সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বয়স মাত্র ৫৩। এই বয়সে গায়ক কেকে’র গান যে এভাবে থেমে যাবে, তা কেউ কল্পনাই করতে পারেননি। নজরুল মঞ্চে কেকে’র গান শেষ হতেই শহরে যে বিষণ্ণতার সুর ছড়িয়ে পড়বে, তা যেন এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না। এরকম একটা ঘটনা যে ঘটবে, তার কল্পনা কেউই করতে পারেননি। গানের মানুষ চলে গেলেন, গানের মধ্য়ে দিয়ে। এটাই হয়তো শিল্পীর কাজের প্রতি নিষ্ঠা, দায়বদ্ধতা। প্রচণ্ড ঘামছেন, বারবার জল খাচ্ছিলেন, তবুও অনুষ্ঠান কিছুতেই সংক্ষিপ্ত করেননি। নিজের কাজের প্রতি সৎ থেকে গিয়েছেন। এই সততা, নিষ্ঠাই কি প্রাণ কেড়ে নিল কেকের? পারফরম্য়ান্সের চাপ, মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্য নিজেকে নিংড়ে দেওয়াই কি অনুরাগীদের কাছ থেকে কেড়ে নিল তাঁদের প্রিয় গায়ককে!
কেকে’র এই আচম্বিতে মৃত্যু প্রশ্ন তুলে দিয়ে যাচ্ছে অনেক। শুধু কেকে নন, কেবলমাত্র বিনোদন জগতের সঙ্গে যুক্ত মানুষরাও নন, বরং কাজে আসক্ত ব্যক্তিদের একটু বেশিই সচেতন থাকতে হবে। কারণ, কাজপাগল মানুষরা অনেক সময়েই কাজের জন্য অবহেলা করে বসেন নিজের শরীরকে। আর তাতেই বিপদ ডেকে আনেন।
সংবাদ প্রতিদিনের তরফ থেকে মনোবিদ অগ্নায়ী বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানান, মন ও শরীর দু’ দিকেই নজর রাখতে হবে। তবে জীবন সত্য়িকারের সুন্দর। কাজ পাগল হওয়া ভাল, কিন্তু তার জন্য শরীরকে অবহেলা করা যাবে না।
[আরও পড়ুন:সমকামীদের মধ্যেই বেশি ছড়াচ্ছে Monkeypox! ‘সংক্রমণ আরও বাড়বে’, উদ্বেগ WHO’র ]
মনোবিদ অগ্নায়ী আরও জানান, ”স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখাটা একেকটা মানুষের কাছে একেকরকম। তবে সাধারণত আমরা দেখে থাকি কাজ পাগল লোকেরা কাজের সময় শরীরের কথা অন্য় মানুষদের তুলনায় কম ভাবেন। অনেক সময়েই দেখা যায়, তাঁদের জ্বর হলে, কিংবা গায়ে, হাত-পায়ে ব্যথা হলে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন না, ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে ফেলেছেন। শরীর খারাপটাকে চাপা দিয়ে রেখে কাজটা করে গেলাম। কারণ, আমার কাছে কাজ প্রায়োরিটি। সেই মানুষটি যদি পারফর্মিং আর্টসের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাহলে দর্শকদের সামনে সেরা পারফরম্যান্সের একটা চাপও তো থাকেই। সেই একটা স্ট্রেস তো থাকছেই। সঙ্গে যোগ দেয় আপনি কী ধরনের লাইফস্টাইলে রয়েছেন। ঠিক সময়ে খাচ্ছেন কিনা,পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে কিনা। তবে কেকের বিষয়টা বলা একটু শক্ত। কারণ, অন্যান্য আর কী বিষয় রয়েছে এই মৃত্যুর নেপথ্যে তাও জানা দরকার। আমি যেটা বলছি মূলত, সাধারণ ট্রেন্ড দেখে। তবে হ্যাঁ, সেলিব্রিটিদের তো একটা আলাদা প্রেসার থাকেই। সেই স্ট্রেসটা কিন্তু মারাত্মক। সেই স্ট্রেস থেকেই অনেক সময় খুব ছোট শরীর খারাপও বড় আকার ধারণ করছে। তার উপর এখন কলকাতায় যা গরম। কেকের কথা বলতে গেলে, এই ফ্যাক্টরগুলো হয়তো কাজ করেছে। আমার ব্যক্তিগত মতামত উনি কম গান গেয়ে অনুষ্ঠান ছাড়তেই পারতেন। কিন্তু একজন শিল্পী চট করে সেটা করেন না। কাজের উপর তাঁর দায়বদ্ধতা থেকে যায়।”
কাজ পাগল মানুষরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন স্ট্রেস? মনোবিদ অগ্নায়ীর কথায়, প্রথমেই লাইফস্টাইল ঠিক রাখতে হবে। ঠিকঠাক খাবার খেতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুমোতে হবে। জাঙ্কফুড খাওয়া একেবারে চলবে না। সঠিক সময়ে কাজ শেষ করে, কাজের চিন্তা মাথা থেকে বের করতে হবে। সব সময় কাজ নিয়ে ভাবনাচিন্তা না করে, নিজেকে একটু সময় দিতে হবে। ধূমপান ও মদ্যপানের পরিমাণ কমাতে হবে। মোটামুটি একটা সুস্থ লাইফস্টাইল মেনে চললেই শরীর ও মন দুই ঠিক থাকবে।