কোয়েল মুখোপাধ্যায়: ভূমিকম্প৷ স্থলে যেমন হয়, তেমনই হয় জলতলেও। আর জলের গভীরে হওয়া কম্পনের ফলেই ঘটে সুনামি। তবে কখনও কখনও আগ্নেয়গিরি থেকে হওয়া অগ্ন্যুৎপাত কিংবা সমুদ্রতলে আচমকা ভূমিধসের ফলেও ধেয়ে আসতে পারে সুনামি। তবে রবিবার ইন্দোনেশিয়ার সুন্দায় যা ঘটল, তার কারণ অবশ্য দ্বিতীয় এবং তৃতীয়টি। অগ্ন্যুৎপাত এবং ভূমিধস।
[সুনামিতে বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা, ইন্দোনেশিয়ার পাশে ট্রাম্প]
কিন্তু কীভাবে তিলে তিলে গড়ে ওঠে এই জল বিভীষিকা? প্রবল কম্পনে দুলে ওঠে সমুদ্রতল। তার জেরে যে বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়, তা সমুদ্রের জলে মিশে, জলরাশিকে ধাক্কা দিয়ে তুলে দেয় উপরে। তৈরি হয় দৈত্যাকার সব ঢেউ। তটভূমির দিকে যাত্রা করার সময় তা শক্তি এবং গতি, দুই-ই বাড়িয়ে নেয় প্রবলভাবে। আর তারপর পূর্ণক্ষমতা প্রয়োগ করে সজোরে এসে আছড়ে পড়ে তীরে। এক ধাক্কায় ভাসিয়ে নিয়ে যায় মানুষ, গাছপালা, যানবাহন। ডুবিয়ে দেয় ঘরবাড়ি, মাঠঘাট, সড়ক, সেতু। সলিলসমাধি ঘটায় সভ্যতার। সেই ধ্বংসলীলার ব্যবধান বলতে বড়জোর কিছু মিনিট বা ঘণ্টা! এমনিতে সুনামি কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা নির্ভর করে সমুদ্রতলের আকৃতি এবং তটভূমির বিস্তারের উপর। মাঝসমুদ্রে সৃষ্টি হওয়া সুনামির জলরাশি দেখলে কোনওমতেই মালুম হওয়া সম্ভব নয়, যে তীরে পৌঁছতে পৌঁছতে তা কতটা বিধ্বংসী বা ভয়াবহ হতে পারে। বিজ্ঞানীদের দাবি, সুনামির ঢেউয়ের গতি হতে পারে ঘণ্টায় ৫০০ মাইল। আর উচ্চতা? কয়েকশো ফুট। জাপান, আলাস্কা, প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম এলাকা এবং হাওয়াই দ্বীপে সুনামির প্রকোপ বেশি দেখা যায়।
[আরও বাড়বে মৃতের সংখ্যা, জানাল ইন্দোনেশিয়ার বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর]
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা অঞ্চলে, যেখানে এমনিতেই জিওটেকটনিক শক্তির প্রাবল্য রয়েছে। শুধু তাই নয়। ইন্দোনেশিয়ার বিস্তার দুটি মহাদেশীয় পাত (ইউরেশিয়ান এবং অস্ট্রেলিয়ান প্লেট) এবং দুটি মহাসাগরীয়(ফিলিপিন্স সি ও প্যাসিফিক প্লেট) এর মধ্যবর্তী অংশে। কিন্তু ইউরেশিয়ান পাতের নিচে ভারত মহাসাগরীয় পাতের ক্রমাগত সরণ ও নিমজ্জিত হওয়ার ফলে বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় পরিণত হয়েছে ইন্দোনেশিয়া। গোটা প্রশান্ত মহাসাগরীয় মেখলা অঞ্চলে সবথেকে বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আছে এ দেশেই। খুব সাধারণভাবে, সরল অর্থে বুঝিয়ে বললে, এ দেশ বসে রয়েছে একটা তপ্ত আগ্নেয় উনুনের উপর। যার ফলে কম্পন হোক বা অগ্ন্যুৎপাত, প্লাবন, ভূমিধস হোক বা সুনামি-সামান্যতম শক্তির হেরফের ঘটলেই হতে পারে কোনও না কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়। বছরের পর বছর যার পুনরাবৃত্তি হয়েই চলেছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে।
একনজরে দেখে যায় যাক গত কয়েকবছরে সমুদ্রের আগ্রাসনের ঘটনা
দিন | জায়গা | প্রাণহানি (জন) |
২৩ জুন, ২০০১ | পেরু | ৭৮ |
২৬ ডিসেম্বর, ২০০৪ | ইন্দোনেশিয়া | ১০ হাজার |
১৭ জুলাই, ২০০৬ | ইন্দোনেশিয়া | ৬৬৮ |
২ এপ্রিল, ২০০৭ | সোলেমান দ্বীপপুঞ্জ | ৫০ |
২৫ অক্টোবর, ২০১০ | ইন্দোনেশিয়া | ৫০৯ |
১১ মার্চ, ২০১১ | জাপান | ১৮ হাজার |
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ | ইন্দোনেশিয়া | ২০৭৭ |
২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ | ইন্দোনেশিয়া | ২২২ |
The post বারবার ইন্দোনেশিয়ায় কেন হচ্ছে সুনামি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? appeared first on Sangbad Pratidin.