নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: রাফালে নিয়ে কংগ্রেস-বিজেপি তরজা অব্যাহত। প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকরের সঙ্গে মঙ্গলবারের সৌজন্য সাক্ষাতের প্রসঙ্গ তুলে নরেন্দ্র মোদি সরকারকে তোপ দাগলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। পালটা রাহুলকে চিঠি লিখে আক্রমণ করলেন স্বয়ং পারিকর। সৌজন্য সাক্ষাতকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য ব্যবহার করে রাহুল তাঁকে অপমান করেছেন এবং সাক্ষাতে তাঁদের মধ্যে রাফালে নিয়ে কোনও কথা হয়নি বলে দাবি করলেন পারিকর। এরপরই আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে খোলা চিঠি লিখেছেন রাহুল। সব মিলিয়ে বাজেট অধিবেশন শুরুর মুখে দু’পক্ষই বেশ যুদ্ধং দেহি মনোভাব নিয়েছে।
শুরুটা অবশ্য রাহুলই করেছিলেন। বুধবার দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে দলের যুব মোর্চার অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে রাফালে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন। তাঁর দাবি, রাফালে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘুম উড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি রাফালে চুক্তি পরিবর্তনের সময়ে মোদি তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকরের মত নেননি। এবং একথা পারিকরই তাঁকে বলেছেন বলেও দাবি করেছেন রাহুল। তিনি বলেন, “আমি গতকাল পারিকরজি’র সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি নিজে বলেছেন যে, চুক্তি পরিবর্তনের সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেননি।” মঙ্গলবার রাহুল গোয়ায় পারিকরের দপ্তরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে ‘ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ’ বলে টুইট করেন। পাররিকরের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন তিনি।
[ব্যাংকের নীতি লঙ্ঘন, চন্দাকে বরখাস্ত করল আইসিআইসিআই]
রাহুলের মন্তব্য সামনে আসতেই রে রে করে ওঠে বিজেপি শিবির। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে কংগ্রেস সভাপতি শিষ্টাচার লঙ্ঘন করেছেন বলেও সরব হয় তাঁরা। পারিকর নিজে মুখ খুলে রাহুলকে ‘মিথ্যাবাদী’ আখ্যা দেন। তাঁকে পালটা চিঠি লিখে সুবিধাবাদী রাজনীতি করবেন না বলেও সতর্ক করলেন পাররিকর। গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “আপনি ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারকে রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ব্যবহার করেছেন। এতে আমি অত্যন্ত হতাশ। আপনি আমার সঙ্গে পাঁচ মিনিট সময় কাটান। তখন আপনি রাফালের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু আমি এ বিষয়ে কোনও আলোচনা করিনি।” তিনি আরও লিখেছেন, অসুস্থ অবস্থায় রাহুলের সৌজন্য তিনি ভালভাবেই গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু এখন বুঝতে পারছেন, রাহুল বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই তাঁকে দেখতে এসেছিলেন। একই সঙ্গে রাফালে চুক্তিতে কোনও গড়বড় হয়নি বলেও দাবি করেছেন প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
[২১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে রাম মন্দির নির্মাণের কাজ!]
এরপর ফেসবুকে পালটা চিঠি লিখে রাহুল বলেন, পারিকরের চিঠি তাঁর পড়ার সুযোগ হয়নি। কিন্তু তাঁদের ব্যক্তিগত কথোপকথন তিনি ফাঁস করেননি। ইতিমধ্যেই যা কিছু প্রকাশ্যে, তা নিয়েই বক্তব্য পেশ করেছেন। রাহুলের কটাক্ষ, পারিকর যে প্রচণ্ড চাপে রয়েছেন, তা তিনি বুঝতে পারছেন। কিন্তু পালটা মন্তব্য করে বিতর্ক বাড়াতেন না। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ফাঁস হয়ে যাওয়া চিঠিই তাঁকে এভাবে প্রতিক্রিয়া দিতে বাধ্য করেছে। রাফালে চুক্তি ও পারিকরের ভূমিকা নিয়ে টানাপোড়েন এই প্রথম নয়। শুরু থেকেই কংগ্রেস অভিযোগ করে আসছে, তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারিকরকে অন্ধকারে রেখে যা করার প্রধানমন্ত্রী নিজেই করেছেন। রাফালে চুক্তির আসল ফাইল পারিকরের কাছে আছে বলে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এমনকী গত শীতকালীন অধিবেশনে এই সংক্রান্ত কথোপকথন সম্বলিত একটি রেকর্ডিংও রাহুল লোকসভায় পেশ করার চেষ্টা করেছিলেন। তাই রাফালে নিয়ে পারিকরকে টেনে আনা কংগ্রেসের পক্ষে নতুন নয় বলেই মত রাজনৈতিকমহলের।
তবে অসুস্থ কাউকে দেখতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত কথাবার্তা প্রকাশ্যে রাজনীতির ময়দানে টেনে নিয়ে আসা রাজনৈতিক শিষ্টাচার নয় বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞমহলের একাংশ। কারও মতে, ভালোবাসা ও যুদ্ধে সবই সম্ভব। কংগ্রেস সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছেন। তাঁকে হঠাতে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে রাফালেকে ব্যবহার করতে চাইছেন। তাই পরিকল্পনা করে পারিকরের সঙ্গে সাক্ষাত থেকে শুরু করে এদিনের বক্তব্য, পুরোটাই রণকৌশলের অংশ হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
The post ‘সুবিধাবাদী রাজনীতি করবেন না’, রাহুলকে হুঁশিয়ারি পারিকরের appeared first on Sangbad Pratidin.