অভিরূপ দাস: নিজেকে নিকেশ করার আগে নির্বিচার গুলি চালিয়ে মানুষ খুন। এ কোন কালান্তক মানসিক অবসাদ, যা নিজের পাশাপাশি অজানা-অচেনাদেরও শেষ করে দিতে কসুর করেন না! শুক্রবার ভরদুপুরে পার্ক সার্কাসের (Park Circus) লোয়ার রেঞ্জ রোডের ঘটনায় শিহরিত, সন্ত্রস্ত আমজনতা। বলছেন, “ওই রাস্তা দিয়ে তো হামেশাই যাতায়াত করি। নিহত রিমা সিংয়ের জায়গায় তো আমরাও হতে পারতাম।”
একাধিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তারক্ষী শহরজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। হাতে বন্দুকও থাকে তাঁদের। মানসিক অবসাদ থেকে তাঁরা গুলি চালাতে পারেন? শহরের বিশিষ্ট মনোবিদরা বলছেন, অবসাদগ্রস্তরা (Depression) আত্মহত্যাপ্রবণ। যিনি নিজেকে শেষ করতে পারেন, তিনি অন্যকে খুন করার আগে দু’মিনিটও ভাববেন না।
[আরও পড়ুন: জেলে রাত কাটিয়ে গালাগাল ভুললেন রোদ্দুর রায়!]
শুক্রবার দুপুরে আত্মহত্যা করার আগে নিরীহ পথচারীকে খুন করেছেন কনস্টেবল চোডুপ লেপচা। তিনি যে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন, তা স্বীকার করেছে কলকাতা পুলিশ। ওই কনস্টেবলের চরিত্র বিশ্লেষণ করে ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির ডিরেক্টর প্রদীপ সাহা জানিয়েছেন, চার রকমের আত্মহত্যা (Suicide) রয়েছে। অ্যানোমিটি, ইগোয়িস্টিক, অলটুইস্টিক, ফ্যাটালিস্টিক। চোডুপ লেপচা যেটা ঘটিয়েছেন, সেটা ইগোয়িস্টিক সুইসাইড। চিকিৎসকের কথায়, চোডুপ লেপচা অবসাদে ভুগছিলেন। ধীরে ধীরে তাঁর সমাজের প্রতি রাগ, বিতৃষ্ণা তৈরি হয়। তিনি ভাবেন, সমাজ তাঁকে যেমন কষ্ট দিয়েছে, সেটা ফিরিয়ে দিতে হবে। রাস্তাঘাটে যাঁরা হাঁটাচলা করছেন, তাঁরা সকলে এই সমাজের লোক। এই চিন্তা থেকেই খুন করার ইচ্ছা জন্মায়। চিকিৎসকের কথায়, খুনটা করে চোডুপ লেপচা বার্তা দিলেন, “নিষ্ঠুর সমাজ, নিজেকে শুধরে নাও। আমি অবহেলিত। চলে যাচ্ছি।”
মনোবিদরা বলছেন, ওই যুবতীর জায়গায় যে কেউ হতে পারতেন। কপালের ফেরে মারা গিয়েছেন রিমা সিং। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সৃজিত ঘোষের কথায়, সাইকোটিক ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন ওই কনস্টেবল। আত্মহত্যার সংজ্ঞা ঘাঁটলেই চোডুপ লেপচার অদ্ভুত ব্যবহারের হদিশ পাওয়া যাবে। বিখ্যাত মনোবিদ ফ্রয়েড বলেছিলেন, অন্যের বিরুদ্ধে হিংসা, রাগ, বিদ্বেষ যখন নিজের বিরুদ্ধে চালিত হয়, তখনই কেউ আত্মহত্যা করেন। চিকিৎসকের বক্তব্য, অর্থাৎ যিনি আত্মহত্যা করতে পারেন, তিনি একজনকে খুনও করতে পারেন।
[আরও পড়ুন: পয়গম্বর বিতর্কে উত্তপ্ত হাওড়া, ব্যাহত রেল পরিষেবা, অবরোধে আটকে থাকা ট্রেনে মৃত্যু যাত্রীর]
মনোবিদদের এমন তত্ত্বে আতঙ্কিত আমজনতা। বিদেশে প্রায়ই দেখা যায় বন্দুক নিয়ে স্কুলে ঢুকে পড়েছেন আততায়ী। এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ছেন শ্রেণিকক্ষে। এমন ঘটনা তিলোত্তমায় দেখা যায়নি। তবে শুক্রবারের পার্ক সার্কাসের ঘটনা জানান দিচ্ছে, অবসাদকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। মনোবিদরা বলছেন, চেপে রাখা অবসাদ বেরিয়ে আসতে পারে খুনের মধ্য দিয়ে। তখনই প্রাণ চলে যাবে নিরপরাধ রিমা সিংদের।