অভিরূপ দাস: মানুষের মঙ্গল কামনায় যাঁরা মন্দিরে পুজো করেন তাঁদেরই ফুসফুস জ্বলে পুড়ে ছারখার। ঠাকুরকে নিবেদন করা ধূপকাঠির ধোঁয়াই দায়ী এর জন্য। স্বাভাবিক রং বদলে নিকষ কালো হয়ে যাচ্ছে শ্বাস নেওয়ার যন্ত্র। এমনই এক সমীক্ষা সামনে আসতে চোখ কপালে উঠেছে।
[আরও পড়ুন: ক্যানসারের আশঙ্কা, আপাতত জিনট্যাক বিক্রিতে জারি নিষেধাজ্ঞা]
গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ, কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক এবং চেস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশনের যৌথ সমীক্ষায় এমন রিপোর্ট সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রকও। তবে কি সিগারেটের মতো ধূপের বাক্সেও লেখা হবে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ? চেস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ডা. সন্দীপ সালভি জানিয়েছেন, তেমনই চিন্তাভাবনা চলছে। তাঁর কথায়, “আগের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল একটি মশার কয়েল মানে ১০০টি সিগারেট, ধূপকাঠি পরীক্ষা করে আমরা দেখেছি, ঘুপচি মন্দিরে একটি ধূপকাঠির ধোঁয়া ৫০০ সিগারেটের সমান।”
বিশেষ কোনও রাজ্য নয়। দেশের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল থেকে ৫০ জন পুরোহিতের উপর সমীক্ষা চালানো হয়। দেখা গিয়েছে, এঁদের মধ্যে ২৫ জনেরই ফুসফুস ৩০ শতাংশের বেশি বিকল। তবে ধুপের ধোঁয়া একরকমভাবে সবার ফুসফুস খায়নি। কেস হিস্ট্রি পর্যালোচনা করে উঠে এসেছে, ভয়ংকর সত্যি। যে সমস্ত মন্দিরে ধূপের সংখ্যা যত বেশি, ধোঁয়া যত জমাট, সেখানেই মৃত্যুমুখে পুরোহিতরা। ধূপে উপস্থিত কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড এবং ক্ষতিকারক মনোনাইট্রোজেন দিনের পর দিন ধরে শরীরে প্রবেশ করতে থাকলে অ্যাজমা এবং সিওপিডি-এর মতো রোগের প্রকোপ
চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি পায়।
[আরও পড়ুন: গরম খাবার প্লাস্টিকে ভরছেন? হতে পারে মারাত্মক বিপদ]
দিল্লিতে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত এক সম্মেলনে সিওপিডি নিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে এ রোগের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনের কথা। দেশের মধ্যে উত্তরপ্রদেশ আর পশ্চিমবঙ্গ, এই দুই রাজ্যই আপাতত সিওপিডির কবলে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। এ রাজ্যে ধূমপায়ীর সংখ্যা বেশি হলেও বায়ূ দূষণে পশ্চিমবঙ্গকে পিছনে ফেলে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ। বাতাসে ‘সূক্ষ্ম ভাসমান ধূলিকণা’ যার সর্বোচ্চ ব্যাসার্ধ ২.৫ মাইক্রন, বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশে। এতদিন সিগারেটকেই সিওপিডির আঁতুরঘর বলে মনে করা হত। কিন্তু নতুন সমীক্ষার তথ্য অন্য কথা বলছে। সিওপিডি হয়েছে এমন ৩৫০০ লোকের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে এঁদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ কখনও ধূমপানই করেননি। কলকাতার পালমোনোলজিস্ট ড. ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানিয়েছেন, এই তথ্যে চমকে যাওয়ার কিছু নেই। এমন অনেকেই ফুসফুসের এই অসুখে আক্রান্ত যাঁরা সিগারেট থেকে কয়েকশো হাত দূরে। স্রেফ মেইন রোডে জনবহুল এলাকায় বাড়ি থাকার কারণেই গাড়ির ধোঁয়ায় এঁদের ফুসফুস বিকল হয়ে গিয়েছে।
ফুসফুসের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারানোর অসুখ সিওপিডি। ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজে শুধু যে ফুসফুসের রং বদলে যায় তাই নয়, বড় হয়ে যায় হার্টও। কীভাবে তা মহামারীর আকার নিয়েছে তারও ছবি উঠে এসেছে দিল্লির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে। দেখা গিয়েছে এইচআইভি এইডস, ম্যালেরিয়ার থেকেও মারাত্মক আকার নিয়েছে সিওপিডি।
প্রতি বছর ৫২ হাজার ব্যক্তির মৃত্যু হয় এইডসে। সেখানে সিওপিডিতে মৃত্যুর সংখ্যা নয় লক্ষেরও বেশি। গ্রামে গ্রামে মানুষের মধ্যে ঘুরেছে চেস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন। দেখা গিয়েছে গ্রামের অনেক মানুষ এখনও এই অসুখের নামই শোনেননি। তাই চিকিৎসকের কাছেও যাননি। সে সংখ্যাটাও চমকে দেওয়ার মতোই। গ্রামাঞ্চলে শতকরা ৯৯.১৫ শতাংশ মানুষ জানেনই না সিওপিডি কী। গ্রামে গ্রামে ভারত সরকার ন্যাশনাল সিওপিডি প্রিভেনশন কন্ট্রোল প্রোগ্রাম শুরু করার তোড়জোড় করছে। এই মূহূর্তে উত্তরপ্রদেশে ১০০ জনের মধ্যে পঁচিশ জন ফুসফুসের এই মারণ অসুখে আক্রান্ত। এ রাজ্যে সেই সংখ্যাটা ২০। যোগীর রাজ্যকে ছুঁতে না চাইলে এখনই সাবধান হওয়ার বার্তা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
The post দেশের অর্ধেক পুরোহিতের ফুসফুস বিকল! কেন জানেন? appeared first on Sangbad Pratidin.