম বিজেপির দ্বিমুখী লড়াই হতে চলেছে। তাই পুরসভাগুলির দখল রাখতে এখন থেকেই কোমর বেঁধে নামতে হবে শাসকদলকে। তার জন্য এবারের একুশের সমাবেশ তৃণমূলের সাংগঠনিক বড় পরীক্ষা।
[আরও পড়ুন: ‘বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ছুৎমার্গ নেই’, এবার তৃণমূলকে জোট বার্তা সোমেন মিত্রর]
The post একুশের মঞ্চে থাকতে পারেন প্রশান্ত কিশোর! জল্পনা তুঙ্গে রাজনৈতিক মহলে appeared first on Sangbad Pratidin.