সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গণ বিক্ষোভে বেসামাল পাকিস্তান। পাকিস্তান কোস্ট গার্ডের দুর্ব্যবহারের অভিযোগে গত ৫ দিন ধরে স্তব্ধ বালুচিস্তানের গদর বন্দর। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে পাকিস্তানের পরিবহণ সংগঠনগুলি। ফলস্বরূপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে পাক-চিন অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি), মাক্রান জাতীয় সড়ক-সহ আরও একাধিক রাস্তা। এই ঘটনা আর্থিক দিক থেকে পাকিস্তানের কাছে এক বিরাট ধাক্কা। পাশাপাশি সিপিইসি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন বেজিংও।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, দিনের পর দিন পাক পাকিস্তানের উপকূলরক্ষী বাহিনী অত্যাচার করে চলেছে তাদের উপর। এক আন্দোলনকারী বলেন, 'বার বার প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িতে দেওয়া হলেও সরকার চায় না সবকিছু স্বাভাবিক থাকুক। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের ফল এই আন্দোলন। গত ৫ দিন ধরে আমরা আন্দোলন করছি কিন্তু সরকার আন্দোলনকারীদের কোনও কথা শুনতে নারাজ। যার জেরে ট্রাক অবরোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।' আন্দোলনের জেরে সিপিইসি-সহ অন্যান্য রুটে থমকে রয়েছে হাজার হাজার ট্রাক। বন্ধ হয়ে গিয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এমনিতে পাকিস্তানের উপদ্রুত এলাকা হিসেবে পরিচিত বালুচিস্তান। তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (পাক তালিবান)-এর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলে মাঝে মধ্যেই চলে জঙ্গি হামলা। পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের সরকার বিরোধী আন্দোলন-বিক্ষোভে প্রায়শই রক্তাক্ত হয়ে ওঠে এই অঞ্চল। সেখানেই নতুন করে এই বিক্ষোভ মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে পাক সরকারের। অর্থনৈতিক দিক থেকে পাকিস্তানের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই গদর বন্দর। মধ্য প্রাচ্যের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য চিনের কাছেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখে চিনের কাশগড় থেকে এই গদর বন্দর পর্যন্ত গড়ে তোলা হয়েছে সিপিইসি করিডোর। অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্য থেকে আসা এই করিডোর গঠনে সম্পূর্ণ আর্থিক সহায়তা করেছে চিন প্রশাসন। সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের জেরে এবার গদর বন্দর-সহ এই রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের পাশাপাশি যথেষ্ট চাপে চিনও।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারতকে কোণঠাসা করতে পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চিন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর বা সিপিইসি গঠন করা হয়। আধুনিক করা হয় গদর বন্দরকে। গোটা পরিস্থিতি আঁচ করে পালটা ইরানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারত চাবাহারে গড়ে তোলে নতুন একটি বন্দর। সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে চাবাহার বন্দর নিয়ে ১০ বছরের চুক্তিও সেরে ফেলেছে ভারত। চাবাহার ভারতের হাতে এলে সেখান থেকে ভারত সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া এমনকি ইউরোপের সাথেও। তাই এই চুক্তির গুরুত্ব অসীম ভারতের কাছে। চাবাহার ভারতের হাতে আসার পর ভারতের পরিকল্পনা রয়েছে চাবাহারের সাথে ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোরকে যুক্ত করা। যার ফলে সোজা রাশিয়ার সাথে যুক্ত হবে ভারত। এছাড়া আফগানিস্তানে পৌঁছানোর জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন পড়বে না।