সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: 'পূজার (Durga Puja 2024) সময় এল কাছে।' আরও একবার বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো কড়া নাড়ছে ঘরে। একটা সময় ছিল যখন মূলত ধনীর বাড়িতেই দুর্গোৎসব হত। এলাকার সকলে সেখানেই যোগ দিত পুজোয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে শুরু হওয়া বারোয়ারি পুজোর প্রেক্ষাপটে আসলে রয়ে গিয়েছে এক ধরনের সামাজিক দ্রোহের ইতিহাস।
মনে করা হয়, অবিভক্ত বঙ্গদেশে প্রথম ধুমধাম করে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছিলেন রাজশাহীর কংসনারায়ণ রায়। সেটাই অবিভক্ত বাংলায় প্রথম সর্বজনীন দুর্গোৎসব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এর পিছনে রয়েছে একটি গল্প। বা বলা যায় কিংবদন্তি। কংসনায়ারণ এক সুলতানের সাহায্য়েই প্রভূত ধনসম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। অথচ পরবর্তী সময়ে মুঘল সম্রাট আকবরকে সাহায্য করতে গিয়ে উৎখাত করেছিলেন তিনিই। প্রথমটায় সব ঠিকঠাক থাকলেও পরবর্তী সময়ে অনুতাপে দগ্ধ হতে থাকেন তিনি। সেই সময় তাঁর মনে ইচ্ছা জাগে কোনও মহাযজ্ঞে যুক্ত হওয়ার। আর সেখান থেকেই পণ্ডিতদের পরামর্শে লক্ষ লক্ষ টাকা (আজকের হিসেবে অঙ্কটা কয়েক কোটি) খরচ করে আয়োজন করলেন দুর্গাপুজোর। সেটা ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ের কথা।
একে একে ধনীগৃহে দুর্গাপুজোর প্রচলন হতে থাকে। জাঁকজমক, আয়োজনের জৌলুসে মুগ্ধ হতেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু সেই সঙ্গেই তাঁদের মনে জমতে থাকে ক্ষোভও। কেননা এই সব পুজোয় সেই জনসাধারণের অংশগ্রহণ মোটেই অবাধ ছিল না। কেননা সেখানে ছিল নানা বিধিনিষেধ। ফলে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ধীরে ধীরে মনের আকাশ ছেয়ে ফেলতে থাকে। আর সেখান থেকেই সকলে মিলে অর্থ সংগ্রহ করে পুজো করার পরিকল্পনার জন্ম।
১৭৯০ সালে হুগলির গুপ্তিপাড়ায় আয়োজিত হয় প্রথম বারোয়ারি পুজো। নাম থেকে বোঝা যায় বারোয়ারি অর্থ হল বারো ইয়ারি। বারোজন বন্ধু এক হয়ে যে আয়োজন। বলাই বাহুল্য এখানে বারো সংখ্যাটা প্রতীক মাত্র। আসলে পাড়ার সকলের থেকে চাঁদা নিয়ে পুজো। প্রায় আড়াইশো বছর আগে হওয়া সেই পুজোই পথ দেখাল। কলকাতা তো বটেই, বাংলার সর্বত্রই বারোয়ারি পুজো ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আজ কেবল কলকাতাতেই দুহাজারেরও বেশি মণ্ডপে বারোয়ারি দুর্গাপুজো হয়। গোটা বাংলা ও দেশ-বিদেশের অন্যত্র ধরলে সংখ্যাটা নিঃসন্দেহে অনেক অনেক বেশি। একদিন ধনীর বাড়িতে অপমানের জ্বালা থেকে যে পরিকল্পনা জন্ম নিয়েছিল আড়াই শতক পরে সেটাই হয়ে উঠেছে দুর্গাপুজোর সবচেয়ে পরিচিত চেহারা।