শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: গতবছর করোনা (Corona Virus) আবহে বিশেষ পর্যটকের দেখা মেলেনি। এবছর পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। পুজোর মুখে রায়গঞ্জের কুলির নদীর তীরে এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ পাখিরালয়ে শুরু হয়েছে পর্যটকদের আনাগোনা।
প্রধানত শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, সিংহল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশ-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাখিরা ভিড় জমায় কুলিকে (Raiganj Bird Sanctuary)। মূলত চার ধরনের বিদেশি পাখি বংশবিস্তারের জন্যই কুলিক বনাঞ্চলে উড়ে আসে। ঝাঁকঝাঁক পরিযায়ী পাখিদের সুরেলা স্বরে মুখরিত হয়ে ওঠে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারের বনভুমি। উৎসবের মরশুমে ধীরে ধীরে পাখি প্রিয় পর্যটকরা নানা প্রান্ত থেকে মফস্বল শহরের বনভুমিতে জড়ো হচ্ছেন। পাখিরালয়ের উলটোদিকেই তাঁদের থাকার জন্য রয়েছে লজ। সেখানকার মেনুতে রয়েছে বাহারি পদ।
[আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের সাসপেনশনের মেয়াদবৃদ্ধি, ছাঁটাই সময়ের অপেক্ষা?]
মূলত কোন কোন পাখি দেখা যায় কুলিকে? মাথা নিচু করে থাকা বিমর্ষ শান্তিপ্রিয় ধূসর রঙা শামুকখোল (ওপেনবিল স্টর্ক) সবচেয়ে বেশি উড়ে আসে এই পক্ষীনিবাসে। কারও সঙ্গে নেই কোনও ঝগড়াঝাটি। খাবারের সন্ধানে ইচ্ছেমতো নদীর পাড় জুড়ে ঘুরে বেড়ায় তারা। শহর পেরিয়ে নির্জন জলাচর উড়ে আবার সন্ধের আগে শান্ত বালকেরর মতো ফিরে আসে কুলিক বনবাসায়। এছাড়া আছে বাচকা ( Night heron), পানকৌড়ি(লিটল করমোরেন্ট) এবং ছোট করচে বক(লিটল ইগ্রেট)। এই চার ধরণের পাখিরা ভিন দেশ থেকে প্রায় তিন দশক ধরে বর্ষার মরশুমে উড়ে আসে উত্তরের এই ঝিলে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর হল বংশবিস্তারের সময়। গাছে গাছে ডালপালা আর খড় দিয়ে গোলধরনের বাসা তৈরি করে, আর মাঝে কিছুটা পাতা বিছিয়ে ডিম রাখার জায়গা করে।
গত বছর লকডাউনে অন্তত ৯৯ হাজার ৬৩১টি পরিযায়ী পাখি এসে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল, দাবি বনদপ্তরের। এবছরও শুরু হয়েছে পাখি গণনা। চলবে নভেম্বর অবধি। নভেম্বর শেষ হতেই পরিযায়ী পাখিরা ফিরে যায়। তবে এবার পুরানো সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে ওপেনবিল স্টোর্ক পাখির সংখ্যা বাড়বে বলে আশাবাদী বনদপ্তর। রায়গঞ্জ বিভাগীয় বনাধিকারিক সীতাংশ গুপ্ত বলেন, “পাখিদের জন্য নিরাপদ কুলিক বনাঞ্চল। তাছাড়া খাবার-সহ ব্যবস্থা রয়েছে। তাই ত্রিশ বছর ধরে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখিরা এখান বংশবিস্তারে উড়ে আসে। তবে ওপেনবিল স্টোর্ক সবচেয়ে বেশি আসে। আর লিটল করমোরেন্ট।”