উগ্রচণ্ডী হলেই বিপজ্জনক হতে পারে পরিস্থিতি। শরীর-মন দু’য়েরই ভীষণ ক্ষতি করে রাগ। মাথা ঠান্ডা রাখার উপায় বললেন ফর্টিস হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সঞ্জয় গর্গ। শুনলেন প্রীতিকা দত্ত।
চিত্র ১ – নয়ের দশকে টাটা স্টিলে উচ্চপদস্থ অফিসার ছিলেন বাণীব্রত মহাপাত্র। পরিস্থিতির চাপে আর সহকর্মীদের উপর রাগ করে অবসর গ্রহণের ১৮ বছর আগে চাকরি ছাড়লেন। ২০২২ সালে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে, বাণীব্রতবাবুর উত্তর – ‘‘রাগের মাথায় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’
চিত্র ২ – অফিসের এক মহিলা সহকর্মীর সঙ্গে স্বামীর অ্যাফেয়ার। এই সন্দেহ মনে পুষে রেখে রাগের মাথায় বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন রাখি মিত্র। কোনওদিনও নিজের সন্দেহবাতিক মনের কথা স্বামীকে জানাননি রাখিদেবী। এখন একাকী জীবনে বুঝতে পেরেছেন, সেদিন সন্দেহটা মনের ভিতর না রেখে খোলাখুলি আলোচনা করলে আজকের দিনটা বদলানো যেত।
চিত্র ৩ – সব কিছু খুব পারফেক্ট চাওয়াটাই যেন প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীর জীবনের সবচেয়ে বড় শত্রু। অফিসে বা বাড়িতে কোথাও একচুল এদিক-ওদিক হওয়ার জো নেই। বরের ওজন বাড়ছে। শরীরে বাসা বাঁধছে টুকিটাকি রোগ। ৩৪ বছর বয়সের মানুষটা এক্সারসাইজ করবে না কেন? সেই নিয়ে ঝগড়া—বিবাদ এতটা বাড়ে একদিন যে, ভাতের থালা ছুঁড়ে ভাঙলেন। আবার ঘণ্টা খানেক পর অনুতাপ, ‘‘কেন করলাম কাজটা!’’
[আরও পড়ুন: আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ক্যানসার জয়, চিকিৎসক শোনালেন সাফল্যের কাহিনি]
উপরের তিনটি ছবি পুরনো হলেও যেন টাটকা। করোনা আবহে (Coronavirus) গত দু’বছর ধরে ঘরবন্দি জীবনে মানুষ অভ্যস্ত হয়েছে ঠিকই। তবে কোথাও যেন রাগও বাড়ছে। বিরক্তি বাড়ছে ছোট ছোট কারণেই। আসলে ছোট-বড় ইস্যু থেকেই মনখারাপ। সেখান থেকেই রাগ। তর্ক। কখনও তা থেকেই জন্ম নিচ্ছে চূড়ান্ত হতাশা (Depression)। মনের ভিতরে জমাট বাঁধছে নিম্নচাপ। সর্বনাশা রাগের এফেক্ট মারাত্মক। তথ্য বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে কাজ হারানোর ভয় হোক বা ঘরবন্দি জীবন, সাধারণ মানুষের মধ্যে ৪০ শতাংশ মানসিক রোগের বোঝা বেড়েছে। যে কারণে ২০২২ সালের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বাজেটেও স্থান পেয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য (Mental Health)।
প্রয়োজন প্রফেশনাল হেল্প
রাগের কারণ একাধিক হতে পারে। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, হতাশা, একাকিত্ব থেকে মনে রাগ জন্মায়। তবে যে কোনও পরিস্থিতিতেই কথা বললে মন হালকা হয়। কিন্তু আজকের স্বার্থপর সময়ে কাকে বলবেন মনের কথা? এমন অনেক কথা থাকে, যা মা-বাবা বা প্রিয়বন্ধুকে বলা যায় না। অথচ সেই কথাগুলো নির্ভয়ে শেয়ার করা যায় কাউন্সেলরকে। অযথা না রেগে সাইকোলজিস্টদের (Psychologist)সাহায্য নিন।
মেডিটেশন জরুরি
বাড়িতে বসে শুধু একা সময় কাটানো নয়। বুদ্ধি করে রাগ কন্ট্রোল করার গোড়ায় গিয়ে মনকে বশে আনার চেষ্টা করুন। দরকার মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন। চারদিকে অনবরত চলতে থাকা নয়েজ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে এই মেডিটেশনের জুড়ি নেই। তবু যদি রাগ না যায়, তা হলে রয়েছে রিল্যাক্সেশন থেরাপি।
[আরও পড়ুন: লিভার ভাল রাখতে প্রয়োজন নেই ওষুধের, রোজ পাতে রাখুন এই খাবারগুলি]
‘লেট গো’ এফেক্ট
নিজেরটাই ঠিক, সামনের লোক ভুল। এই মনোভাব ঠিক নয়। কিছু কিছু জিনিস ভুলে থাকতে শিখুন। লেট গো করতে শিখুন।
রাগের মাথায় কথা কম
কী কী বিষয়ে বা কখন আপনি রেগে যেতে পারেন, সেটা বুঝলেই মুশকিল আসান হতে পারে। রাগ সবার হয়। কারওর কম, কারও বেশি। মনে রাখবেন, যখন রেগে যাচ্ছেন বুঝতে পারবেন, তখন ডিপ ব্রিদিং (Deep Breathing) সাহায্য করে। এক থেকে দশ কাউন্ট করে তার পর নিজের কথা বলুন। না হলে এ-বি-সি মডেল প্রয়োগ করুন। এ অর্থাৎ কোনও কিছু দেখে বা শুনে আর আপনি রাগছেন। বি অর্থাৎ ব্যবহারে কেমন পরিবর্তন আসছে। এবং সি, এর ফলে কী কী হতে পারে। ফাঁকা সময় নিজে এই এ-বি-সি অ্যানালিসিস করলেই সমস্যা অনেকখানি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।