স্টাফ রিপোর্টার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতা: গ্রামবাসীদের চাপে শেষপর্যন্ত ভাঙড়ে অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হল বিক্ষোভকারীরা৷ বহিরাগত নকশালদের প্ররোচনায় বৃহস্পতিবার রাতে নতুনহাট, শ্যামনগরে ব্যারিকেড তৈরি করলেও শুক্রবার সকাল হতেই গ্রামবাসীরাই তা তুলে দেন৷ কারণ, নতুন করে ব্যারিকেড তৈরি হওয়ায় স্বাভাবিক ছন্দে ফেরা ভাঙড়ে স্কুল-কলেজ ও অফিস-সহ কর্মস্থলে যেতে সমস্যায় পড়ছিলেন বাসিন্দারা৷ বস্তুত, এই কারণেই মুখরক্ষা করতে ব্যারিকেড তুলে দেওয়ার পরে বেলার দিকে নকশাল নেতা অলীক চক্রবর্তী অবরোধ প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন৷ কারণ, গুটিকয়েক বিভ্রান্ত গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আর যে নতুন করে অশান্তি তৈরি করা যাবে না, তা স্পষ্ট বুঝে গিয়েছে বহিরাগত এই নকশালরা৷
(বচসার জেরে ক্রেতার গায়ে গরম তেল ছুড়ল রেস্তরাঁ কর্মী)
শুক্রবার সকালেই এই ঘোষণা করে তারা অবরোধ তুলে নেয়৷ যার ফলে সকাল থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে৷ রাস্তাজুড়ে গাছের গুঁড়ি ফেলে যেভাবে গ্রামগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল, সেই পরিস্থিতি থেকে সরে আসে অবরোধকারীরা৷ সাধারণতন্ত্র দিবসে নিউটাউনের বিধায়ক তথা বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত গ্রামে ঢুকে ভাঙড়ের বাসিন্দাদের নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন৷
(রাস্তার কুকুরদের খেতে দেওয়া অপরাধ, প্রতিবেশীদের হেনস্তা যুবতীকে)
প্রশাসনের তরফ থেকেই আস্তে আস্তে গ্রামগুলিকে অবরোধমুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছিল৷ কিন্তু বাদ সাধছিল বিক্ষোভকারীরা৷ কিন্তু তাদের জন্যই যে স্বাভাবিক জীবন থেকে গ্রামবাসীরা ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছিলেন, সেটা তারা বুঝতে পেরেছে৷ যার ফলে শেষ পর্যন্ত তাঁদের চাপেই বিক্ষোভ-অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হয় বিক্ষোভকারীরা৷ এক কথায়, এবার নতুন করে স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গে জুড়তে শুরু করল ভাঙড়৷ বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছে, আগামী ৩০ জানুয়ারি তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে৷ ওইদিনই কলকাতায় একটি মিছিল করার কথাও জানিয়েছে তারা৷ তবে গ্রামবাসীরা এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যেহেতু স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নিজে পাওয়ার গ্রিড নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন, তাই নতুন করে কোনওমতেই আর অশান্তি করতে দেওয়া যাবে না৷ ভাঙড়ের উন্নয়ন এবং শান্তির বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ভাঙড়ের বাসিন্দারা৷
(শিশু বিক্রি রুখে দিলেন গ্রামবাসীরা)
বাইরের কোনও ব্যক্তির প্ররোচনা বা উসকানিতে আর পা দেওয়া হবে না৷ কারণ, এই উসকানিতে পা দিয়েই নিরীহ দুই যুবকের অকালে প্রাণ গিয়েছে৷ গ্রামবাসীদের এই জেদি মনোভাবের ধাক্কায় স্বভাবতই পিছু হটে ‘অবরোধ প্রত্যাহার’ ঘোষণা করেছে জনবিচ্ছিন্ন নকশালরা৷ শুক্রবার সকাল থেকেই নতুন করে গন্ডগোল, অশান্তির আঁচ মিলতে শুরু করে৷ বুধবার সকালে এক দফায় অবরোধ উঠে যাওয়ার পর নকশাল নেত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরি গ্রেফতারের সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে অবরোধের রাস্তায় যায় বিক্ষোভকারীরা৷ শ্যামনগর চত্বর থেকে শুরু করে একাধিক এলাকায় চলতে থাকে অবরোধ৷ এদিন সকালে নতুন করে বোমা পড়তে শুরু করে বলে অভিযোগ৷ গ্রামবাসীদের কথায়, শোনা যায় গুলির শব্দও৷ যার ফলে পুলিশ নতুন করে এলাকার দখল নিতে শুরু করে৷ বিক্ষোভকারীদের জন্য গ্রামবাসীদের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, তার জন্য এসপি সুনীলকুমার চৌধুরি নিজে হাজির ছিলেন কাশীপুর থানায়৷ তার মধ্যেই বারুইপুর আদালত শর্মিষ্ঠাকে আট দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে৷ এই নিয়ে নকশাল নেতা অলীক চক্রবর্তীর অভিযোগ, প্রশাসন বিক্ষোভকারীদের উপর জোর খাটাতে চাইছে৷ তার প্রতিবাদেই নতুন করে বিক্ষোভের রাস্তায় গিয়েছিল তারা৷ কিন্তু গ্রামবাসীদের চাপে এদিন বেলা বাড়তেই অবরোধ তুলতে বাধ্য হয়৷ তাদের কথায়, গ্রামের পরিস্থিতি বিচারে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত তারা৷ সেই অবস্থান থেকেই এদিন বিক্ষোভ তুলে নিতে তারা বাধ্য হয়৷
The post নকশালদের চেষ্টা ব্যর্থ করে অবরোধ তুললেন ভাঙড়বাসী appeared first on Sangbad Pratidin.