সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাংসদ পদ বাতিল। শুধু তাই নয়, জনপ্রতিনিধি আইন অনুযায়ী মোট ৮ (২ বছর জেল, পরে আরও ৬) বছর সম্ভবত ভোটেও লড়তে পারবেন না রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। এবার কী করবেন রাহুল? কী কী রাস্তা খোলা আছে কংগ্রেস সাংসদের কাছে?
জনপ্রতিনিধি আইন অনুযায়ী, কোনও সাংসদ বা বিধায়কের ২ বছরের সাজা হলে তাঁর সাংসদ বা বিধায়ক পদ বাতিল হয়। একটা সময় কারাদণ্ড হলেও আবেদন করার জন্য ৩ মাস সময় পেতেন সাংসদরা। কিন্তু ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) এক রায়ে সাংসদদের সেই বিশেষ সুবিধাও বাতিল করে দেয়। যার ফলে আবেদন করার ন্যূনতম সময়টুকু পেলেন না রাহুল। জনপ্রতিনিধি আইন অনুযায়ী, রাহুল ২ বছর জেলে কাটানোর পরও ৬ বছরের জন্য ভোটে লড়তে পারবেন না। সেটা হলে কংগ্রেস (Congress) সাংসদের রাজনৈতিক জীবনই প্রশ্নের মুখে পড়ে যেতে পারে। এই সাজা কার্যকর হলে প্রধানমন্ত্রী হওয়া তো দূরের কথা, ২০৩৪ সালের আগে লোকসভা নির্বাচন (Lok Sabha Election) লড়তেই পারবেন না কংগ্রেস সাংসদ। ততদিনে রাহুলের বয়সও হয়ে যাবে প্রায় ৬৫। অর্থাৎ সক্রিয় সংসদীয় রাজনীতিতে ফিরতে হলে যেভাবেই হোক এই শাস্তির উপর স্থগিতাদেশ জোগাড় করতে হবে কংগ্রেস নেতাকে।
[আরও পড়ুন: ‘শূর্পণখা’ বলেছিলেন মোদি, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা কংগ্রেস নেত্রীর]
রাহুলের কাছে আপাতত একটা রাস্তাই খোলা। সেটা হল সুরাট আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করা। সেক্ষেত্রে সবার আগে তাঁকে গুজরাট হাই কোর্টে আবেদন করতে হবে। তিনি সুপ্রিম কোর্টেও আবেদন করতে পারেন। কিন্তু তাতেও রাহুল কতটা সুবিধা করতে পারবেন তা নিয়ে সন্দিহান তাঁর দলেরই প্রাক্তন নেতা, বর্ষীয়ান আইনজীবী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিব্বল (Kapil Sibbal)। তিনি বলছেন, সাংসদ পদ ফিরে পেতে হলে শুধু যে রাহুলের শাস্তি কমতে হবে তাই নয়, তাঁকে ‘নির্দোষ’ হিসাবে প্রমাণিত হতে হবে বা উচ্চতর আদালতকে সুরাট আদালতের সামগ্রিক রায়ে স্থগিতাদেশ দিতে হবে। যদিও বিশেষজ্ঞদের আরেকটা অংশ বলছে, উচ্চ আদালতে রাহুলের শাস্তির পরিমাণ কিছুটা কমলেই তিনি সাংসদ পদ ফিরে পাবেন। কারণ নিয়ম অনুযায়ী, একমাত্র ২ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হলেই সাংসদ পদ বাতিল হয়।
[আরও পড়ুন: নেত্রীর বৈঠকের আগেই ধাক্কা বীরভূমের সংগঠনে, বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দলত্যাগ নলহাটির নেতার]
তবে রাহুলের পক্ষে একটা বিষয় যাচ্ছে। সেটা হল অতীতের নজির। এর আগে বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে স্পিকারের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সাংসদ বা বিধায়কদের পদ ফিরিয়ে দিয়েছে আদালত। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ লাক্ষদ্বীপের এনসিপি সাংসদ মহম্মদ ফয়জল। দু’মাস আগে খুনের চেষ্টার অপরাধে তাঁকে ১০ বছর জেলের সাজা শোনায় লাক্ষাদ্বীপের স্থানীয় আদালত। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সাংসদ পদ বাতিল করে দেন স্পিকার। কিন্তু পরে কেরল হাই কোর্ট ফয়জলের ওই সাজা বাতিল করে। এবং একই সঙ্গে তাঁর সাংসদ পদ পুনর্বহাল করার রায় দেয়। কংগ্রেসের আশা রাহুলের ক্ষেত্রেও একই রকম নির্দেশ পাওয়া যাবে।
কংগ্রেস সূত্র বলছে, রাহুল সুরাটের আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন। কংগ্রেস আবার দাবি করছে, যেভাবে রাহুলের সাংসদ পদ বাতিল করা হয়েছে সেটাও বেআইনি। রাহুলের সাংসদ পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে লোকসভার সচিবালয়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, লোকসভার সাংসদ পদ বাতিল করতে পারেন শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি। সেটাও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পর। তাই যে প্রক্রিয়ায় রাহুলের সাংসদ পদ বাতিল করা হয়েছে, সেটাকেও আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। কংগ্রেস নেতারা আত্মবিশ্বাসী উচ্চ আদালতে সুরাট আদালতের রায় টিকবে না। তাঁদের নেতা পদও ফিরে পাবেন। রাহুল নিজেও এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। ছোট্ট টুইটে তাঁর বার্তা, “আমি এই দেশের আওয়াজ হওয়ার জন্য লড়ছি। সেজন্য সবরকম মূল্য দিতে রাজি আছি।”